কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ১২ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ৯টিতেই ভরাডুবি হয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের। ১২ ইউনিয়নের ফলে তিনটিতে আওয়ামী লীগ, ৯টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
বিজয়ী ৯ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, একজন স্বতন্ত্র, দুজন বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র এবং এক জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী।
পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটানা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের কন্ট্রোল রুম থেকে ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার আহসান হাবীব।
বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন— ১নং শুহিলপুর ইউনিয়নে আনারস প্রতীকে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুবকর ছিদ্দিক ৩ হাজার ২৮৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চশমা প্রতীকের আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থী রফিউদ্দিন তিন হাজার ১৩৫ ভোটে পেয়েছেন।
২নং বাতাঘাসী ইউনিয়নে চশমা প্রতীকে বিএনপি সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাড. মো. সাদেক দুই হাজার ৭৬০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূঁইয়া মানিক পেয়েছেন দুই হাজার ৩৪৯ ভোট।
৩নং মাধাইয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান নৌকা প্রতীকে পাঁচ হাজার ৩৭৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. অহিদ উল্লাহ্ আনারস প্রতীকে ৫ হাজার ১০৭ ভোট পেয়েছেন।
৫নং কেরণখাল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সুমন ভূঁইয়া আনারস প্রতীকে চার হাজার ৩৮৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. হারুন অর-রশিদ দুই হাজার ৭৫৪ ভোট পেয়েছেন।
৬নং বাড়েরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আহসান হাবীব ভূঁইয়া আনারস প্রতীকে চার হাজার ৫২৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এলডিপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জালাল উদ্দীন কালা ঘোড়া প্রতীকে তিন হাজার ২৩ ভোট পেয়েছেন।
৭নং এতবারপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইউসুফ আনারস প্রতীকে দুই হাজার ৫১১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী একেএম মামুনুর রশিদ আবু এক হাজার ৬৪৯ ভোট পেয়েছেন।
৮নং বরকইট ইউনিয়নে সাবেক বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলম ঘোড়া প্রতীকে তিন হাজার ১৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবুল কালাম টেবিল ফ্যান প্রতীকে দুই হাজার ৮৪৭ ভোট পেয়েছেন।
৯নং মাইজখার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ্ সেলিম প্রধান আনারস প্রতীকে ৯ হাজার ৭৫৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. জামাল উদ্দীন ৯ হাজার ৪৬৮ ভোট পেয়েছেন।
১০নং গল্লাই ইউনিয়নে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিম দর্জি (চশমা) ৬ হাজার ৭২৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম আনারস প্রতিকে ৪ হাজার ৪৪০ ভোট পেয়েছেন।
১১নং দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়নে চশমা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা শাহজাহান মিয়া ৭ হাজার ১০৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন মাস্টার পেয়েছেন চার হাজার ৭৩২ ভোট।
১২নং বরকরই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম মজুমদার শিপন নৌকা প্রতীকে পাঁচ হাজার ৬৮৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল আলম চৌধুরী রতন ঘোড়া প্রতীকে পাঁচ হাজার ৫৪১ ভোট পেয়েছেন।
১৩নং জোয়াগ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জি. আব্দুল আউয়াল খান নৌকা প্রতীকে ৪ হাজার ৮৯১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা আবু তাহের ভূঁইয়া ঘোড়া প্রতীকে ৪ হাজার ৭১৫ ভোট পেয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুন নাহার জানান, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের সঠিক দিকনির্দেশনায় পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করেছি। চান্দিনায় কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোটারদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতিতে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করাটাই আমাদের সফলতা।
প্রসঙ্গত, চান্দিনার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৭৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, কমিউনিস্ট পার্টি ও জাকের পার্টি সমর্থিত ২৫ জন। বাকি ৫১ স্বতন্ত্র প্রার্থী।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন