পিয়ংইয়ং বিমানবন্দর থেকে সোমবার ভোরে সমুদ্রে দুইটি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটি সাধারণত এই সময়ে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় না। তবে কী কারণে দুই সপ্তাহের মধ্যে চারটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাল উত্তর কোরিয়া। তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসি।
জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়াকে সব ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে নিষেধ করেছে। এজন্য দেশটির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে।
বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন পূর্ব এশিয়ার দেশটি বারবার সেই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে।উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন নিজে দেশের সুরক্ষার কথা বলে ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের কাজ বন্ধ না করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। যা নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
উত্তর কোরিয়া কেন এ সময়ে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল?
এ বছর জানুয়ারিতে যেভাবে কয়েক দিনের ব্যবধানে উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালো সেটি সাধারণত হতে দেখা যায় না। উত্তর কোরিয়া সাধারণত সে দেশে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিন উপলক্ষে বা যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া সামরিক মহড়ার সময় নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক শান্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অঙ্কিত পান্ডা বিবিসি-কে বলেন,উত্তর কোরিয়া সাধারণত নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা দেখতে এবং যুদ্ধের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকার জানান দিতে নানা ধরনের অস্ত্রের পরীক্ষায় চালায়। সর্বশেষ পরীক্ষা তাদের এই উদ্দেশ কে আরও নিশ্চিত করল।
“তবে একইসঙ্গে অভ্যন্তরীন কিছু বিষয় বিবেচনা করে কিম জং উন এবারের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে থাকতে পারেন। অর্থনৈতিকভাবে কঠিন সময় পার করছে উত্তর কোরিয়া।এই সময়ও তিনি যে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন সেটা প্রমাণ করতেই হয়ত তিনি এবারের পরীক্ষা চালিয়েছেন।”
উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। দেশটিকে খাদ্য সংকটের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারীর সংক্রমণ রুখতে উত্তর কোরিয়া নিজেদের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের সবচেয়ে বড় মিত্র চীনের সঙ্গে বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। যদিও শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত পুনরায় খুলে দেওয়া হবে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি কিম জং উন স্বীকার করেছেন, তার দেশ জীবন-মরণ সংকটে পড়েছে। তারপরও তিনি সামরিক শক্তি বাড়ানো এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর তা স্থবির হয়ে পড়েছে। উপরন্তু,এ মাসের শুরুতে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জের ধরে বাইডেন প্রশাসন গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ার উপর নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সোমবারের পরীক্ষার পর যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কারণ কী চীন?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন