কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার (১৭ জানুয়ারি)। মহানায়িকার জীবন ছিল রহস্যে ভরপুর।
পর্দায় শীর্ষ স্থান দখল করেও ৩৬ বছর তিনি ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। আমৃত্যু স্বেচ্ছায় নির্বাসনেই ছিলেন এই রহস্যময়ী।
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুচিত্রা সেন।
তার প্রকৃত নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের বৃহত্তর পাবনার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে নানাবাড়িতে তার জন্ম। পাবনা শহরের বাড়িতে কেটেছে শৈশব-কৈশোর।
বড় পর্দায় সুচিত্রার যাত্রা শুরু হয় ১৯৫২ সালে। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘শেষ কোথায়’ হলেও মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম বাংলা সিনেমা ‘সাত নম্বর কয়েদি’। আর প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘দেবদাস’ মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালে। সব মিলিয়ে ৬০টি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে বাংলা ৫৩টি এবং হিন্দি ভাষার ৭টি সিনেমায় তাকে দেখা গেছে।
সুচিত্রা সেনের জীবনের অনেক ঘটনাই রয়ে গেছে আড়ালে। তবে কিছু ঘটনা হয়তো সবারই জানা আবার কিছু ঘটনা অনেকের অজানা। মহানায়িকার জীবনের এমনই কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরা হলো-
* বলিউডে ‘দেবদাস’ই ছিল সুচিত্রা সেনের প্রথম সিনেমা। এতে পার্বতী চরিত্রে স্মরণীয় অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি।
* সুচিত্রা সেনের ‘আন্ধি’ গুজরাটে মুক্তির পর ২০ সপ্তাহ নিষিদ্ধ ছিল। কারণ তিনি যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন তা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া থাকার কারণে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
* আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারজয়ী প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী ছিলেন সুচিত্রা সেন। ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সাত পাকে বাঁধা’ সিনেমার জন্য তিনি এই স্বীকৃতি পান।
* সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর স্বেচ্ছায় অন্তরালে চলে যান সুচিত্রা সেন। এরপর থেকে বেশিরভাগ সময় রামকৃষ্ণ মিশনে কেটেছে তার। নির্জন ও নিভৃত জীবনযাপন করায় হলিউড কিংবদন্তি গ্রেটা গার্বোর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তার মিল খুঁজেছেন অনেকে।
* উত্তম কুমারের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের জুটি বাংলা সিনেমার ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে প্রথমবার একফ্রেমে দেখা যায় তাদেরকে। তারা একসঙ্গে প্রায় ৩০টি ছবিতে অভিনয় করেন।
* সময় ফাঁকা না থাকার কারণে সত্যজিৎ রায়ের ‘চৌধুরানী’ সিনেমাতে কাজ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন সুচিত্রা সেন। এ কারণে অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ সিনেমাটি আর বানাননি।
* সুচিত্রা সেনই একমাত্র ভারতীয় অভিনয়শিল্পী যিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। পুরস্কারটি পাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী নয়াদিল্লীতে যেতে হতো তাকে। কিন্তু তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি।
* ১৯৫২ সালে নির্মিত সুচিত্রা সেনের প্রথম বাংলা সিনেমা ‘শেষ কোথায়’ কখনও মুক্তি পায়নি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন