ইংল্যান্ডের পর ভারতের বোলিংয়ের সামনেও মুখ থুবড়ে পড়ল বাংলাদেশের ব্যাটিং। যুব বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে কোনোমতে একশ পার করল তারা।
বোলাররা যা নিয়ে কিছুটা লড়াইও করলেন, তবে তা যথেষ্ট হলো না। তাদের শিরোপা ধরে রাখার অভিযান থামিয়ে এগিয়ে গেল টুর্নামেন্টে এখনও অপরাজিত ভারত।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শেষ কোয়ার্টার-ফাইনালে শনিবার ভারতের জয় ৫ উইকেটে। কদিন আগে যুব এশিয়া কাপের সেমি-ফাইনালেও বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ভারত।
গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট এবারও ছিল ফেভারিটদের কাতারে। তবে দল দুটির লড়াইয়ে ছড়াল না উত্তেজনা। ব্যাটিং ব্যর্থতায় গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৭ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ এবার করল স্রেফ ১১১ রান। ১১৫ বল বাকি থাকতেই জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে গেল ভারত।
রান তাড়ায় শূন্য রানে উইকেট হারানো ভারতকে ৭০ রানের জুটিতে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন অংকৃশ রঘুভানশি ও করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠে দলে ফেরা শেখ রশিদ।
প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে রবির তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৪ রানেই টপ অর্ডার তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় দলটি।
ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসে মাহফিজুল ইসলামকে বোল্ড করে দেন রবি। সুইং করে ভেতরে ঢোকা ফুল লেংথ বল মিডউইকেট দিয়ে খেলতে যান এই ওপেনার। ব্যাটের কানা নিয়ে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে।
নিজের তৃতীয় ওভারে রবি ধরেন ইফতেখার হোসেনের শিকার। অফ স্টাম্পের বাইরের বল কাট শট খেলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দেন ইফতেখার। পরের ওভারে রবি ফেরান প্রান্তিক নওরোজ নাবিলকে। সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া ফুল লেংথ বল ড্রাইভ করে প্রথম স্লিপে ধরা পড়েন নাবিল।
ওসওয়াল এক ওভারেই ফিরিয়ে দেন আরিফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফাহিমকে। তার বাঁহাতি স্পিনে আরিফুল হন কট বিহাইন্ড। ফাহিম ফেরেন দৃষ্টিকটু শট খেলে; মুখোমুখি হওয়া তৃতীয় বলেই তিনি রিভার্স সুইপ করে হন বোল্ড।
টিকতে পারেননি অধিনায়ক রকিবুল হাসানও। কুশাল তাম্বের বলে হন এলবিডব্লিউ। দীর্ঘক্ষণ উইকেটে কাটিয়ে আইচ মোল্লা কাটা পড়েন রান আউটে।
৫৬ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওই সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুই অঙ্কে যেতে পারেন কেবল আইচ (৪৮ বলে ১৭)।
অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়া বাংলাদেশ একশ পার হয় মেহরব ও আশিকুর জামানের ব্যাটে। অষ্টম উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন দুজন।
তাদের প্রতিরোধ ভাঙে ৪৮ বলে ৬ চারে ৩০ রান করা মেহরবের বিদায়ের। রঘুভানশির অফ স্টাম্পের বাইরের বল উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হন তিনি। ওই ওভারেই বাউন্ডারি থেকে সিদ্ধার্থ যাদবের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে যান আশিকুর।
রান তাড়ায় নামা ভারত শিবিরে দ্বিতীয় ওভারেই ছোবল দেন তানজিম হাসান। হারনুর সিংকে কট বিহাইন্ড করে শূন্য রানে ফেরান এই পেসার।
রঘুভানশি ও রশিদের ব্যাটে ওই ধাক্কা সামাল দিয়ে এগিয়ে যায় ভারত। সাবধানী ব্যাটিংয়ে তারা এগিয়ে নেন দলকে।
২০তম ওভারের শেষ বলে রঘুভানশিকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন রিপন। নিজের পরের ওভারের প্রথম বলে এই পেসার কট বিহান্ড করেন রশিদকে। সম্ভাবনা জাগান হ্যাটট্রিকের। শেষ পর্যন্ত যদিও তা হয়নি।
পরের দুই ওভারে আরও দুটি শিকার ধরেন রিপন। ফিরিয়ে দেন সিদ্ধার্থ যাদব ও রাজ বাওয়াকে। ততক্ষণে অবশ্য জয়ের কাছে পৌঁছে যায় ভারত। ২৬ বলে ৪ চারে ২০ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ফেরা নিয়মিত অধিনায়ক যশ ধুল। ছক্কায় দলকে জিতিয়ে ১১ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন তাম্বে।
৩১ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফলতম বোলার রিপন।
প্রথম সেমি-ফাইনালে আগামী মঙ্গলবার মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তান। পরদিন দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়বে ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯: ৩৭.১ ওভারে ১১১ (মাহফিজুল ২, ইফতেখার ১, নাবিল ৭, আইচ ১৭, আরিফুল ৯, ফাহিম ০, রকিবুল ৭, মেহরব ৩০, আশিকুর ১৬, তানজিম ২, রিপন ২*; রাজবর্ধন ৭.১-০-১৯-১, রবি ৭-১-১৪-৩, বাওয়া ৬-১-১৬-০, ওসওয়াল ৯-১-২৫-২, তাম্বে ৬-০-২৭-১, রঘুভানশি ২-১-৪-১)
ভারত অনূর্ধ্ব-১৯: ৩০.৫ ওভারে ১১৭/৫ (রঘুভানশি ৪৪, হারনুর ০, রশিদ ২৬, ইয়াশ ২০*, সিদ্ধার্থ ৬, বাওয়া ০, তাম্বে ১১*; আশিকুর ৬-১-২২-০, তানজিম ৭-১-৩৪-১, রিপন ৯-১-৩১-৪, রকিবুল ৮.৫-২-৩০-০)
ফল: ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রবি কুমার
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন