রাষ্ট্রায়ত্ত প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণকারী চারটি প্রতিষ্ঠান আবাসিকে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবে দুই চুলার মাসিক বিল দুই হাজার ১০০ টাকা এবং এক চুলার দুই হাজার টাকা করার কথা বলা হয়। বর্তমানে দুই চুলার মাসিক বিল ৯৭৫ টাকা ও এক চুলার বিল ৯২৫ টাকা।
এ ছাড়া শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা এবং ক্যাপটিভে (শিল্প-কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস) ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে ৩০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি) ভর্তুকি সামাল দিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। একাধিক গ্যাস বিতরণ কম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার গড়ে ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৯ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা ৩৫ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণকারী ছয়টি কম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে তিতাস, বাখরাবাদ ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কম্পানিসহ চারটি কম্পানি আলাদাভাবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) এই প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এই সপ্তাহে বাকি দুটি কম্পানিও তাদের প্রস্তাব জমা দেবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভর্তুকির চাপ সামলাতে গত বছরের ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল। এরপর ৩ জানুয়ারি জ্বালানি বিভাগ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে পাঠাতে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দেয়। আমদানি করা এলএনজি ও দেশীয় গ্যাসের দাম, ভ্যাট-ট্যাক্স, বিভিন্ন তহবিলের চার্জ ধরে একটা খসড়া হিসাব পেট্রোবাংলা থেকে বিতরণ কম্পানিগুলোতে পাঠানো হয়। এরপর বিতরণ কম্পানিগুলো নিজেদের আয়-ব্যয় হিসাব উল্লেখ করে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব কমিশনে পাঠায়। একই সঙ্গে কম্পানিগুলো নিজেদের পরিচালন ব্যয় (মার্জিন) বৃদ্ধিরও প্রস্তাব দিয়েছে।
জানতে চাইলে বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত চারটি গ্যাস বিতরণ কম্পানি দরবৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তথ্যের ঘাটতি থাকায় আরো তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে। কমিশনে প্রস্তাব পাঠানোর কিছু নিয়ম রয়েছে। সেসব মেনেই কম্পানিগুলোকে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। সব বিতরণ কম্পানির প্রস্তাব আসার পর বিশ্লেষণ করে নিয়ম অনুযায়ী গণশুনানির মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি।’ দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪৩০ কোটি ঘনফুট। এখন দেশি গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে ২৩৩ কোটি ঘনফুট। বঙ্গোপসাগরে থাকা দুটি ভাসমান এলএনজি প্রক্রিয়াকরণ টার্মিনালের মাধ্যমে পাওয়া যায় ৬০ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে বিদ্যুতে ব্যবহৃত হয় ৬৮.৩৭ শতাংশ, সারে ৯.৩৯ শতাংশ, ক্যাপটিভে ৫.৯২ শতাংশ, শিল্পে ৭.০৬ শতাংশ, হোটেল-রেস্টুরেন্টে ০.২৩ শতাংশ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ০.২৮ শতাংশ, সিএনজিতে ৩.০৭ শতাংশ. বাসাবাড়িতে ৫.০১ শতাংশ এবং চা বাগানে ০.৬৭ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১ জুলাই গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল বিইআরসি। বাসাবাড়িতে দুই চুলার খরচ ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা আর এক চুলার খরচ ৭৫০ টাকা থেকে ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন