রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন তিন যুবক। ওই ঘটনায় হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
শনাক্ত দুই যুবক হলেন- কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বার জয়া। আরেকজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। আশিক চার মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি ছিনতাই, মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দিনগত রাত দেড়টার দিকে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের হোটেলে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ওই নারী সাংবাদিকদের জানান, বুধবার একটি সিএনজি অটোরিকশায় তাকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিনজন। এরপর তাকে নেওয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করেন ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা।
ওই নারী আরো জানান, জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খোলেন তিনি। তারপর ফোন দেন ৯৯৯-এ। পুলিশ তাকে থানায় সাধারণ ডায়রি করার পরামর্শ দেয়। পরে তাদের র্যাব উদ্ধার করে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘ঘটনার ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। যেহেতু ঘটনাটি স্পর্শকাতর তাই র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও থানা পুলিশ যৌথভাবে তদন্তে নেমেছে।’
বুধবার দিনগত রাত ২টার দিকে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান র্যাব-১৫ এর কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান।
আব্দুল জব্বার জয়া (বাঁয়ে) ও আশিকুল ইসলাম |
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান ওই নারীর বরাত দিয়ে বলেন, গত মঙ্গলবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন তারা (ওই নারী পর্যটক)। তারা শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে রুম নিয়ে ওঠেন।
ওই হোটেল থেকে তারা বিকেলে যান লাবনী পয়েন্টের সৈকতে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন মিলে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক।
পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে ঝাউবীথির একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিনজন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে আরেক দফা তাকে ওই তিন যুবক ‘সংঘবদ্ধ’ ধর্ষণ করে বলে ওই নারীর অভিযোগ। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে বলেও তিন যুবক তাকে হুমকি দেয় বলে জানানো হয়।
মেজর মেহেদী হাসান বলেন, এমন খবর পেয়ে স্বামী-সন্তান ও গৃহবধূকে উদ্ধার করি। তদন্ত শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত তিনজনের মধ্যে দুজনকে শনাক্ত করেছি। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। ধর্ষণের শিকার নারী পর্যটক কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে জানান, ‘এ ঘটনা শুনে পুলিশের পক্ষ থেকে মাঠে নেমেছে পুলিশের একটি দল। ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন