আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসির ১৭তম বিশেষ সম্মেলন আগামীকাল রোববার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে। আফগানিস্তানে মানবিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট এড়াতে ওআইসি সংস্থাটির সদস্য দেশগুলো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই সম্মেলন আহবান করে।
বৈঠকে মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন। এতে উপস্থিত থাকবেন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের প্রতিনিধিরাও। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৯০ জন আমন্ত্রিত প্রতিনিধি বৈঠকে যোগ দিতে ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন। আজ আরো পৌঁছবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত মাসে সৌদি আরব ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই সম্মেলন আহ্বানের কথা জানায়। পরে পাকিস্তান সম্মেলনকে স্বাগত জানায় এবং ইসলামাবাদে সম্মেলনটি আয়োজনের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করে।
সম্মেলন প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ হুসাইন কোরেশি বলেন, সম্মেলনের আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো মানবিক সঙ্কটের প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বৈঠকের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে এই সঙ্কট আফগানিস্তানের একার পক্ষে মোকাবেলা করার সম্ভব না। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থানগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা করবো কারণ সঙ্কট এড়াতে আমাদের তাদের প্রয়োজন।
জাতিসঙ্ঘের তথ্য বলছে, দীর্ঘদিনের যুদ্ধ, কঠিন খরা এবং প্রচণ্ড দারিদ্র্যের কারণে আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি তীব্র খাদ্যসঙ্কটে রয়েছে। চলতি বছরের শীত মৌসুমে দেশটিতে চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা সংস্থাটির। এমন পরিস্থিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাহায্যের হাত বাড়ানোর আহ্বান জাতিসঙ্ঘের।
শাহ মাহমুদ হুসাইন কোরেশি আরো বলেন, আফগানিস্তানে মানবিক সঙ্কট দেখা দিলে পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরো একটি শরণার্থীদের ঢল মোকাবেলা করতে হবে। তিনি ওআইসি সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা আশা করেন।
কোরেশি ঘোষণা করেন, আফগান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসলামাবাদে পাকিস্তান, চীন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, ইতালি এবং অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ে একটি সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, পাকিস্তান এই অঞ্চলের ছয়টি দেশের সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফর্মও গঠন করেছে। এর প্রথম ভার্চুয়াল সম্মেলন ইসলামাবাদে, দ্বিতীয়টি ইরানে এবং তৃতীয়টি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে যোগ দিতে গতকাল সকালে সৌদি আরবে পৌঁছেন দেশটির আফগানিস্তান বিষয়ক প্রধান প্রিন্স আব্দুল্লাহ বিন খালেদ বিন সৌদ সৌদ আল কবীর এবং যুবরাজ জিলুই বিন তুর্কি। পরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, বৈঠকে আমন্ত্রিতদের মধ্যে ৯০ জন প্রতিনিধি ইতোমধ্যে ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন। শনিবার আরো প্রতিনিধি আসবেন।
বৈঠকে যোগ দিতে ইসলামাবাদ পৌঁছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের (আইডিবি) প্রেসিডেন্ট ডক্টর মোহাম্মদ বিন সুলাইমান আল জাসের আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতার জন্য ওআইসি দেশগুলোকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আসন্ন সম্মেলনে ওআইসি মন্ত্রীদের অংশগ্রহণ আফগানিস্তানে শান্তির জন্য তাদের সঙ্কল্পের একটি অভিব্যক্তি।
ওআইসি মহাসচিব হিসেন ইব্রাহিম তহা সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার রাতে ইসলামাবাদ পৌঁছেন। আফগানিস্তান একটি মানবিক সঙ্কটের মুখোমুখি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুসলিম দেশগুলোকে এই সঙ্কটময় সময়ে তাদের আফগান ভাইদের সাহায্য করার উপায় বিবেচনা করার উপযুক্ত সময় এসেছে। ওআইসির এই অধিবেশন মুসলিম দেশগুলোকে আফগান জনগণকে সাহায্য করার উপায় নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ করে দেবে।
উল্লেখ্য গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি তালেবান। জাতিসঙ্ঘ সম্প্রতি তালেবানের পক্ষ থেকে ওই বিশ্ব সংস্থায় একজন প্রতিনিধি নিয়োগের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। অবশ্য পাকিস্তান ও চীন আফগানিস্তানের তালেবানকে সহযোগিতা করে আসছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন