মেয়েদের ফুটবলে এ পর্যন্ত যত শিরোপাা—সবগুলোই কোচ গোলাম রব্বানীর হাত ধরে। ২০১৫-র এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে গত পরশু সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল পর্যন্ত মোট সাতটি ট্রফি ঘরে তুলেছে মেয়েরা। কাল রব্বানীর কাছে যখন জানতে চাওয়া হলো এই সবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় তাঁর কোনটা। বাংলাদেশ কোচ ফিরলেন ২০১৫ সালে জেতা প্রথম শিরোপাটায়।
‘ওই শিরোপাটা আমার কাছে অন্য রকম। বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে যেকোনো পর্যায়ে সেটিই প্রথম শিরোপা। নেপালে সেই যে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আমাদের পথচলা শুরু হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায়ই তো আজ আমরা এই পর্যায়ে।’ নেপালের সেই ট্রফি জয় আসলে ভোলার কথা নয়। ভারত, ইরানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের কিশোরীরা প্রথমবারের মতো কোন আন্তর্জাতিক আসরের ফাইনালে ওঠে সেবার। ২৫ এপ্রিল নেপালের বিপক্ষেই ছিল সেই ফাইনাল। তার আগের রাতেই প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প হয়ে যায় কাঠমাণ্ডুতে। কোনোমতে প্রাণ নিয়ে হোটেল থেকে নামতে পারে kalerkanthoবাংলাদেশের কিশোরীরা। সারা রাত খোলা আকাশের নিচে কাটিয়ে পরে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী বিমানে তারা দেশে ফেরে। ছয় মাস পর কাঠমাণ্ডুতেই হওয়া সেই ফাইনালে নেপালকে হারিয়েই শিরোপা নিয়ে ফেরে গোলাম রব্বানীর শিষ্যরা। বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে পতাকা ওড়ানো শুরু তাই শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও বড় যুদ্ধ জিতে। এমন সাহসী মেয়েরা থেমে যাবে তাই কি হয়! কৃষ্ণা, সানজিদা, মারিয়া, মার্জিয়ারা এরপর ফি বছর বাংলাদেশকে একটা না একটা ট্রফি উপহার দিয়েছেন। ২০১৫, এরপর ২০১৬-তেও এএফসি রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ তাজিকিস্তানে। সে আসরেই ওঠেন তহুরা খাতুন, যিনি এবার অনূধর্ব-১৯ সাফও মাতিয়েছেন। ২০১৭-তে তারা জেতে প্রথম সাফ শিরোপা অনূর্ধ্ব-১৫ পর্যায়ে। ২০১৮-তে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফের ট্রফি। সে বছরই হংকংয়ে আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্ট জকি কাপেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেরে বাংলাদেশের মেয়েরা। করোনা হানা দেওয়ার আগে ২০১৯ প্রথম বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক ফুটবলেও লাওসের সঙ্গে যুগ্ম শিরোপা বাংলাদেশের। করোনা মহামারি শেষে এবার অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ।
আরো দুটি বড় সাফল্য এর সঙ্গে যোগ করতেই হবে। বাংলাদেশের মেয়েরা এ সময়েই টানা দুটি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে খেলেছে। অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ে এসেছে সে সাফল্য। দুইবারই কঠিন বাছাই পর্ব পেরোতে হয়েছে। যেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েই বাংলাদেশকে যেতে হয়েছে পরের রাউন্ডে। এসব অর্জনের মধ্যেও এবারের সাফ জয়টাকে অবশ্য সবচেয়ে দাপুটে মনে হচ্ছে গোলাম রব্বানীর, ‘টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের মেয়েরা যেমন আধিপত্য করেছে প্রতিপক্ষের ওপর, এমনটা খুব কমই হয়েছে। ভারতের বিপক্ষে ফাইনালটাই তো একচেটিয়া খেললাম। তার ওপর দেখুন একটা গোলও হজম করিনি আমরা, দিয়েছি ১৯ গোল। এর চেয়ে বেশি আর কী চাইতে পারতাম।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন