সর্বশেষ ঝালকাঠির বিশখালীর নদীর সাচিলাপুরে অজ্ঞাত কিশোর (১৩) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ২টার সময় ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে। লাশটির দেহ অর্ধপোড়া ছিল এবং গায়ে কালো রংয়ের সোয়েটার ও জিন্সের প্যান্ট ছিল।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ঝালকাঠির লঞ্চঘাট-সংলগ্ন মাঝনদী থেকে অজ্ঞাত যুবকের (৩২) লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এই যুবকের মুখমণ্ডল পোড়া ছিল এবং অফ হোয়াইট শীতের পোশাক ও জিন্সের প্যান্ট পরা ছিল জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার ডিএডি শফিক । লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চ ট্রাজেডির ঘটনায় এই নিয়ে নিখোঁজ তিনজনের লাশ উদ্ধার হলো।
এদিকে ঝালকাঠির বিষখালী নদী থেকে সোমবার উদ্ধার হওয়া যুবকের লাশটি দাবি করে দুই পক্ষ। এক পক্ষের দাবি, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম মো. শাকিল মোল্লা। তিনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ইসদাইর গ্রামের মৃত শফি উদ্দিন মোল্লার ছেলে। আগুনে পুড়ে যাওয়া অভিযান-১০ লঞ্চের সহকারী বাবুর্চি ছিলেন তিনি। ফেসবুকে ছবি দেখে বোন সাহিদা আক্তার নিশা ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
এদিকে আরেক পক্ষের দাবি, ওই যুবক বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের হাকিম শরীফ। তিনি ঢাকার এসএমডি কোম্পানিতে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করতেন। হাতের আংটি ও পোশাক দেখে হাকিম শরীফের বড় ভাই আবদুল মোতালেব শরীফ লাশ শনাক্ত করেন। ফেসবুকে লাশ উদ্ধারের খবর ও ছবি দেখে সেটি তার ভাইয়ের বলে দাবি করেন তিনি। দুই পক্ষের দাবির কারণে উদ্ধার হওয়া লাশ হস্তান্তর নিয়ে বিপাকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু দুই পক্ষ উদ্ধার হওয়া যুবকের লাশ তাদের স্বজনের বলে দাবি করছেন। এ কারণে উভয় পক্ষের লোকজন আসার পর তাদের দেখানো হবে, উপযুক্ত প্রমাণের পর লাশ হস্তান্তর করা হবে। সেটা করা সম্ভব না হলে ডিএনএ পরীক্ষা করে হস্তান্তর করা হবে। তবে পুলিশ শেষ পর্যন্ত মধ্য রাতে এ লাশটির নারায়ণগঞ্জের শাকিল মোল্লার (৩৪) বলে নিশ্চিত হয়ে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। শাকিল মোল্লা নারায়ণগঞ্জের শফিউদ্দিন মোল্লার পুত্র ও পেশায় সহকারী বাবুর্চি। আগুনে পুড়ে যাওয়া অভিযান-১০ লঞ্চের সহকারী বাবুর্চি ছিলেন তিনি।
সোমবার রাতে লঞ্চের তদন্ত কাজে ও আলামত সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে সিআইডি। সিআইডির এএসপি পদ মর্যাদার অরিদ সরকারের নেতৃত্বে একটি টিম। মৃতের আলামত সংগ্রহ করে নিখোঁজদের সঠিক পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য দলে ডিএনএ বিশেষজ্ঞও রয়েছে। এই দুর্ঘটনায় আগুনে ব্যাপকভাবে পুড়ে যাওয়ায় অনেকের লাশ তার পরিবারের পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্যই এ টিমটি পুলিশকে সহযোগিতা করতে এসেছে। উদ্ধারকৃত লাশগুলোতে কমবেশি দগ্ধ হওয়ার চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হয়, শরীরে আগুন ধরে গেলে বাঁচার জন্য নদীতে ঝাঁপ দেয়ার পর নিখোঁজ ছিল।
এদিকে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বরগুনার জেলা প্রশাসন থেকে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী এখনো নিখোঁজ আছেন ৩৩ জন। আর ঝালকাঠি যুব রেড ক্রিসেন্টের তালিকা অনুযায়ী নিখোঁজ রয়েছেন ৫১ জন। আবার ঝালকাঠি জেলা পুলিশের তালিকায় নিখোঁজ আছেন ৪০ জন।
পুলিশের কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা নিখোঁজ হিসেবে ৪১ জনের নাম দিয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন