মাঝনদীতে অঙ্গার ৩৮ প্রাণ | Angar 38 lives in the middle river


ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বরগুনাগামী 'অভিযান-১০' লঞ্চে আগুন লেগে কমপক্ষে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধসহ আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। গত বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর উত্তরপাড় দিয়াকুল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। লঞ্চটিতে হাজারখানেক যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে অনেকে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

আহতদের মধ্যে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ১৫ জন এবং বাকিদের বরিশালে শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ৭০ এবং ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাতজনকে ভর্তি করা হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনার পর রোগী সামাল দিতে বরিশালের শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঢাকা থেকে ছয় বার্ন বিশেষজ্ঞকে পাঠানো হয়েছে বরিশালে।

মাঝনদীতে লঞ্চে এমন ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনা দেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম। চলন্ত লঞ্চে অঙ্গার হয়ে একসঙ্গে এত মৃত্যু আগে কখনও দেখেনি দেশ।

বরগুনা যাওয়ার পথে বরিশাল ঘাট থেকে ছাড়ার কিছু সময় পর লঞ্চে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে লঞ্চটির স্টিলের কাঠামো ছাড়া সব কিছু পুড়ে গেছে। একপর্যায়ে লঞ্চটি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর উত্তরপাড় দিয়াকুল এলাকায় এসে চরে উঠে যায়। এ সময় পুরো লঞ্চটিতে আগুন ধরে যায়। লঞ্চটির ইঞ্জিন কক্ষের কাছে রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্ধারে ঝালকাঠি ও বরিশালের পাঁচটি ইউনিট কাজ করেছে।

ওই লঞ্চের একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, লঞ্চটিতে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী ছিলেন। তাদের মতে, লঞ্চটিতে হাজারখানেক যাত্রী ছিলেন। আগুন লাগার পর লঞ্চ কর্মচারীরা যাত্রীদের রক্ষায় এগিয়ে আসেননি। কোনো যাত্রীকে লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয়নি। লঞ্চে ছিল না আগুন নেভানোর কোনো সরঞ্জাম।

এদিকে, লঞ্চ দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান, ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী গতকাল দুপুরে দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটি পরিদর্শন করেন।

ভোরে প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে উদ্ধার কাজ চালাতে বেগ পেতে হচ্ছিল। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকারী দল পর্যায়ক্রমে ৩৩টি লাশ উদ্ধার করে। এর মধ্যে লঞ্চের ভেতর থেকে ৩২টি, নদীতে ভাসমান অবস্থায় একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ঝালকাঠি ও বরিশাল হাসপাতালে আরও চারজনের মৃত্যু হয়। তবে অঙ্গার হওয়া মানুষের চেহারা পুরোটাই বিকৃত হয়ে গেছে। স্বজনরাও প্রিয়জনের মুখ চিনতে পারছেন না। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে, দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটি উদ্ধারে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ 'নির্ভীক' গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থলে এসেছে।

লঞ্চে থাকা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার কাকচিড়া গ্রামের যাত্রী রিমা আক্তার বলেন, 'আমি লঞ্চের নিচতলার ডেকে বসা ছিলাম। পাশেই ঘুমিয়ে ছিল ছেলে ইমরান (১৩)। লঞ্চটি বরিশাল ঘাট থেকে ছাড়ার কিছু পর ইঞ্জিন কক্ষের কাছে বিকট শব্দ হয়, পরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠতে দেখি। ওই সময় আমি ঘুমন্ত ছেলেকে জাগিয়ে লঞ্চের সামনের দিকে দৌড় দিই। ধোঁয়া আর কুয়াশায় কিছুই চোখে দেখছিলাম না। কোনো দিশা না পেয়ে ছেলেকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিই। প্রায় আধাঘণ্টা সাঁতার কেটে তীরে উঠি।'

লঞ্চের আরেক যাত্রী বরগুনার বেতাগীর মোহাম্মদ মহসিন বলেন, 'রাত ২টার পরে হঠাৎ নিচতলায় আগুন জ্বলতে দেখি। আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে আমি তিনতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে নদীতে পড়ে সাঁতরে তীরে উঠি।' ঝালকাঠি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল কাইউম বলেন, 'দোতলায় ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি লঞ্চে আগুন জ্বলছে। এ সময় নদীতে ঝাঁপ দিই।'

বরিশাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন দগ্ধ যাত্রী খুলনার বটিয়াঘাটার বাসিন্দা ইব্রাহিম (৪০) ছিলেন লঞ্চের চারতলার একটি কেবিনে। তিনি বলেন, অন্য যাত্রীদের চিৎকার আর আহাজারির শব্দে ঘুম ভেঙে দেখি চারদিকে আগুন। তাৎক্ষণিক নদীতে ঝাঁপ দিই। তবে আগুনে আমার দুই পা পুড়ে গেছে।

বিআইডব্লিউটিএর ঝালকাঠি স্টেশনের ট্রাফিক পরিদর্শক কবির হোসেন ও শামসুদ্দিন খান জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে লঞ্চটি ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় ৩১০ যাত্রী ছিলেন বলে সদরঘাটের রেজিস্টার খাতায় উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে ছাড়ার পর লঞ্চটি চাঁদপুরসহ একাধিক স্টেশন থেকে আরও যাত্রী ওঠানোর কারণে মোট কতজন যাত্রী ছিলেন, তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।

গতকাল দুপুরে বরিশালের শেবাচিম হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক যাত্রীর পরিবারকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সংস্থা থেকে দেড় লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি পরিস্কারভাবে বলা যাবে, আসলে কী ঘটেছে। তিনি বলেন, যতটুকু জানি লঞ্চটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ আছে ২০২২ সাল পর্যন্ত। এখন নৌপথে বিলাসবহুল লঞ্চ যাত্রী পরিবহন করছে। ফলে প্রতিটি লঞ্চেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকা উচিত।

এ সময় তিনি দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি পরিবারকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে ঘোষণা দেন।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে দাফন ও সৎকারের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

ঝালকাঠি সদর থানার ওসি খলিলুর রহমান বলেন, 'আমরা ৩৭টি লাশ পেয়ে মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের পর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তদন্তে দায়ীদের আসামি করা হবে।'

অনেকেই নিখোঁজ: অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নি দুর্ঘটনায় কত যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন, তার সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারছেন না। দুর্ঘটনার পর গতকাল সকাল থেকে সুগন্ধা তীরের দিয়াকুল গ্রামে এবং ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে আসতে থাকেন ওই লঞ্চে নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারি হয় সুগন্ধা তীর এবং হাসপাতালের পরিবেশ।

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, নিখোঁজ যাত্রীদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা আমরা এখনও বলতে পারছি না। ফায়ার সার্ভিস এবং কোস্টগার্ডের একাধিক দল সুগন্ধায় নিখোঁজদের খোঁজে টহল দিচ্ছে। বরগুনায় কন্ট্রোল রুম খুলে শহরে মাইকিং করা হয়েছে নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহের জন্য।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বরিশাল ও ঝালকাঠির একাধিক দল নদীতে নিখোঁজদের সন্ধান চালাচ্ছে।

তিনটি তদন্ত কমিটি: অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন থেকে গতকাল শুক্রবার এসব তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তোফায়েল আহমেদকে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সাইফুল ইসলামকে কমিটির প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। লঞ্চে আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

মুখ বিকৃত, চেনা যাচ্ছে না লাশ: ঝালকাঠি জেলা হাসপাতাল মর্গে আছে ৩২ জনের লাশ। বেশিরভাগই পোড়া। শরীর ও মুখ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় লাশ শনাক্ত করতে পারছেন না স্বজনরা। পাঁচজনের লাশ স্বজনরা শনাক্ত করে নিয়ে গেছেন।

গতকাল বিকেলে হাসপাতাল মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করতে না পেরে ঘটনাস্থল ও বরিশাল হাসপাতালে গেছেন অনেক স্বজন। লাশ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার কথা জানিয়েছেন ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী।

খোঁজ রাখছেন প্রধানমন্ত্রী: লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় সফরে মালদ্বীপে অবস্থান করলেও সেখান থেকেই এই দুর্ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এবং নিহতদের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

মালদ্বীপ সফররত প্রধানমন্ত্রী এক শোকবার্তায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। পাশাপাশি আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেছেন।

বরিশালে চিকিৎসক ও ওষুধ পাঠানো হয়েছে: দগ্ধদের চিকিৎসা যেন যথাযথভাবে হয়, সেজন্য বরিশালে চিকিৎসক ও ওষুধ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল সন্ধ্যায় দগ্ধদের দেখতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

মন্ত্রী বলেন, ইঞ্জিনরুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জেনেছি। সেখানে গ্যাসের সিলিন্ডারও ছিল। অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৩৭ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এটি আরও বাড়তে পারে। অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের সবার পরিচয় পাওয়া গেছে।

আরও একজনের মৃত্যু: দগ্ধদের মধ্যে একজন গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে মারা গেছেন। তার নাম হাবীব খান (৪৫)। তিনি ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার বাবার নাম বেলায়েত আলী। বাড়ি বরগুনা সদরে।

বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল সমকালকে বলেন, লঞ্চের আগুনের ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১৭ জনকে এই হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্য ১৫ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

৪:৫৬ AM

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Holy Foods ads

Holy Foods ads

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget