যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র গত সোমবার গভীর রাতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা আগামী ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ ওই তারিখটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এ আলোচনা সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত জুনে সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রথম শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সেনা সমাবেশ নিয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই আলোচনা হতে যাচ্ছে। আক্রমণের উদ্দেশ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের আশপাশে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে বলে অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
১০ জানুয়ারির আলোচনায় পক্ষগুলোর প্রতিনিধিত্ব কারা করবেন সে বিষয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো কথা বলা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের সামরিক জোট ন্যাটো রাশিয়ার সীমান্তের দেশগুলোকে দলে টানার মাধ্যমে বিপজ্জনকভাবে কাছে চলে আসছে বলে ক্রমেই বেশি করে অভিযোগ করছে রাশিয়া। চলতি মাসের শুরুর দিকে মস্কো পশ্চিমের দেশগুলোর কাছে দাবি তুলে ধরে বলেছে, ন্যাটোর অবশ্যই উচিত নয় নতুন সদস্য হিসেবে ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত করা। রাশিয়া চায় না, তার সীমান্তের কাছে সাবেক এই সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রে ন্যাটো ঘাঁটি স্থাপন করুক।
নাম প্রকাশ না করা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র সোমবার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য আগ্রহী। যখন আমরা কথা বলতে বসব, রাশিয়া তার উদ্বেগগুলো আলোচনার টেবিলে উত্থাপন করতে পারে। আমরা রাশিয়ার কার্যকলাপের ফিরিস্তি তুলে ধরার পাশাপাশি আমাদের উদ্বেগগুলোকে আলোচনার টেবিলে উত্থাপন করব।’
ওই মুখপাত্র আরো বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পরে মস্কো ও ন্যাটোর প্রতিনিধিরা ১২ জানুয়ারি আলোচনার জন্য মিলিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর ১৩ জানুয়ারি রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেবেন।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কৌশলগত নিরাপত্তা সংলাপ চালু করার মূল উদ্দেশ্য স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা হলেও এখন এর মধ্যে ইউক্রেন নিয়ে অচলাবস্থাও অন্তর্ভুক্ত হবে।
ন্যাটো-রাশিয়া কাউন্সিলের বৈঠক এবং মস্কো ও অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) স্থায়ী কাউন্সিলের মধ্যে আলোচনাটি হবে ইউক্রেনকে কেন্দ্র করেই। স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালে রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে একটি ফোরাম হিসেবে ওএসসিই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ গতকাল বলেছেন, রাশিয়ার নিরাপত্তার দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে আশা করে মস্কো। তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা টিএএসএসকে বলেছেন, ‘১০ জানুয়ারি হবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রধান দিন। আমরা আশা করি, আমাদের আলোচনাটি খসড়া চুক্তিতে পরিণত হবে। আমরা এই প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখতে পারি না। ইস্যুটি অত্যন্ত জরুরি।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, আলোচনায় মস্কো তার স্বার্থরক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকবে। দেশটির প্রতিবেশী ইউক্রেন মস্কোর প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে অবশেষে ন্যাটো জোটে যোগ দিতে চাইছে।
রাশিয়া এরই মধ্যে ক্রিমীয় উপদ্বীপের একটি অংশ ইউক্রেনের কাছ থেকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নিয়েছে। একই সঙ্গে তারা ইউক্রেনের মস্কোপন্থী বিদ্রোহীদের উসকে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করলেও পুতিন প্রতিবেশী দেশটিতে হামলার পরিকল্পনা অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁদের সেনাদের এই বিচরণ পশ্চিমা সেনাবাহিনীর দখলদারির বিরুদ্ধে রাশিয়াকে রক্ষা করার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় অংশীদাররা ইউক্রেন আক্রমণ করলে রাশিয়ার ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে ইউক্রেনের স্বার্থকে উপেক্ষা করা হবে না।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন