ইউক্রেন সংকট নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে মস্কোয় এক বৈঠক করার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এম্মানুয়েল ম্যাক্রঁ বলছেন, উত্তেজনা হ্রাসের ক্ষেত্রে আগামী কয়েকটি দিন হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ওই বৈঠকের পর ভ্লাদিমির পুতিন নিজেও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, কিছু অগ্রগতি হয়েছে।
গত কয়েক মাসে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া প্রায় এক লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছে এবং আশংকা ছড়িয়ে পড়েছে যে তারা ইউক্রেনে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে, যদিও রাশিয়া এ কথা অস্বীকার করেছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে রাশিয়া এই নিশ্চয়তা চাইছে যে ইউক্রেনকে যে কখনো নেটো সদস্য করা হবে না এবং পূর্ব ইউরোপে নেটোর সামরিক উপস্থিতি কমাতে হবে-যদিও মার্কিন নেতৃত্বাধীন নেটো এমন কোনো নিশ্চয়তা দিতে রাজি নয়।
যে কোনো মুহুর্তে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে দিতে পারে এ আশংকার মধ্যেই ম্যাক্রঁ এই রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন। মস্কো থেকে ম্যাক্রঁ ইতোমধ্যে কিয়েভে পৌছেছেন এবং সেখানে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে বৈঠক করবেন।
পুতিনের সাথে পাঁচ ঘণ্টা ধরে আলোচনা করার পর ম্যাক্রঁ সাংবাদিকদের বলেন, আগামী কয়েকটি দিন হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর জন্য ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন হবে যা তারা একসাথেই করবেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ম্যাক্রঁ যে সব প্রস্তাব দিয়েছেন তা ‘আরো কিছু যৌথ পদক্ষেপের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে’, তবে তিনি এও বলেন যে, সেগুলো নিয়ে কথা বলার সময় হয়তো এখনো আসেনি।
কৃষ্ণসাগরে ঢুকেছে রুশ নৌযান-
এর মধ্যেই ভূমধ্যসাগর থেকে কয়েকটি রুশ ল্যান্ডিং জাহাজ কৃষ্ণসাগরে ঢুকেছে। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় বলছে বাল্টিক ও উত্তরাঞ্চলীয় নৌবহর থেকে মোট ছয়টি নৌযান বসফরাস ও ডার্ডানেলস দিয়ে কৃষ্ণসাগরে ঢুকেছে।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া যখন প্রায় এক লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছে-ঠিক সে সময়ই ইউক্রেনের দক্ষিণ দিকে কৃষ্ণসাগরে এই জাহাজগুলো ঢুকছে।
এই নৌযানগুলো স্থল ও জলপথে যৌথ অভিযান চালানোর সময় ট্যাংক ও সৈন্য বহন করার জন্য তৈরি করা। মস্কো বলছে, তারা একটি পূর্বপরিকল্পিত নৌমহড়ায় অংশ নিচ্ছে।
‘যুদ্ধে কেউ জয় পাবে না : পুতিন’
রোবববারই মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন যে একটি সর্বাত্মক অভিযান চালানোর জন্য যতটা দরকার তার ৭০% সামরিক শক্তিই এর মধ্যেই সমাবেশ করে ফেলেছে রাশিয়া।
মস্কোয় এক চাপা উত্তেজনায় পূর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ভ্লাদিমির পুতিন তার আগেকার হুঁশিয়ারি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ইউক্রেন যদি নেটোতে যোগ দেয় এবং আট বছর আগে রাশিয়ার দখল করে নেয়া ক্রাইমিয়া পুনর্দখল করার চেষ্টা করে-তাহলে পুরো ইউরোপ একটা বড় আকারের সংঘাতে জড়িয়ে যাবে।
‘আপনারা কি চান যে ফ্রান্স রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করুক?" - ফরাসী রিপোর্টারদের প্রশ্ন করেন পুতিন, তাহলে এটাই হবে। সেই যুদ্ধে কেউ জয়ী হবে না।’
সফরের আগে মি ম্যাক্রঁ বলেছিলেন, তিনি মনে করেন ইউক্রেনে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানোর জন্য একটা চুক্তিতে পৌঁছানো এখনো সম্ভব, এবং রাশিয়া যে তার নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এতে অন্যায় কিছুই নেই।
তিনি একটি ফরাসী সংবাদপত্রকে বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে কোন আপোষ করা যাবে না।
অন্যদিকে জার্মানি চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাত করেছেন।
সোমবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও চ্যান্সেলর শোলৎজ সতর্ক করে দেন যে মস্কো ইউক্রেনে অভিযান চালালে জার্মানিতে গ্যাস পাঠানোর রুশ পাইপলাইন নর্ডস্ট্রিম টু বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।
চ্যান্সেলর শোলৎজ ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়ার এটা বোঝা দরকার যে এমন অনেক কিছুই ঘটতে পারে যা হয়তো তারা ভেবে দেখেনি।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেনে ঢুকলে" বিতর্কিত নর্ড স্ট্রিম টু পাইপলাইনটির ‘সমাপ্তি ঘটাবে’ যুক্তরাষ্ট্র। কীভাবে এটা করা হবে তার বিস্তারিত বাইডেন জানাননি তবে তিনি বলেন, ‘আমি অঙ্গীকার করছি যে আমরা এটা করতে পারবো।’
অন্যদিকে ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দিকে আরো কিছু কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। ইউক্রেনে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, চেক ও স্লোভাকিয়ার পররাষ্ট্র, মন্ত্রীদের দুদিন ব্যাপি এক বৈঠক চলছে।
সূত্র : বিবিসি
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন