শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আশ্বাস দেওয়ার পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় গোলচত্বরে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সংবাদ সম্মেলনে তারা এই ঘোষণা দেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুহাইমিনুল বাশার রাজ, সাব্বির আহমেদ, শাহরিয়ার আবেদীন, নাফিসা আনজুম, ইয়াছির সরকার, সুদীপ্ত ভাস্কর সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন। তাছাড়া তাদের সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন।
তাদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে মোহাইমিনুল রাজ বলেন, “মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয় আমাদের সকল দাবি মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে আমরা আমাদের আন্দোলন আপাতত প্রত্যাহার করে নিলাম এবং দাবি পূরণের অপেক্ষায় থাকলাম।”
শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সিলেট গিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। তাছাড়া তিনি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেন। এর একদিনের মাথায় শনিবার দুপুরে উপাচার্য এক বিবৃতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের গুলি ও লাঠিপেটার ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত‘ উল্লেখ করে দুঃখপ্রকাশ করেন।
মোহাইমিনুল রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “শুক্রবার মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয়ের আমাদের আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আমাদের দাবি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।
“তিনি আমাদের সকল দাবি আন্তরিকতার সঙ্গে শুনেছেন। আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। এ জন্য আমরা মাননীয় মন্ত্রীদ্বয়কে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।।”
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বরাত দিয়ে মোহাইমিনুল বলেন, “মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে এ বিষয়ে অবগত করা হলে, তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে দুটি মামলা হয়েছে তা অতিদ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা হবে।’
“বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মোবাইল সিম ও মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ থাকার বিষয়ে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেন, ‘আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে সব নম্বর ও মোবাইল ব্যাংকিং সচল করা হবে। পুলিশের স্প্রিন্টারে আহত সজল কুণ্ডুসহ অনশনকারী সকল শিক্ষার্থীর সুচিকিৎসা চলমান আছে এবং থাকবে।’ এছাড়া মাননীয় মন্ত্রী সজল কুণ্ডুর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তার চাকরির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।”
মোহাইমিনুল আন্দোলনে সহযোগিতার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, “দেশ ও বিদেশে যারা আমাদের পাশে ছিলেন, যারা আমাদের জন্য দোয়া করেছেন, রাস্তায় নেমেছেন, আন্দোলন করেছেন, হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়েছেন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ দিতে চাই এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেতে চাই।”
এছাড়া আন্দোলনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করার জন্য গণমাধ্যমের সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। এর জেরে ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠির পাশাপাশি কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ।
এরপর শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন; এক পর্যায়ে তারা আমরণ অনশনে বসেন।
২৬ জানুয়ারি সেই অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক।
অনশন ভাঙলেও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য শুক্রবার সকালে সিলেট যান শিক্ষামন্ত্রী।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন