একুশে বইমেলার সপ্তম দিন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় বইমেলা শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে লোক সমাগম। বিকাল হতেই ‘জনসমুদ্রের’ ঢল নামে। এ সময় টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ এলাকায় ছিল তীব্র যানজট।
মেলার প্রবেশপথ ও বের হওয়ার পথেও ছিল লোকজনের উপচে পড়া ভিড়। মেলার ভেতরের প্রাঙ্গণেও ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। আজ সব স্টলেই ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। ভিড় সামাল দিতে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছিলেন বিক্রয়কর্মী ও প্রকাশকরা। একইসঙ্গে বিক্রি বাড়ায় তাদের চোখমুখে ছিল খুশির আমেজ।
প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা জানান, ২১ ফেব্রুয়ারির দিনটি সব বছরই বইমেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এদিন ভিড় যেমন বেশি হয়, তেমনই বই বিক্রিও বেশি হয়। তবে এই জনসমুদ্রে অনেকেই সাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। মাস্ক ছাড়াই দিব্যি ঘোরাফেরা করছেন অনেক পাঠক ও দর্শনার্থী।
তবে সরেজমিনে অনেক স্টলের বিক্রয়কর্মীকেও মাস্ক ছাড়া কেনাবেচা করতে দেখা গেছে।
সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলার একুশে ফেব্রুয়ারি সবসময়ই বিশেষ একটি দিন। এই দিনে লোকসমাগম বেশি হয়, বই বিক্রিও বেশি হয়। এবারের একুশে ফেব্রুয়ারিও লোকজন উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এসেছে এবং বই কিনেছে। এবারের মেলার সবচেয়ে ব্যস্ততম দিন আজ। গতবছর মেলাটা পুরোপুরি করোনাক্রান্ত ছিল। সেই হিসাবে এবারের মেলাও ব্যতিক্রম নয়। লোকসান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আরও দুই-একবছর লাগতে পারে।’
আবিষ্কার প্রকাশের মালিক দেলোয়ার হাসান বলেন, ‘ভিড়ের তুলনায় বিক্রি বেশি না হলেও,বলা যায় বিক্রি বেশ ভালো। লোকসমাগম যেভাবে দেখা যাচ্ছে, আশা করি, প্রকাশকরা গত দুবছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন।’
নবযুগ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী জাহিদ তানজিম বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মতো বিক্রয়কর্মী ও প্রকাশকদের জন্য বিশেষ দিন। এদিন সবসময় আমাদের ব্যস্ততার মধ্যে কাটে। বিক্রি বেশি হওয়ায় বেশ ভালোই লাগছে।’
মুক্তচিন্তা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী নাহিদ হোসেন সৌরভ বলেন,‘এবারের বইমেলার সবচেয়ে ব্যস্ততম দিন আজ। সকাল থেকেই লোকজন বাড়তে শুরু করে। বিকাল থেকেই স্টলে লোকজনের ভিড়। ক্রেতাদের সামাল দিতে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছি।’
পুরান ঢাকা থেকে আগত সামিয়া তাসনিম বলেন, ‘একুশের বিশেষ দিনটিতে প্রিয়জনের সঙ্গে প্রভাত ফেরিতে এসেছি। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরেছি। বিকালে বইমেলায় আসলাম। তিনি বলেন, ‘এত লোক যে, তিল ধারণের জায়গা নেই। বইয়ের দোকানগুলোতেও ভীষণ ভিড়। আধা ঘণ্টা সিরিয়ালে দাঁড়ানোর পর বই কিনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। '
মেলায় ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না অনেকে। মেলায় প্রবেশের সময় সবার মুখে মাস্ক থাকলেও প্রবেশের পর অধিকাংশ মাস্ক খুলে ফেলছেন। মাস্ক খুলে বসে, দাঁড়িয়ে যত্রতত্র আড্ডা দিচ্ছেন। জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে একজন বলেন, ‘দেখেন, এত লোক যে এমনিতেই শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তারপর মাস্ক পরলে আরও দম বন্ধ হয়ে আসে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশক বলেন, ‘আসলে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি আইনের চেয়ে নৈতিকতার সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত। সবারই উচিত নীতি নৈতিকতার জায়গা থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যারা মাস্ক না পরে ঘোরাঘুরি করছেন, তাদের বেশির ভাগই আসেন সময় কাটাতে, বই কিনতে নয়। তাই আমার মনে হয়, মেলায় প্রবেশ মূল্য করা উচিত।’
বইমেলার আলোচনা সভা
বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় ‘ফিরে দেখা: আমাদের ভাষা আন্দোলন’ শীর্ষক অমর একুশে বক্তৃতা-২০২২। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি আসাদ চৌধুরী। স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ২২৪টি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন