প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে ৬০ জনের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তির মতামত নেবে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামীকালের মধ্যে চিঠি দিয়ে তাদের পছন্দের ব্যক্তির নাম চাওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুসন্ধান কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠক শেষে অনুসন্ধান কমিটিকে সাচিবিক সহায়তার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো সাংবাদিকদের জানান।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনে যেসব রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত আছে তাদের কাছে আগামীকাল দুপুরের মধ্যে চিঠি দেওয়া হবে এবং প্রত্যেক দলকে অনুরোধ করা হবে আগামী শুক্রবার বিকেল ৫টার মধ্যে অনলাইনে অথবা ফিজিক্যালি কেবিনেট ডিভিশনে অনধিক দশ জনের নমিনেশন ওনারা ইচ্ছা করলে দিতে পারবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, শুক্রবার কেবিটেন ডিভিশনের অফিস খোলা থাকবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন তাদের কাছেও চাওয়া হবে। তাদেরও যদি কোন পরামর্শ থাকে তারা দিতে পারবে।
বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তিনটি মিটিং হবে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আগামী শনিবার সকাল ১১ টা থেকে সাড়ে ১২ টার পর্যন্ত এবং পৌনে একটা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত দুটো মিটিং হবে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে। তারপরের দিন বিকেল ৪টায় আরেকটা মিটিং হবে, ১৩ তারিখে। তিনটা মিটিং হচ্ছে। ওনাদেরও কাল দুপুরের মধ্যে আমরা চিঠি দিয়ে দিবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বিশিষ্ট নাগরিকদের তালিকা চূড়ান্ত হইছে। এটা আনুমানিক ৬০ জনের মতো। প্লাস, মাইনাস ৬০ জনের মতো। তারপরও কেউ বাদ পড়লে কমিটি মনে করলে ওনাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, সার্চ কমিটি অ্যাবসুলেটলি নিরপেক্ষ থাকবে।
বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা বৈঠক করেন সার্চ কমিটির সদস্যরা। সার্চ কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সার্চ কমিটির অন্য সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য নাম সুপারিশ করতে সার্চ কমিটি গঠন করে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২-এর ধারা ৩ মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার লক্ষ্যে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করা হল।
অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পন্ন করবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দেবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী, এর আগেই নতুন ইসি গঠন করা হবে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মনোনীত করার পর রাষ্ট্রপতি তা চূড়ান্ত করেন। তবে এবার নতুন আইনানুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করা হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গেল ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ২৭ জানুয়ারি বিলটি জাতীয় সংসদে পাসের পর ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আইনটিতে সম্মতি দেন। ৩০ জানুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল, ২০২২’ এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আইনানুযায়ী, আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠিত হবে। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে তারা ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। ১০ জনের মধ্য থেকেই পাঁচজনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন