বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের ইটভাটগুলোতে ১০ই ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার অভিযান পরিচালনা করেছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। অভিযানে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ইট প্রস্তুতকরায় উচ্ছেদ এবং ১৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে বান্দরবান জেলা প্রশাসন পরিচালিত অভিযানের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কায়েসুর রহমান এবং মামুনুর রশীদ। পরিবেশ অধিদপ্তর,পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের টীমও অভিযানে অংশগ্রহণ করে।অভিযানের শুরুতে বুলডোজার দিয়ে তিনটি ভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়। জরিমানা করা হয় সাত লক্ষ টাকা।এর মধ্যে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের এফ এ সি ধ্বংস করে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।এস বি ডাব্লিউ'র মালিক ইউনুছের ভাটা ধ্বংস করে দুই লাখ টাকা ও মোখতার আহমেদ এর এম এস বি ভাটা ধ্বংস করে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদাত।জানাগেছে, হাই কোর্টের বিগত ২৫ জানুয়ারি/ তারিখে রিট পিটিশন মামলা নং ১২০৪/২০২২ এর আদেশে আরো কয়েকটি অবৈধ ইটভাটায় সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়।সর্বমোট ১১টি ইটভাটাকে ১৪ লক্ষ টাকা জরিমানা হয়েছে।
উল্লেখ্য,গত ২৫শে জানুয়ারি খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের এই তিন জেলায় থাকা সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম সাত দিনের মধ্যে বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলো হাইকোর্ট। সেখানে থাকা লাইসেন্সহীন সব ইটভাটার তালিকা আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে তিন জেলার জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম এলাকার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকসহ বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী আদেশের জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি দিন রাখা হয়েছে।
ওই তিন জেলায় থাকা বিভিন্ন ইটভাটা লাইসেন্স ছাড়া পরিচালিত হচ্ছে। পাহাড় কেটে মাটি ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার ও বনের গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে—গণমাধ্যমে আসা এমন খবর যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে রিটটি করা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ওই তিন জেলায় থাকা লাইসেন্সহীন সব ইটভাটার কার্যক্রম আগামী সাত দিনের মধ্যে বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।রুলে তিন জেলায় লাইসেন্সহীন পরিচালিত সব ইটভাটা বন্ধে নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পরিবেশসচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের পরিচালক, তিন জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ২৪ বিবাদীকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল উজাড় করে এভাবে পাহাড়কে ভূমি ধসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও ইটভাটার মালিকরা। প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলে দেখা যায়, অবৈধ কাঠের গাড়ি ও ছোট ছোট সেগুন, গামারি সহ বিভিন্ন পাহাড়ি গাছের চারা কেটে ট্রাক ও জীপ গাড়ি ভর্তি করে নিতে। বন বিভাগ ও প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি এসব করছে৷ যা পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য ক্ষতিকর।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন