রাজধানীর ধানমণ্ডির ভিক্টোরিয়া কনভেনশন সেন্টারে ইভ্যালির নামে নিবন্ধন থাকা সাতটি গাড়ি গতকাল নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়
গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে নিলামে তোলা ইভ্যালির সাতটি গাড়ি বিক্রি হয়েছে দুই কোটি ৯০ লাখ ৫৫ হাজার টাকায়। এই দামে গাড়িগুলো বিক্রি করতে পেরে খুশি আদালতের তৈরি করা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ইভ্যালির কার্যালয়ের পাশে অনুষ্ঠিত নিলামে ইভ্যালির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলের ব্যবহার করা বিলাসবহুল ‘রেঞ্জ রোভার’ গাড়িটি বিক্রি হয়েছে এক কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। কিনেছেন হাবিবুর রহমান নামের একজন প্রকৌশলী।
আদালত কর্তৃক তৈরি করা ইভ্যালির পরিচালনা পরিষদ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক নিলাম শেষে বলেন, ‘নিলামের মাধ্যমে গাড়ির প্রত্যাশিত মূল্য আমরা পেয়েছি। নিলাম প্রক্রিয়া বানচাল করার জন্য কিছু সন্ত্রাসী গণ্ডগোল সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা ছিল। তবে পুলিশ ও র্যাবের কড়া নিরাপত্তায় সেটি হয়নি। খুব সুন্দর ও প্রতিযোগিতামূলকভাবে নিলাম সম্পন্ন হয়েছে। যা মূল্য পেয়েছি তাতে আমরা খুশি। ’
নিলাম সূত্রে জানা গেছে, রেঞ্জ রোভার গাড়িটির ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছিল এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। নিলামে এর জন্য ১৫ জন দর হাঁকান। টয়োটা প্রিয়াস গাড়িটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এই গাড়ির ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা ছিল ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। টয়োটা সিএইচআর হাইব্রিড বিক্রি হয়েছে ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। ভিত্তিমূল্য ছিল ১৮ লাখ টাকা। টয়োটা এক্সিও ব্র্যান্ডের গাড়িটি বিক্রি হয় ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়। ভিত্তিমূল্য ছিল ৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। আরেকটি টয়োটা এক্সিও গাড়ি ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। এটির ভিত্তিমূল্য ছিল ৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। হোন্ডা ব্র্যান্ডের গাড়িটি ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। ভিত্তিমূল্য ছিল ১৬ লাখ টাকা। টয়োটা ব্র্যান্ডের মাইক্রোবাস ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা ছিল ১২ লাখ টাকা।
নিলামে যাঁরা গাড়ি কিনেছেন তাঁদের গাড়ির মূল্যের ২০ শতাংশ টাকা বায়না হিসেবে নগদ দিতে হয়েছে, যা অফেরতযোগ্য। অবশিষ্ট মূল্য আগামী সাত দিনের মধ্যে নগদ বা ব্যাংক ড্রাফট পরিশোধ সাপেক্ষে গাড়ি হস্তান্তর করা হবে।
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আরো বলেন, ‘ইভ্যালির গাড়ি বিক্রির টাকা পাওনাদারদের ফেরত দেওয়া হবে। আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করছি ইভ্যালির পুঁজি বাড়াতে। এই অর্থ ইভ্যালির অ্যাকাউন্টে যাবে। ভবিষ্যতেও যেগুলো বিক্রি করা হবে তার একটাই উদ্দেশ্য পুঁজি বাড়ানো। ’ তিনি বলেন, ‘ইভ্যালির পাওনাদারদের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে অডিট করার আগ পর্যন্ত আমরা সঠিক সংখ্যাটা বলতে পারছি না। ’
সাবেক বিচারপতি বলেন, ‘গাড়িগুলো ইভ্যালির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নিজেদের কাজে ব্যবহার করতেন। কিছু লোক ইভ্যালির আরো কিছু গাড়ি আটকে রেখেছেন, যা আইনের ভাষায় চুরি। আমরা আগামী রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর মধ্যে গাড়িগুলো ফেরত না দিলে পুলিশি অভিযানের মাধ্যমে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে। ওই গাড়িগুলোও উদ্ধার করে নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। ’ তিনি বলেন, ‘চারটি গাড়ির এখন পর্যন্ত আমরা সন্ধান পেয়েছি। তবে এর বাইরে আরো কয়েকটি গাড়ি রয়েছে। বাইরে যে গাড়িগুলো রয়েছে সেগুলো ইভ্যালির সাবেক এমডি রাসেল দিয়েছিলেন। আমরা তাঁদের ঠিকানা পেয়েছি। তাঁরা গাড়ি লুকিয়ে রেখে বাঁচতে পারবেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’
ইভ্যালির সার্ভারের বিষয়ে তিনি বলেন, অ্যামাজনের সঙ্গে সমঝোতা করে সার্ভারটি খুলতে হবে। কিংবা অন্য যেকোনো প্রক্রিয়ায় এটি আমরা খুলব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন