তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান কানাডার উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন। এমিরেটস এয়ারলাইনসের ইকে-৮৫৮৫ ফ্লাইটে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২১ মিনিটে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।
এর আগে গতকাল রাত ৯টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছান সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। তিনি বিমানবন্দরের রজনীগন্ধা লাউঞ্জে অপেক্ষা করেন। এরপর বোর্ডিং ও ইমিগ্রেশন শেষ করে ৭ নম্বর গেট দিয়ে তিনি উড়োজাহাজে ওঠেন।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে মুরাদ হাসানের যাওয়ার কথা থাকলেও ফ্লাইটটি ছেড়ে যায় দিবাগত রাত ১টা ২১ মিনিটে। যাত্রীদের চাপ থাকায় ফ্লাইটটি ঢাকা ছাড়তে দেরি হয়। মুরাদ হাসান দুবাই হয়ে কানাডার টরন্টোয় পৌঁছাবেন।
ডা. মুরাদ হাসানের দেশত্যাগের খবর এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক। তিনি জানান, মুরাদ কানাডার উদ্দেশে দিবাগত রাত ১টা ২১ মিনিটে দেশ ছেড়েছেন।
দেশ ছাড়ার সময় মুরাদ হাসানের পরনে কালো রঙের ব্লেজার, টি–শার্ট, নীল রঙের জিনস, মাথায় কালো ক্যাপ, মুখে কালো মাস্ক ও চোখে চশমা ছিল। তাঁর কোনো সফরসঙ্গী ছিল না।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মুরাদ হাসানের যে লাল পাসপোর্ট (বিশেষ পাসপোর্ট) ছিল, সেটি পদত্যাগের দিন (৭ ডিসেম্বর) নিজের হাতে নিয়ে গেছেন তিনি।
এদিকে, ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে এরই মধ্যে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিটও দায়ের হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মুখে বিতর্কিত এ নেতা দেশত্যাগ করলেন।
এর আগে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হলেও তাঁর দেশত্যাগে কোনো বাধা নেই জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, মুরাদ হাসান বিদেশে যেতে চাইলে সরকার বাধা দেবে না। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মুরাদ হাসান বিদেশে যাবেন কি না, সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত। এখানে আমাদের কিছু করার নাই। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকায় তিনি যেকোনো দেশে যেতে পারেন।’
অশালীন ও নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়ায় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ মুরাদ হাসান। গত সোমবার (৬ ডিসেম্বর) মুরাদ হাসানকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দেন মুরাদ। ওইদিন বিকেলেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রকাশিত গেজেট বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত হয়েছে।
মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য। মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের পর জামালপুর আওয়ামী লীগ থেকে মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে দলের আগামী কার্যনির্বাহী সংসদীয় বৈঠকে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন