‘আন্তর্জাতিক লবিস্ট গ্রুপের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা’ | 'US sanctions in support of international lobbyist group'


বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার নজির আছে। অন্যান্য দেশও এমন নিষেধাজ্ঞা দেয়। যেমন এবার গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাব ও এর কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার উপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কেন এমন নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র?

সাধারণত কোন দেশ আরেকটি দেশকে বা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দেয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এমন দেশ এরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যেসব দেশে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যাতায়াত, বিনিয়োগ বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে।

আবার নিষেধাজ্ঞা অনেক সময় এক দেশ আরেক দেশের ওপর প্রতিশোধ হিসেবে আরোপ করে।

যেমনটা রাশিয়া ২০১৪ সালে ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে করেছিল।

ইউনিভার্সিটি অব স্যালফোর্ড এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মরটিজ পিয়েপার বিবিসিকে বলেছেন, "আপনি একটি দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন কারণ আপনি ঐ দেশটির আচরণে পরিবর্তন দেখতে চান"।

বিষয়টা হলো, "ঐ দেশের নাগরিক তার নিজ দেশের সরকারের ওপর রাগান্বিত হবে। এবং দাবী জানাবে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ভিত্তিতে সরকার যাতে শোধরায়"।

মার্কিন অর্থ দফতরের ওয়েবসাইটে নিষেধাজ্ঞার খবর জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি


কারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে বাধ্য?

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বা অর্থ দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সকল মার্কিন নাগরিক বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি রয়েছে, এমন সকল ব্যক্তি, যেখানেই থাকুন না কেন, অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি) নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য।

অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র যখন নিষেধাজ্ঞা জারি করে, সেইসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা দেশের সঙ্গে মার্কিন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন রকম লেনদেন বা সম্পর্ক রক্ষা করতে পারে না। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সেটি করতে পারে না। যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির যে নির্বাহী আদেশে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সকল অর্থ-সম্পদ, মার্কিন কোন ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদ জব্দ থাকবে। এগুলো হস্তান্তর, প্রদান বা লেনদেন করা যাবে না।

সেই সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত, তাদের বিদেশি শাখাকেও এই নির্দেশনা মানতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ভর্তুকি বা অনুদান দিয়ে থাকে, অথবা যুক্তরাষ্ট্র পরিচালনা করে, তাদের জন্যও এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।

যদি কেউ সেটা লঙ্ঘন করে, তাহলে বিভিন্ন অংকের জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা বন্ধু দেশগুলো মানতে বাধ্য নয়। কিন্তু কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি বা অস্ট্রেলিয়ার মতো যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করে থাকে।

র‍্যাব

র‍্যাব কর্মকর্তাদের উপর এই নিষেধাজ্ঞার কী প্রভাব হবে?

বাংলাদেশের পুলিশের প্রধান বেনজীর আহমেদ, র‍্যাব এবং এর ছয়জন বর্তমান ও সাবেক র‍্যাব কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটা অর্থনৈতিক।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বা অর্থ দপ্তরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রতিষ্ঠান লেনদেন করতে পারবে না। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যদি তাদের কোন অর্থ-সম্পদ থেকে থাকে, তাও ফ্রোজেন বা সাময়িক জব্দ হয়ে থাকবে।

কিন্তু তাদের বাংলাদেশে থাকা ব্যাংকিং বা আর্থিক লেনদেনে কি কোন প্রভাব পড়বে?

এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইনে পরিচালিত হয়, সুতরাং সেখান থেকে কোন নির্দেশনা বা সার্কুলার না এলে বা আদালতের নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ইমিডিয়েটলি তাদের আর্থিক লেনদেনে কোন প্রভাব পড়বে না।''

তিনি জানান, 'ফাটকা আইন' (ফরেন একাউন্ট ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স অ্যাক্ট) নামের যুক্তরাষ্ট্রের একটি আইন রয়েছে। এর ফলে কোন মার্কিন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান এদেশে কর দেয় কিনা, সেটা জানাতে হয়। এর বাইরে বাংলাদেশে বসবাসরত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রকে জানাতে বাধ্যবাধকতা নেই।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছেন বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ, এবং ছয়জন বর্তমান ও সাবেক র‍্যাব কর্মকর্তা

''যখন এরকম নিষেধাজ্ঞার ব্যাপার আসে,তখন হয়তো দেশের ব্যাংকগুলো তাকে কোনরকম বাধা বা বিধিনিষেধ দিতে পারে না, তবে তাদের লেনদেনের ব্যাপারে একটু বেশি নজরদারি করে থাকে। ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা আমরা বলতে পারি না, তবে যদি ব্যাংকগুলো বিদ্যমান আইন মেনে চলে, তাহলে তাদের আর কোন সমস্যায় পড়তে হবে না।'' বলছেন মি. আমিন।

যুক্তরাষ্ট্রের জারি করা কয়েকটি আলোচিত নিষেধাজ্ঞা

বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র দেশ হিসাবে ইরান, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, কিউবা, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা বিভিন্ন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে দেশ ভেদে এসব নিষেধাজ্ঞার প্রকৃতি আলাদা।

ইরান, উত্তর কোরিয়া, কিউবা, ভেনেজুয়েলা এবং সিরিয়ার ওপর ব্যাপক আকারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে এসব দেশের সরকার বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোন মার্কিন প্রতিষ্ঠান কোনরকম লেনদেন বা বাণিজ্য করে না।

এমনকি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোন দেশ ইরান থেকে তেল কিনতেও পারে না। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান বা ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি একপ্রকার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

এছাড়া সন্ত্রাসবিরোধী এবং মাদক বিরোধী নিষেধাজ্ঞার আওতায় বিভিন্ন দেশের একাধিক ব্যক্তির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বা সহযোগী দেশগুলোয় থাকা সম্পদ জব্দ করার পাশাপাশি তারা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারে না।

১:৩৮ AM

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Holy Foods ads

Holy Foods ads

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget