তেলসমৃদ্ধ মধ্য এশীয় দেশ কাজাখস্তানে এলপি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে বিক্ষোভের মুখে গতকাল বুধবার দেশটির সরকারের পতন হয়েছে। পাশাপাশি, সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন বছরের শুরুতে কাজাখস্তানের সরকার এলপি গ্যাসের ওপর থেকে দাম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তুলে নিলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কেননা, দাম কম পড়ায় বহু কাজাখ তাদের গাড়ি তেলের পরিবর্তে এলপি গ্যাসে চালিয়ে থাকেন।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম খবর-২৪ এ বলা হয়েছে, সারা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় বিক্ষোভকারীরা গতকাল সন্ধ্যায় কাজাখস্তানের বৃহত্তম নগরী আলমাতের বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েন।
'এই জরুরি অবস্থা আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে' উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, 'এই সময়ে যান ও জনচলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।'
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ৩টি প্রধান শহরে প্রশাসনিক কার্যালয়ে 'পাথর, লাঠি, গ্যাস, মরিচের গুঁড়া ও ককটেল' হামলা চালিয়েছে।
আলমাতের এক সাংবাদিক সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইন্টারনেট সংযোগ ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও মেয়রের কার্যালয়ের আশেপাশের ভবনগুলোয় বাতি জ্বলতে দেখা যায়নি।
আলমাতে বিমানবন্দরের গণমাধ্যম শাখা স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওরদাডটকেজেড'কে জানায়, '৪৫ জনের মতো বিক্ষোভকারী বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েন। সেসময় বিমানবন্দরের কর্মীরা যাত্রীদের নিরাপদে বের করে আনেন।'
সরকারের পদত্যাগ, মিত্রদের সাহায্য প্রার্থনা
প্রেসিডেনশিয়াল ওয়েবসাইটে গতকাল বলা হয়, দেশব্যাপী বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী আসকার মামিনের সরকার পদত্যাগ করেছে। দেশের চলমান 'আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে' প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ বৈঠক করেছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তোকায়েভ বলেন, তিনি দেশের নিরাপত্তা কাউন্সিলের দায়িত্ব নেবেন। দ্বিতীয় ভাষণে তিনি আলমাতে বিমানবন্দরে 'সন্ত্রাসী' হামলার কারণে মিত্র দেশগুলোর সহায়তা চান।
কাজাখ প্রেসিডেন্ট 'আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে' বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেছেন। আগামী ১৮০ দিনের জন্য জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এর মধ্যে থাকবে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কাজিনফরম জানায়, তোকায়েভ কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিএসটিও) প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এই জোটে রাশিয়া, বেলারুশ ও কিরগিজস্তান রয়েছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে রাষ্ট্রীয় ভবনে আগুন ও নিরাপত্তাকর্মী নিহত হওয়ায় প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভ দমনে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সহায়তা চেয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি বলেন, 'সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে আমি সিএসটিও'র সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রধানদের সহযোগিতা চেয়েছি।'
৮ নিরাপত্তাকর্মী নিহত
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম তেনগ্রিননিউজ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দেশব্যাপী অন্তত ৮ পুলিশ কর্মকর্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও, ৩১৭ নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছেন।
রাশিয়া চুপ থাকতে পারে না
কাজাখস্তানে চলমান বিক্ষোভের কারণ কি? দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রাশিয়ার জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?—এমন প্রশ্ন তুলে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি জানিয়েছেন, কাজাখস্তানে চোখের এসব ঘটনা ঘটে গেছে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, এ বিক্ষোভ তেমন জোরালো হবে না।
কিন্তু, অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এমনকি, রাজপথে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে রুশ সেনাদের সংঘর্ষে হয়েছে।
আরটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে গত ২ জানুয়ারি কাজাখস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে বিক্ষোভ শুরু হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই বিক্ষোভ স্বতঃস্ফূর্ত ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। এই বিক্ষোভের কোনো নেতা ছিল না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না কার সঙ্গে কথা বলবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন