সংরক্ষিত হলো শাহ আবদুল করিমের ৪৭২ গান | 482 songs of Shah Abdul Karim were preserved


বাংলার হাওর অঞ্চলের গানকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে গেছেন কিংবদন্তি শাহ আবদুল করিম। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। তবে এই বাউল সম্রাটের জীবদ্দশা থেকেই তার গান গেয়ে ও রিমেক করে দেশ-বিদেশে নাম-অর্থ কুড়িয়েছেন অসংখ্য সাধারণ ও অসাধারণ মানুষ। সেই ধারাবাহিকতা চলছে এখনও।

বিপরীতে করিম পরিবার এখনও পড়ে আছে হাওর অঞ্চলের নিভৃতে। গত ১৩ বছর ধরেই তার একমাত্র ছেলে বাউল শাহ নূর জালাল এ নিয়ে করছেন হাহাকার। অবশেষে শাহ আবদুল করিমের লেখা-সুর করা ৪৭২টি গানের একটা বিহিত হলো। জানা গেছে, বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ডে গানগুলোর মালিকানা ও কপিরাইট ইস্যুর বিষয়টি সংরক্ষিত হলো সম্প্রতি।

কপিরাইট রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরীর আগ্রহ আর সংগীতশিল্পী জুয়েল মোর্শেদ জু ও সারোয়ার শুভর উদ্যোগে এই জটিল কাজটি সম্পন্ন হলো বলে জানান শাহ আবদুল করিমের ছেলে শাহ নূর জালাল।

এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত জুয়েল মোর্শেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শাহ আবদুল করিমের লেখা-সুর করা গানের সংখ্যা প্রায় সাত শ। তবে সবগুলো গানের সঠিক পাণ্ডুলিপি বা ট্র্যাক সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সে জন্যই ৪৭২টি গান আপাতত সংরক্ষিত করা হলো। বাকি গানগুলো অনুসন্ধানের কাজ চলছে।

অন্য উদ্যোক্তা সারোয়ার শুভ বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে শাহ আবদুল করিমের সৃষ্টিগুলো প্রচার ও প্রকাশের ক্ষেত্রে একটা শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কারণ, এরমধ্যে কপিরাইট অফিসের মাধ্যমে গানগুলোর সঠিক সংরক্ষণ ও রয়্যালটি সংগ্রহের বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আগে যারা উনার গান প্রকাশ করেছেন, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।’

জুয়েল মোর্শেদ যোগ করেন, ‘উনার গানগুলো গাইতে বা প্রকাশে কিন্তু কোনও বাধা নেই। যে কেউ গানগুলো গাইতে পারেন। তবে বাণিজ্যিকভাবে কিছু করতে হলে কপিরাইট বোর্ডের অনুমতি লাগবে।’

‘বন্দে মায়া লাগাইছে’, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি’, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘তুমি মানুষ আমিও মানুষ’, ‘প্রাণে সহে না দুঃখ বলবো কারে’, ‘কোন মেস্তোরি নাও বানাইছে’, ‘ওরে ভব সাগরের নাইয়া’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শাহ আবদুল করিম সিলেট অঞ্চলের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের উজানধল গ্রামে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এক কৃষক পরিবারে জন্ম নেন। করিমের শৈশব-কৈশোর-যৌবন কাটে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর পর উজানধল গ্রামের নিজ বাড়িতে স্ত্রী সরলা খাতুনের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।

মাত্র আট দিন নাইটস্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন আব্দুল করিম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও, তিনি ছিলেন স্ব শিক্ষিত। জীবদ্দশায় কালনী নদীর তীরে বসে তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বাউল গান। ভাটিবাংলার অপার সৌন্দর্য তিনি ধারণ করেছিলেন তার হৃদয় সত্তায়। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা তাকে তিলেতিলে পীড়ন করতো। তার গানে গ্রামবাংলার জীবনচিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন সুনিপুণভাবে। গানে গানে তিনি হয়ে উঠেছিলেন মানুষের আত্মার আত্মীয়, অকৃত্রিম দেশপ্রেমিক ও গণ মানুষের শিল্পী।

১:৩২ AM

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Holy Foods ads

Holy Foods ads

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget