জামিনে এসে হুমকি দিচ্ছে সোহেল হত্যার আসামিরা
পাহাড়তলীতে গণপিটুনির নামে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেলের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই ও মামলার বাদি মুহাম্মদ শাকিরুল ইসলাম শিশির। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। এসময় তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও একই অভিযোগ করেন। পাশাপাশি তারা আলোচিত এ মামলা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিশির বলেন, ‘সোহেল হত্যার তিনমাস অতিবাহিত হয়েছে। এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এজাহারভুক্ত ১৯ আসামিকে গ্রেফতার করেছে। তবে ইতোমধ্যে হাইকোর্ট চারজন আসামিকে জামিন দিয়েছেন। জামিনপ্রাপ্ত এবং তাদের সঙ্গীরা ইতোমধ্যে নানা ভাবে আমাকে এবং আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। ভাইকে হারিয়ে আমরা এখনো শোকার্ত। এর মধ্যে জামিনে বেরিয়ে আসামিরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে। কোন দিকে যাব বুঝতে পারছি না। বিচারের ভার প্রশাসন ও আপনাদের (সাংবাদিক) দিলাম।’ মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাবের আহমদ সওদাগর এবং দ্বিতীয় আসামি জাতীয় পার্টির নেতা ওসমান গণি জামিন পাওয়ায় পরিবারটির হতাশার কথাও জানান শিশির।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমার ভাই সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ ছিলেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েই পরিকল্পিত খুনের শিকার হয়েছেন।’ এসময় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা মহিউদ্দিন সোহেল হত্যার দৃশ্যটি সাংবাদিকদের দেখানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সোহেলের বাবা আবদুল বারিক, মা ফিরোজা বেগম, স্ত্রী নিগার সুলতানা, দুই ছেলে ফাইয়াজ তাজওয়ার মাসরিফ ও মাহাথির, বোন রাজিয়া সুলতানা এবং ভগ্নিপতি রফিকুল ইসলাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত বাঙালি, সাবেক ছাত্রনেতা মো. সাজ্জাত হোসেন, নির্মুল কমিটি জেলা নেতা শাহাদাত নবী খোকা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অসিত বরণ বিশ্বাস ও দীপু বড়ুয়া।
গত ৭ জানুয়ারি সকালে নগরীর ডবলমুরিং থানার পাহাড়তলী বাজারে মহিউদ্দিন সোহেলের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর পুলিশ ও বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ব্যবসায়ী ও জনতা মিলে মহিউদ্দিন সোহেলকে গণপিটুনি দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। তবে পরদিন তার পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সোহেল কোনো চাঁদাবাজ কিংবা সন্ত্রাসী ছিলেন না। জন্মস্থান পাহাড়তলীকে ‘সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত’ করার কাজে হাত দিয়ে তিনি কাউন্সিলর সাবের সওদাগর ও ওসমান খানের রোষাণলে পড়েছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পর ৮ জানুয়ারি রাতে সোহেলের ছোট ভাই শিশির বাদী হয়ে নগরীর ডবলমুরিং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পাহাড়তলী বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক সাবের আহমদ সওদাগর ও সদস্য ওসমান খানসহ ২৭ জনের নামোল্লেখ করা হয়। এছাড়া আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
(dainikazadi)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন