শ্রীলঙ্কায় এবার মসজিদে পেট্রোল বোমা হামলা

শ্রীলঙ্কার পুত্তালুম জেলায় রবিবার রাতে অন্তত একটি মসজিদে পেট্রোল বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া বান্দারাগামা এলাকায় মুসলিম মালিকানাধীন দুটি দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এজেন্সিয়া ইএফই।

রবিবার দিনের বেলায় কলম্বোর গির্জা ও পাঁচতারকা হোটেলসহ আটটি স্থানে সিরিজ বিস্ফোরণের পর রাতেই হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন মুসলিমরা। ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি-র হাতে পাওয়া নথি অনুযায়ী, গির্জায় হামলার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার পুলিশকে আগেই সতর্ক করেছিল 'একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা'।

২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল পুলিশ প্রধান পুজুথ জয়াসুনদারা দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে এ সংক্রান্ত গোয়েন্দা সতর্কতা পাঠান। এতে বলা হয়, 'একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত (এনটিজে) প্রখ্যাত চার্চ এবং কলম্বোয় ভারতীয় হাইকমিশন লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।' তবে এখনও রবিবারের হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনও গোষ্ঠী।
শ্রীলঙ্কা সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে রবিবারের সিরিজ বিস্ফোরণের জন্য কাউকে দায়ী করেনি। তবে ইতোমধ্যে ন্যাশনাল তাওহীদ জামাতের একজন নেতাকে এ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ইসরায়েলভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যম। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, এ মাসের গোড়ার দিকে তিনি কলম্বোর ভারতীয় হাইকমিশনেও হামলা চালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
রবিবারের হামলার পরপরই শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার ঘোষণা দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, কলম্বোয় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমাদের অঞ্চলে এমন বর্বরতার কোনও স্থান নেই।
এদিকে শ্রীলঙ্কায় রবিবারের ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৫০০ জন। সোমবার সকালে পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা হতাহতের এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধন জানিয়েছেন, অপরাধীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তদন্তকারীরা। সোমবার পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান। তবে গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধন জানান, হামলায় নিহতদের মধ্যে ৩০ জন বিদেশিও রয়েছেন। দেশ এবং দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করছে বলেও জানান রুয়ান বিজয়বর্ধন। তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস দুর্ভাগ্যজনক এই সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সব অপরাধীকে যত দ্রুত সম্ভব হেফাজতে নেওয়া হবে। তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে রাজধানী কলম্বো ও তার আশপাশের তিনটি গির্জা এবং তিনটি হোটেলে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
কলম্বোর কোচিচিকাদের সেন্ট অ্যান্থনি চার্চে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় হামলাটি ঘটে কুতুয়াপিটায়ের সেন্ট সিবাস্তিয়ান চার্চে। আর তৃতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে নেগোম্বো শহরের বাত্তিকালোয়া চার্চে। এছাড়া কলম্বোর তিনটি পাঁচতারকা হোটেলেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে ইস্টার সানডে’র অনুষ্ঠান চলার মধ্যে এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
ঠিক কী কারণে কারা এ হামলা চালিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুধু নেগোম্বোতেই বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় বাসভবনের কাছে অবস্থিত সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলের এক কর্মচারী বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, হোটেলের এক রেস্তরাঁয় বিস্ফোরণ ঘটানো হলে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা বিস্ফোরণের বিষয়ে তথ্য খতিয়ে দেখছেন।
কলম্বোর সেন্ট অ্যান্থনি চার্চে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে পুরো ভবন কেঁপে ওঠে। দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটেছে রাজধানী কলম্বোর উত্তরে নেগোম্বো শহরের আরেকটি চার্চে। নিজেদের ফেসবুক পেজে সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছেন ওই চার্চ কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে কুতুয়াপিটায়ের সেন্ট সিবাস্তিয়ান চার্চের অভ্যন্তরে ছিন্নভিন্ন ছাদের ছবি দেখা গেছে। মেঝেতে রক্ত পড়ে থাকার ছবিও দেখা গেছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দেশ শ্রীলঙ্কার মাত্র ছয় শতাংশ মানুষ ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। দেশটির দুই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী তামিল ও সিংহলিজ উভয়ের মধ্যেই এই ধর্মাবলম্বীদের দেখতে পাওয়া যায়। এক দশক আগে গৃহযুদ্ধ অবসানের পর দেশটিতে বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের মার্চে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহলি সম্প্রদায়ের সদস্যরা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মসজিদ ও সম্পত্তিতে হামলা শুরু করলে দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।

রবিবারের ঘটনায় উত্তেজনা ও গুজব ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জনপ্রিয় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। দুই দিনের জন্য সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বার্তা পাঠানোর অ্যাপস দেশটিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাতে করে ভুল তথ্য ও গুজব ছড়ানো রোধ করা যায়। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স।
(banglatribune)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Holy Foods ads

Holy Foods ads

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget