আহমেদ শাহেদ : সোনাগাজী উপজেলা আ.লীগ নেতা রুহুল আমিন, যিনি দলের সর্বশেষ কাউন্সিলে সদস্য নির্বাচিত হলেও পরে ভোজবাজিতে বনে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অন্যতম হোতাও তিনি। মামলার তিন নম্বর আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, হত্যা পরিকল্পনার বিষয়ে সব কিছুই জানতেন রুহুল আমিন। ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার পরই রুহুল আমিনকে ফোনে জানিয়ে ছিলেন শামীম। রুহুল আমিন তখন বলেছিলেন ‘আমি সব জানি, তোমরা পালিয়ে যাও, আমি থানায় যাচ্ছি’। তারই নির্দেশে দ্রুত পালিয়ে যায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা।
নুসরাতের পরিবারের দায়েরকৃত মামলায় গত ১৯ এপ্রিল গ্রেপ্তারের পরদিন আদালতের মাধ্যমে রুহুল আমিনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। রিমান্ড শেষে গত বৃহস্পতিবার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় তাকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা ভাবছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান, ন্যক্কারজনক এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম জানান, নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আলমকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ বিষয়টি অবগত হয়েছে। নুসরাতের পরিবারের দায়েরকৃত মামলার এজাহারে নাম থাকায় মকসুদ আলমকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পিবিআইর তদন্তে দলের দায়িত্বশীল অন্য কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, বিএনপির মাধ্যমে রাজনীতিতে যুক্ত হন চরম সুবিধাবাদী রুহুল আমিন। এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে ঢুকে যান জাতীয় পার্টিতে। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন উপজেলা সভাপতি ফয়েজুল কবিরের হাত ধরে আওয়ামঅ লীগে প্রবেশ করেন তিনি। যদিও তার পরিবারের সব সদস্য এখনো বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। ২০০১-২০০৯ পর্যন্ত তিনি সৌদি ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে ফেরেন। দলের সর্বশেষ কাউন্সিলে ৪৪ নং ক্রমিকে সদস্য হন তিনি। সোনাগাজীর সাবেক এমপি হাজি রহিম উল্লাহর সঙ্গে সদরের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর দ্বন্দ্ব শুরু হলে তিনি নিজাম হাজারীর পক্ষ নেন। এরপর দলবল নিয়ে হাজি রহিমের গাড়িবহর, বাড়ি, বালুমহাল ও নেতাকর্মীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালান। ওইসব হামলায় নিহত হয়েছেন চরদরবেশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন, যুবলীগ নেতা আজিজুল হক, মঙ্গলকান্দির যুবলীগ নেতা নুরুজ্জামান লিটন ও মিজানুর রহমান (পিসি মিজান)। এ ছাড়া এই দ্বন্দ্বের জেরে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। হয়েছে পাল্টাপাল্টি শতাধিক মামলাও। এই সুযোগে যুবদল-ছাত্রদল ক্যাডারদের সমন্বয়ে গঠিত ব্যক্তিগত বাহিনী দিয়ে পুরো উপজেলা নিয়ন্ত্রণ নেন রুহুল আমিন। এসবের পেছনে ইন্ধন ছিল ফেনী জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী ও সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকনের। এরপরই কমিটির তালিকায় ঘষামাজা করে রুহুলকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির করা হয়। এসব সহ্য করতে না পেরে সোনাগাজী ত্যাগ করে চট্টগ্রামে বসবাস শুরু করেন নির্বাচিত সভাপতি ফয়েজুল কবির। একপর্যায়ে সভাপতির অনুপস্থিতির অজুহাতে কোনো সভা ও রেজুলেশন ছাড়াই পদটি বাগিয়ে নেন তিনি। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দুটি বালু মহালের নিয়ন্ত্রণসহ অসংখ্য অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে ফয়েজ কবির উপজেলা সভাপতি হিসেবে ফেনী জেলা পরিষদে প্রথমে সদস্য ও পরে প্যানেল চেয়ারম্যান পদ পান। তিনি বলেন, আমি পদ থেকে পদত্যাগ করিনি, আবার আমাকে বাদও দেয়া হয়নি। তাহলে কোন ভোজবাজিতে অন্য কেউ এ পদের পরিচয় দিতে পারে- তা আমার বোধগম্য নয়।
(amadershomoy)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন