ট্রেনটির নাম ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ রাখলেন প্রধানমন্ত্রী

বনলতা এক্সপ্রেসের আসন/ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী: রাজশাহী-ঢাকা বিরতিহীন ট্রেন নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ নামই পেতে যাচ্ছে নতুন এই বিরতিহীন ট্রেন। তবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ট্রেনটি পয়লা বৈশাখ থেকে চালু সম্ভব হচ্ছে না।
 
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলের মানুষের উপহারস্বরূপ দেওয়া বিরতিহীন ট্রেনটির নাম চূড়ান্ত করেছেন। এখন কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার অপেক্ষা।
জানতে চাইলে বুধবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা শরিফুল আলম গণমাধ্যমকে একথা জানান। কিন্তু এতে আশাহত হওয়ার কিছু নেই, চলতি মাসেই বহুল প্রত্যাশিত এই বিরতিহীন ট্রেনটি চালু হতে যাচ্ছে।




পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রও বুধবার বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সূত্রটি বলছে, রাজশাহী-ঢাকা বিরতিহীন ওই ট্রেনটি নাম নির্ধারণ হতে চলেছে 'বনলতা এক্সপ্রেস'। এছাড়া ১১ এপ্রিল সকাল থেকে এর আগাম টিকিট ছাড়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আগে ট্রেনটির উদ্বোধনী তারিখ নির্ধারণ করা ছিল ১৪ এপ্রিল। পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ, নববর্ষের দিন দুপুর ১টা ১৫মিনিটে (সম্ভাব্য) ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ট্রেনটি উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে প্রস্তুতির জন্য আরও কিছু সময় প্রয়োজন হওয়ায় তা পিছিয়ে গেছে। রেলওয়ের সূত্রটি বলছে, ওইদিন চালু না হলেও সব প্রস্তুতিই থাকছে। ২০ এপ্রিলের পর যে কোনো একটি দিনে ট্রেনটি উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, রাজশাহী-ঢাকা রুটে উদ্বোধন হতে যাওয়া বিরতিহীন এই ট্রেনটির ছবি এরই মধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে থাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের ফ্যান গ্রুপসহ বিভিন্ন গ্রুপ ও ব্যক্তির নিজস্ব ওয়ালে অত্যাধুনিক এই ট্রেনের ভাইরাল হওয়া ছবিগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে। 
এতে রাজশাহীর ট্রেনযাত্রীদের মধ্যে নতুন করে কৌতূহল এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। ভ্রমণপিয়াসুরা নতুন লাল-সবুজ ট্রেনের বগির ভেতরের ছবিগুলো নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করছেন। যেন অপেক্ষার প্রহর আর কাটছে না। ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোতে নতুন ট্রেনের বগির সিট ক্যাপাসিটি ও বায়োটয়লেটসহ অত্যাধুনিক বিভিন্ন সুবিধার দৃশ্য দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। 



এই প্রথম দেশের আন্তঃনগর কোনো ট্রেনে উড়োজাহাজের মতো বায়োটয়লেট সংযুক্ত হচ্ছে। এ কারণে মলমূত্র আর রেললাইনের ওপরে পড়বে না। স্টেশনে দাঁড়ানো থাকা অবস্থায়ও যাত্রীরা টয়লেট ব্যবহার করতে পারবেন। প্রথমবারের মতো ট্রেনটিতে রিক্লেনার চেয়ার বসানো থাকবে। যেখানে পা এবং হেলান দেওয়ার আরামদায়ক সুবিধা রয়েছে। আর এসি বাথের কেবিনে বেডরেস্ট দেওয়া হবে। যা রাতে বিছিয়ে দিলে ছোট খাটের মতো হয়ে যাবে। এছাড়া কেবিনে ওপরের সিটে ওঠার জন্য স্টিলের মইয়ের বাদলে সিঁড়ি দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, শিগগিরই ট্রেনের সময়সূচি, আগাম টিকিট প্রাপ্তির দিন-ক্ষণসহ সব কিছুই রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হবে। এর সম্ভব্য নামের তালিকা থেকে 'বনলতা এক্সপ্রেস' নামটি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হতে চলেছে। এই নামটি ছিল সম্ভাব্য নামের তালিকার দ্বিতীয় নম্বরে। পরে এটি চূড়ান্ত করা হয়। এছাড়া অন্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হিমসাগর এক্সপ্রেস’। এছাড়া ছিল 'গ্রিনসিটি এক্সপ্রেস' এবং ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস'। খোদ প্রধানমন্ত্রীই ট্রেনটির নাম ঠিক করে দেন।
রাজশাহী-ঢাকাসহ দেশের তিনটি রুটে নতুন ট্রেন চালুর জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে ৫০টি অত্যাধুনিক বগি। এরই মধ্যে ১৫টির বেশি বগি এসে পৌঁছেছে দেশে। রাজশাহী-ঢাকা রুটে নতুন বিরতিহীন ট্রেনে এ বগিগুলো সংযোজন করা হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল ও ৮ এপ্রিল পার্বতীপুর থেকে টাঙ্গাইল (বঙ্গবন্ধু সেতু) পর্যন্ত ট্রায়াল ট্রেন সফলভাবে পরিচালিত হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এপ্রিলের শেষ দিকে উদ্বোধনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে প্রথম বিরতিহীন এই ট্রেন। আর এর মধ্যে দিয়ে রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে। 
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, নতুন ট্রেনের মোট বগির সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ার ৭টি, এসি ২টি, একটি পাওয়ার কার, দু’টি গার্ডব্রেক ও একটি খাওয়ার বগি। ট্রেনটিতে মোট আসন সংখ্যা হবে ৯২৮টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ারের ভাড়া হতে পারে ৩৭৫ টাকা। আর স্নিগ্ধার (এসি চেয়ার) ভাড়া হতে পারে ৭১৯ টাকা। এছাড়া ৮৬৩ টাকায় পাওয়া যেতে পারে এসি কেবিন আর ১ হাজার ২৮৮ টাকায় মিলতে পারে এসি বাথ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলপথ মন্ত্রণালয়ে এ ভাড়া প্রস্তাব করেছে। যা অনুমোদন হতে পারে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান সাংবাদিকদের জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা নতুন অত্যাধুনিক যাত্রীবাহী কোচ দিয়ে ট্রেনটি সপ্তাহে ছয়দিন চলবে। সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে শুক্রবার। সিগন্যাল পাসিং দ্রুত শেষ হলে ঢাকা-রাজশাহী বিরতিহীন ট্রেনটির ভ্রমণ সময় হবে ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা। 
বিরতিহীন এ ট্রেন হবে দেশের সর্বাধুনিক হাইস্পিড কোচের ট্রেন। ঘণ্টায় এর গতি হবে ১৪০ কিলোমিটার; অর্থাৎ প্রতি মিনিটে ট্রেনটি আড়াই কিলোমিটার যাবে। বিদ্যমান ট্রেনগুলোতে এখন ৩৪৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা লাগে। এতে রাজশাহী-ঢাকা ট্রেন ভ্রমণে সময় বাঁচবে আড়াই ঘণ্টা। প্রস্তাবিত সময়সূচি অনুযায়ী, ঢাকা থেকে ট্রেনটি দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে রাজশাহী পৌঁছবে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায়। রাজশাহী থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে বেলা ১১টায়। বিরতিহীন চার্জ হিসেবে বিদ্যমান ভাড়ার সঙ্গে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে ভ্রমণকারীদের।
বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে মোট তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু আছে। এগুলো হলো- পদ্মা, ধূমকেতু ও সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস। শুরুতে এসব ট্রেন যেক’টি স্টেশনে থামতো, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি স্থানে থামছে। বর্তমানে ১৪টি স্টপেজ রয়েছে আন্তঃনগর এই ট্রেনগুলোর। শুরুতে আন্তঃনগর থাকলেও এলাকাভিত্তিক রাজনৈতিক প্রভাবে পরবর্তী সময়ে ট্রেনগুলোকে মাঝপথে স্টপেজ দিতে বাধ্য করা হয়। ফলে শেষ পর্যন্ত এই ট্রেনগুলো এখন অনেকটা লোকাল ট্রেনে পরিণত হয়েছে। আর এতে রাজশাহী-ঢাকা রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর প্রায়ই শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। 
তবে এর বিপরীতে উদ্বোধন হতে যাওয়া ট্রেনটি খুবই আরামদায়ক হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে মহাপরিচালক কাজী রফিকুল আলম। তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রতিটি বগি বর্তমান বগিগুলোর চেয়ে প্রশস্ত। ট্রেনের কারিগরি যন্ত্রাংশগুলো অনেক উন্নতমানের। এখন থেকে যেসব ইঞ্জিন রেলওয়ে বহরে যুক্ত হচ্ছে, তাও অত্যাধুনিক। তাই এটি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হয়ে আসছে রেলযাত্রীদের জন্য।

(banglanews24)
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
এসএস/এএ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Holy Foods ads

Holy Foods ads

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget