চট্টগ্রাম আদালতে ‘মহাজালিয়াতির’ ঘটনায় এবার জালিয়াতকারীর বিরুদ্ধে ‘এ্যাকশনে’ গেলেন খোদ বিচারক। ভুয়া ও জালিয়াতপূর্ণ কাগজপত্র তৈরি, ইচ্ছাকৃত তথ্য গোপন ও ভুল তথ্য প্রদানের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা করার ঘটনায় জালিয়াতকারী মোহাম্মদ মোরশেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেন বিচারক। সিআর মামলা নং ৭৯৫/১৯।
মহানগর হাকিম আবু ছালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে দায়ের করা এ মামলা আমলে নিয়ে মোহাম্মদ মোরশেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিচারক। গত রোববার এ পরোয়ানা জারি করা হয়। মোরশেদ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ওই বিচারক হচ্ছেন, ৪র্থ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ ছামিদুল ইসলাম। এ বিষয়ে উল্লেখিত মহানগর হাকিম আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী এপিপি এডভোকেট মোহাম্মদ ওসমান উদ্দিন বলেন, যে আদালতে জালিয়াতকারী এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটিয়ে আইন আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে আইনের বিধান অনুযায়ী সেই আদালতকেই মামলা দায়ের করতে হয়। এক্ষেত্রে ৪র্থ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলামের আদালতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলেই বিচারক নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
মহানগর হাকিম আবু ছালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে দায়ের করা এ মামলা আমলে নিয়ে মোহাম্মদ মোরশেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিচারক। গত রোববার এ পরোয়ানা জারি করা হয়। মোরশেদ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ওই বিচারক হচ্ছেন, ৪র্থ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ ছামিদুল ইসলাম। এ বিষয়ে উল্লেখিত মহানগর হাকিম আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী এপিপি এডভোকেট মোহাম্মদ ওসমান উদ্দিন বলেন, যে আদালতে জালিয়াতকারী এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটিয়ে আইন আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে আইনের বিধান অনুযায়ী সেই আদালতকেই মামলা দায়ের করতে হয়। এক্ষেত্রে ৪র্থ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলামের আদালতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলেই বিচারক নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মোরশেদের মামলার কথিত আসামি রেজিয়া বেগম এবং তাঁর তিন সন্তান ফারহানা সুলতানা, সাবরিনা সুলতানা ও সৈয়দ আবদুল দাইয়ানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দু‘টি চেক প্রতারণার মামলা ৪র্থ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচার চলে। দুই মামলায় ৩০ লাখ করে মোট ৬০ লাখ টাকা আসামিদের কাছে পাওনার কথা বলেন মোরশেদ। গত বছরের ১৮ অক্টোবর মামলাগুলোর রায় ঘোষণা করেন বিচারক। রায়ে চার কথিত আসামিকেই খালাস দেয়ার আদেশ হয়। একইসাথে মামলার বাদী মোরশেদ ভুয়া ও জালিয়াতপূর্ণ কাগজ সৃষ্টি, ইচ্ছাকৃত তথ্য গোপন ও ভুল তথ্য প্রদান করার মাধ্যমে উল্লেখিত চারজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন বলে রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক। ফলে ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ১৯৩/১৯৬/২০০/২১১/৪৬৭ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন তিনি। এ কারণে উল্লেখিত ধারাগুলোতে মোরশেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত দেন ৪র্থ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলাম।
চারজনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মামলা দু‘টি দায়ের করেছিলেন মোরশেদ। কিন্তু এসব মামলা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না তারা।
দুই মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে ৪র্থ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ উল্লেখ করেছিলেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে পক্ষদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশসহ সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আদালতসমূহকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পক্ষরা নিজেদের দাবীর পক্ষে সাক্ষ্য উপস্থাপন করে দাবী প্রতিষ্ঠিত করবে এটাই আইনের দীর্ঘ প্রচলিত রীতি। এ প্রক্রিয়ায় যদি কোন পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন তথ্য গোপন ও ভুল তথ্য প্রদান করে তবে তা ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ১৯৩/১৯৬/২০০ ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
‘নড়েচড়ে’ বসার মতো এ ধরনের ঘটনায় বিচারকের মামলা দায়ের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনন্য নজির বলেছেন খালাস পাওয়া চারজনের পক্ষে আইনী লড়াইকারী এডভোকেট মোহাম্মদ সাইদুর রহমান সাদেক। কোন অপরাধ না করেও আমার মক্কেলদেরকে এ ধরনের হয়রানির ঘটনা নজিরবিহীন বলেও জানান তিনি।
আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মোরশেদের পক্ষ থেকে ১০টি চেক প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয় শ্রমিক পরিবারের উল্লেখিত চার সদস্যের বিরুদ্ধে। আদালতে তাদেরকে উপস্থাপন করা হয় শিল্পপতি হিসেবে! ১০টি চেকে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা পাওনার কথা বলেন মামলা দায়েরকারী। এর মধ্যে ৮টি মামলায় ওই শ্রমিক পরিবারের চারজনের বিরুদ্ধে সাজাও করিয়ে নিয়েছেন মামলা দায়েরকারী। বাকী ২টি মামলায় ৪র্থ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কথিত আসামিদেরকে খালাস দিয়ে বাদী মোরশেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত দেন। ৮ মামলার সাজা হওয়া পর্যন্ত ভুক্তভোগীরা ঘুনাক্ষরেও জানতে পারেননি মামলার বিষয়ে। তার উপর সাজাপ্রাপ্ত এক নারী আসামিকে পুলিশ ধরে কারাগারে পাঠিয়ে দেয় । গর্ভবতী অবস্থায় আদালত থেকে কারাগারে যাওয়া আসার কারণে এক নারীর পেটের সন্তানও নষ্ট হয়ে যায়। ৮ মামলায় আদালতে রায় ঘোষণার পর ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে আসামির ইপিজেড থানাধীন নিউমুরিং এলাকার বাড়িতে যায়। তখন থেকে চারজনই পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কথিত আসামিরা হলেন, রেজিয়া বেগম এবং তাঁর তিন সন্তান ফারহানা সুলতানা, সাবরিনা সুলতানা ও সৈয়দ আবদুল দাইয়ান। অথচ যাদেরকে শিল্পপতি বানিয়ে এতগুলো মামলা দায়ের করা হল, কোন ব্যাংকে তাদের নামে কোন একাউন্ট নেই। এ ধরনের ঘটনায় তোলপাড় চলছে পুরো আদালত পাড়ায়। শুধু জালিয়াতি নয়, এটাকে ‘মহাজালিয়াতি’ বলছেন আইনজীবীরা।
মোরশেদ বাদশা চেয়ারম্যানঘাটা এলাকার মোহাম্মদ হাকিম শরীফের ছেলে। অবশেষে তিনি আইনের আওতায় এসেছে। উল্লেখিত শ্রমিক পরিবারের পক্ষ থেকে করা মামলায় গত রোববার মোরশেদ মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ ওসমান গনির আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তার জামিনের জন্য কয়েকজন আইনজীবী দাঁড়ান। আদালতের বিচারক মোরশেদের জামিনের আবেদন ফিরিয়ে দেন। মামলায় মোরশেদের সাথে তার সহযোগি হিসেবে ভুজপুর ফটিকছড়ি থানা এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে ওয়াহিদুল আলমও রয়েছে।
এর আগে সংশ্লিষ্ট আদালতের আদেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দীর্ঘ তদন্ত প্রতিবেদনে এ ‘মহাজালিয়াতির’ ঘটনা উদঘাটন করা হয়। ২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর মহানগর হাকিম আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে জালিয়াতির পুরো ঘটনার ‘পর্দা ফাসঁ’ করেছেন পিবিআই এর এসআই মোহাম্মদ জাহেদুজ্জামান চৌধুরী।
(dainikazadi)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন