রাজধানীর ডেমরায় একটি মসজিদ থেকে বস্তাবন্দি শিশু মনির হোসেনের (৮) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার নূর-ই মদিনা মাদরাসার অধ্যক্ষ ও মসজিদুল-ই-আয়েশায় ইমাম আব্দুল জলিল হাদী এবং তার সহযোগী মো. আকরামের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অন্যদিকে ইমামের আরেক সহযোগী আহাম্মদ সফি ওরফে তোহাকে শিশু আইনে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাকে শিশু কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতার তিনজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, মুক্তিপণের টাকা আদায়ের জন্য তারা মনিরকে অপহরণ করেছিল। তবে অপহরণের কিছুক্ষণ পরই গামছা দিয়ে তার মুখ পেঁচানোর কারণে মারা যায় মনির। তার মৃত্যুর পরও তার পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে টাকা দাবি করা হয়।
বুধবার (১০ এপ্রিল) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি ওয়ারী জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘মনির ও তার দুই ভাইবোন ৭ এপ্রিল সকালে মাদরাসায় পড়তে যায়। বেলা ১১টায় মাদরাসা ছুটি হওয়ার পর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অধ্যক্ষ ও তার দুই সহযোগী মনিরকে অপহরণ করে। মাদরাসার পাশের নির্মাণাধীন মসজিদুল-ই-আয়েশায় নিয়ে যায় তাকে। ওই মসজিদের ইমাম আব্দুল জলিল হাদী। সেখানে নেয়ার পর মসজিদের সিঁড়িতে মনির কান্না শুরু করে। তখন অপহরণকারীদের একজন মুখ চেপে ধরে। মুখ চেপে ধরায় মনির আরও জোরে চিৎকার করে। তখন অধ্যক্ষ হাদীর গামছা দিয়ে মনিরের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। একপর্যায়ে মারা গেছে বুঝতে পেরে মনিরকে সিমেন্টের একটি বস্তায় ভরে সিঁড়ির পাশে রেখে দেয়। বস্তায় ঢুকানোর আগে মনিরের হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়।’
তিনি আরও বলেন, মারা গেছে জেনেও পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মনিরের বাবা সাইদুল হকের কাছে রাতে ফোন করে তারা তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মনিরের বাবা এক লাখ টাকা নিয়ে মসজিদে আসে। ছেলে ফিরে পাওয়ার আশায় মসজিদেই অপেক্ষা করে এবং টাকাটা মসজিদের ইমাম হাদীর কাছে রাখে। সারারাত অপেক্ষার পরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে পরদিন টাকা নিয়ে চলে যান তিনি। পরে পুলিশকে নিখোঁজের বিষয়ে জানালে পুলিশ মসজিদ থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি পাতলা তোয়ালে, দুটি সিমেন্টের বস্তা, দুটি কালো রঙের দড়ি, সিমসহ একটি মোবাইল সেট, মরদেহের পরনে থাকা ফুল প্যান্ট ও পাঞ্জাবি উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে ডেমরার ডগাইর নতুনপাড়া এলাকার নূর-ই আয়েশা জামে মসজিদের ভেতর থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় শিশু মনির হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয় শিশু শ্রেণির ছাত্র মনির আগের দিন রোববার (৭ এপ্রিল) থেকে নিখোঁজ ছিল।
এ ঘটনায় ডেমরা থানায় একটি জিডি ও পরবর্তীতে হত্যা মামলা করা হয়।
(jagonews24)
জেএ/জেএইচ/পিআর
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন