সাকিব ইস্যুতে পাপন: যে সিদ্ধান্ত নেবো, তা কারও পছন্দ হবে না
Papun on Shakib issue: No one will like the decision I will take
সাকিব আল হাসান সত্যিকার অর্থেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কিনা, বুঝে উঠতে পারছেন না নাজমুল হাসান। আইপিএলের নিলামে দল পেলে সাকিব এই ধরনের কথা বলতেন কিনা, সেই প্রশ্নও তুলছেন বিসিবি প্রধান। তার মতে, বিভিন্ন সিরিজের আগে সাকিবের খেলা নিয়ে টানাপোড়েনের কারণে ঝামেলায় পড়ছেন কোচ-অধিনায়করা।
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রোববার দুবাই যাওয়ার আগে সাকিব বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় তিনি নেই। এই অবস্থায় ক্রিকেট খেললে দলের জন্য ক্ষতিকর ও দেশের সঙ্গে গাদ্দারি হবে বলেও মনে করেন তিনি।
সাকিবের এই বক্তব্য দেশের ক্রিকেটে নতুন করে আলোচনার ঝড় তোলে। সোমবার নিজ বাসভবনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি সভাপতি প্রশ্ন তোলেন সাকিবের ভাবনা জানানোর প্রক্রিয়া নিয়ে।
“ওর এসব কথাবার্তা নিয়ে আমি মোটেও বিচলিত নই। ওকে হয়তো শারীরিক ও মানসিকভাবে কিছু একটা ডিস্টার্ব করছে। সেটা হতেই পারে। ওর যদি কোনো সমস্যা থাকে, আমাদেরকে বলতে পারে। এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় ফোনে বলে দেওয়া, এটা হয় না।”
“সবার সঙ্গে ওর অ্যাকসেস আছে, জৈব-সুরক্ষা বলয়ও নেই। আমাদের সঙ্গে বসতে পারত সে, খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত। কিন্তু হঠাৎ করে একেকটা চমক দেওয়া, এটা করে কী লাভ হচ্ছে, কেন করছে… তবে অনেকে পছন্দ করে, আমাদের দেশে অনেকে পছন্দ করে।”
মানসিকভাবে সাকিব খেলার মতো অবস্থায় নেই এই কথায় ঠিক আস্থা রাখতে পারছেন না বলেই ফুটে উঠল বিসিবি সভাপতির কথায়।
“মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে আইপিএল খেলতে চাচ্ছিল কেন? মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলে তো বলতো আমি আইপিএলও খেলব না! আমি বুঝতে পারছি না, মেলাতে পারছি না। ধরুন আইপিএলে ওকে নেওয়া হলো, তখন কি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলতো? জিনিসটা আমার মাথায়ই ঢুকছে না।”
আরো পড়ুন:- সাকিব: দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে খেলা সম্ভব নয়
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই সংস্করণেই তাকে পাওয়া যাবে, সাকিবের কাছ থেকে এই নিশ্চয়তা পেয়েই তাকে দলে রাখা হয়। কিন্তু এরপর তার এই টানাপোড়েন। গত ডিসেম্বরে নিউ জিল্যান্ড সফরেও শুরুতে তাকে দলে রাখার পর আবার বাইরে রাখা হয় পারিবারিক কারণে ছুটি নেওয়ায়। গত বছর শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ খেলতে যাননি তিনি আইপিএল খেলার কারণে। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে ক্রিকেট থেকে ৬ মাসের বিরতি চেয়েছিলেন তিনি। সেবার ছুটি দেওয়া হয়েছিল শুধু ওই সফর থেকে।
বিসিবি সভাপতির মতে, সাকিবকে নিয়ে বারবার অনিশ্চয়তার কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে দল সংশ্লিষ্টদের।
“ঝামেলা তো হচ্ছেই। আমাদের (বোর্ডের) কিছু হচ্ছে না, তবে ঝামেলা হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টের, ঝামেলা কোচিং স্টাফদের, ঝামেলা অধিনায়কদের। অধিনায়ক আর কোচ তো জানেই না সাকিবের এই কাহিনী, আমি নিশ্চিত। খালেদ মাহমুদ সুজন এতদিন ওর সঙ্গে ছিল, সাধারণত পরিকল্পনা নিয়ে সাকিবের সঙ্গে আলোচনা করে, সুজনকে জিজ্ঞেস করলেও, সেও জানে না। আকাশ থেকে পড়েছে!”
সাকিব তার মানসিক অবস্থা বোঝাতে বলেছিলেন, সদ্য সমাপ্ত আফগানিস্তান সিরিজের কোনো সংস্করণেই খেলা তিনি উপভোগ করেননি। তার এই কথায় বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন বোর্ড প্রধান।
“যে জিনিসটা আমি কিছুতেই এখন মেনে নিতে পারছি না, ঘটনাটা কী, পৃথিবীর যে কোনো ক্রিকেট খেলোয়াড়ের স্বপ্ন হলো জাতীয় দলে খেলা। যখন দল জেতে, আর সেখানে সে খেলে থাকলে, এর চেয়ে খুশির আর কিছু থাকে না। কিন্তু সাকিব বলছে, আফগানিস্তান সিরিজে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, কোনোটিই উপভোগ করেনি। আমরা যে সিরিজ (ওয়ানডে) জিতলাম, সেটাও উপভোগ করেনি। প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতলাম, তার মানে সেটিও উপভোগ করেনি? কেন!”
সাকিব বা কোনো ক্রিকেটার কোনো সংস্করণে খেলতে না চাইলে বোর্ডের কোনো আপত্তি নেই বলে দাবি নাজমুলের। তার চাওয়া, যোগাযোগ যেন পরিষ্কার থাকে।
“আমি সবাইকে ক্লিয়ার কাট বলে দিয়েছি, ও (সাকিব) যদি কোনো ফরম্যাটে খেলতে না চায়, কোনো অসুবিধা নেই। এরপর কারও কোনো সমস্যা থাকার কথা? এরপর আর এসব করা উচিত নয়। খেলতে না চাইলে খেলবে না, আমি তো মেনে নিয়েছি। কিন্তু সেটা আগেভাগে জানাতে তো হবে।”
বিসিবি প্রধান বললেন, সাকিবকে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আনষ্ঠানিকভাবে জানাতে বলা হয়েছে। এরপর বোর্ড নেবে সিদ্ধান্ত।
“মৌখিকভাবে বলে লাভ নেই, যা-ই করতে চায়, লিখিত দিক। কারণ, আগে বলেছিল খেলবে। এখন বলছে খেলবে না। এজন্যই লিখিত দরকার।”
“আমার ধারণা, ও (সাকিব) মেন্টালি ডিস্টার্বড কোনো কারণে। দুদিন সময় নিয়েছে। মাথা ঠাণ্ডা করে ভাববে। কী চায়, তা আমাদেরকে জানাবে। বোর্ড এরপর সিদ্ধান্ত নেবে।”
আরো পড়ুন:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন