গমের জায়গা নিচ্ছে ভুট্টা ও সরিষা !
Wheat is being replaced by corn and mustard!
গমের সবচেয়ে বেশি আবাদ বা উৎপাদনের কথা উঠলে নাম আসে ঠাকুরগাঁও জেলার। কিন্তু কয়েক মৌসুম ধরে এই জেলার কৃষকেরা যে গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন, তা বোঝা যাচ্ছে আবাদি জমি ও উৎপাদনের পরিমাণ পর্যালোচনা করে। পাঁচ বছর ধরে দুটিই নিম্নমুখী।
জেলায় গত ৫ বছরে গমের আবাদ কমেছে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে। বিপরীতে কৃষকেরা ঝুঁকেছেন ভুট্টা ও সরিষা চাষে। জেলায় ৫ বছরে ভুট্টা চাষ বেড়েছে ১৩ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে।
সে তুলনায় রাণীশংকৈল উপজেলায় গমের চেয়ে বেড়েছে ভুট্টা ও সরিষার চাষ। এ বছর ভুট্টা চাষ বেড়েছে ১০০ হেক্টর ও সরিষা ১৭০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে।
রাণীশংকৈল উপজেলাজুড়ে এক সময় ব্যাপক গমের আবাদ হতো। মাঠ জুড়ে থাকত ফসলটির বিস্তার। সেই গমের চাষের স্থান দখল করেছে ভুট্টা ও সরিষা।
আরো পড়ুন: সন্তানের সামনে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় আদালতে মামলা
গমের চেয়ে কম পরিচর্যা ও কম সেচ খরচে ভালো ফলন হয় এবং দামও ভালো পাওয়া যায় বলে ভুট্টা চাষে কৃষকেরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কয়েক বছর ধরে ভুট্টায় বিঘাপ্রতি খরচের সমান মুনাফা হচ্ছে। এ কারণে ভুট্টার আবাদে ঝুঁকছেন এলাকার কৃষকেরা। এর ফলে উপজেলায় ধারাবাহিকভাবে ভুট্টার উৎপাদন বাড়ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উৎপাদন কম, শ্রমিক সংকট, ভালো বীজের অভাব ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে গম চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকেরা। বিপরীতে ভুট্টা চাষে সেচের খরচ কম ও উৎপাদন বেশি।
কৃষকেরা বলছেন, গমের চেয়ে ভুট্টার ফলন ভালো পাওয়া যায়। এ ছাড়া আবাদে ঝামেলা একটু কম। বিক্রি করা যায় খুব সহজে বলেই তাঁরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। অন্যদিকে সরিষা স্বল্পকালীন সময়ের ফসল, তা তুলে আবার বোরো ধান রোপণ করা যায়। এ কারণেই মানুষ সরিষা চাষেও ঝুঁকছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরে উপজেলায় গমের আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে, ভুট্টা ৫ হাজার হেক্টর এবং সরিষা ৪ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
আরো পড়ুন: তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে গ্যাস বন্ধের হুমকি রাশিয়ার
চলতি বছর উপজেলা গমের চাষ কমে গিয়ে আবাদ হয়েছে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। অপরদিকে ভুট্টার চাষ হয়েছে ৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আর সরিষা বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ১২০ হেক্টর জমি।
হোসেনগাঁও ইউনিয়নের ক্ষুদ্র বাশঁবাড়ী গ্রামের ভুট্টা চাষি কবির হোসেন জানান, যে জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করা কঠিন হয়ে পড়ে, সে জমিতে এখন ভুট্টা লাগিয়ে ঝামেলাবিহীন ফসল হিসেবে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। এ ছাড়াও যে জমিতে বোরো ধান লাগানোর জন্য বীজতলা প্রস্তুত করে এরপর ধান রোপণ করা হয় সেসব জমিতে স্বল্পকালীন ফসল হিসেবে সরিষা লাগিয়েও ভালো টাকা লাভ করছেন কৃষকেরা। সরিষা খেত থেকে তুলে আবার ধানও সময় মতো রোপণ করা যায়।
বাশঁবাড়ী গ্রামের আরেক কৃষক শামীম জানান, সরিষা মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে তুলা যায়। এক বিঘা ফসল ফলাতে সব মিলে সর্বোচ্চ হাজার তিনেক টাকা খরচ হয়। আর বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মণ সরিষা উৎপাদন হয়। যা বাজারে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা বিক্রয় করা যায়। এ ছাড়া সময়মতো বোরো ধানও রোপণ করা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, এই উপজেলায় মোটামুটি সব ফসলেই কম বেশি আবাদ হচ্ছে। তবে লাভজনক ফসলের দিকেই এই অঞ্চলের কৃষকেরা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন