ইউক্রেন যুদ্ধে হলো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার
The use of hypersonic missiles in the Ukraine war
ইউক্রেনে প্রথমবারের মতো অত্যাধুনিক কিনঝাল হাইপারসনিক (শব্দের চেয়েও দ্রুতগতির) ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, গত শুক্রবার ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে একটি অস্ত্রাগার ধ্বংস করতে ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
যুদ্ধে নিখুঁতভাবে আঘাত করতে পারা এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কথা আগে কখনোই স্বীকার করেনি রাশিয়া। এবার সরকারের বরাত দিয়ে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের তথ্য দিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তি।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, পশ্চিম ইউক্রেনে সংঘাত চলাকালে কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যবহার এটাই। এই ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিতে ছুটে গিয়ে লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে।
গতকাল শনিবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, কিনঝাল বিমান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় থাকা দূরপাল্লার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইভানো ফ্র্যাংকিভস্ক অঞ্চলের দেলিয়াতিন গ্রামে হামলা চালানো হয়। এতে ভূগর্ভস্থ অস্ত্রাগারে থাকা ক্ষেপণাস্ত্র ও আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য গোলাবারুদ ধ্বংস হয়ে যায়।
এএফপির প্রতিনিধি এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরো পড়ুন: সন্তানের সামনে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় আদালতে মামলা
রাশিয়া যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তা ইউক্রেনীয় বাহিনীও নিশ্চিত করেছে। জানিয়েছে, তাদের অস্ত্রাগারই রুশ হামলার লক্ষ্য ছিল।
তবে হামলায় ব্যবহৃত রুশ ক্ষেপণাস্ত্রটি ঠিক কী ধরনের, তা ইউক্রেনীয় বাহিনী নিশ্চিত করতে পারেনি। রাশিয়ার হামলা সম্পর্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইগনাত বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে তারা তাদের অস্ত্র হিসেবে সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে। ’
হামলার শিকার দেলিয়াতিন গ্রামটি মনোরম কারপেথিয়ান পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত, যা ইভানো ফ্র্যাংকিভস্ক শহরের বাইরে। ন্যাটোর সদস্য রোমানিয়ার সঙ্গে এই অঞ্চলের ৫০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘একটি আদর্শ অস্ত্র’ আখ্যা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রীয় ভাষণ দেওয়ার সময় পুতিন নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছিলেন।
জেলেনস্কির আলোচনার আহ্বান : কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রের হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রতি শান্তির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দেখা করা, কথা বলার এখনই সময়, এখনই সময় ইউক্রেনের জন্য আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও ন্যায় নিশ্চিত করার। তা না হলে রাশিয়া এমন ক্ষতির মুখে পড়বে যে তা পুষিয়ে নিতে কয়েক প্রজন্ম লেগে যাবে। ’
মারিওপোলের কেন্দ্রে রুশ বাহিনী : বন্দরনগরী মারিওপোলে রুশ সেনাদের অবস্থান শক্তিশালী হওয়ায় আজভ সাগরে ইউক্রেনের প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কিয়েভের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, দখলকারীরা দোনেেস্ক অভিযান এলাকায় আংশিক সফলতা পেয়েছে এবং ইউক্রেন আজভ সাগরে প্রবেশ থেকে সাময়িকভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।
গত শুক্রবার রাশিয়া জানিয়েছিল, তাদের বাহিনী মারিওপোলের চারপাশে অবস্থান জোরদার করে শহরটিতে শত্রুপক্ষকে আরো চাপে ফেলে দিয়েছে।
আজভ সাগরের তীরে কৌশলগতভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মারিওপোলের অবস্থান। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরু করার পর থেকেই শহরটি তাদের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু। এই শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলের সবটাই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।
মারিওপোলের মেয়র ভাদিম বইশেংকো জানিয়েছেন, লড়াই নগরীর কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে গেছে। রুশ বাহিনীর হামলায় নগরীর ৮০ শতাংশের বেশি আবাসিক ভবন হয় ধ্বংস, নয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরো জানান, মারিওপোলের যে থিয়েটারে রুশ বাহিনী বোমাবর্ষণ করেছিল, তার ধ্বংসস্তূপ থেকে বেসামরিক লোকজনকে বের করে আনার কাজ চলছে। কিন্তু রাস্তায় রাস্তায় লড়াইয়ের কারণে উদ্ধারকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।
যুদ্ধ থেকে প্রাণ বাঁচাতে এক হাজারেরও বেশি স্থানীয় বাসিন্দা ওই থিয়েটারে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখান থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত মাত্র ১৩০ জনকে উদ্ধার করা গেছে বলে জানান প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি।
‘বাঘের গলায় ঘণ্টা যে বেঁধেছে, তাকেই খুলতে হবে’ : ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণে ইন্ধন না দিতে চীনকে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর এর জবাবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দোষ দিয়ে যুদ্ধ বন্ধের দায়িত্ব তাদেরই নিতে বলেন।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রায় দুই ঘণ্টা ভিডিও কলে কথা বলেন। এরপর এ সম্পর্কে যার যার কার্যালয় থেকে প্রকাশ করা হয় বিবৃতি।
আরো পড়ুন: তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে গ্যাস বন্ধের হুমকি রাশিয়ার
চিনপিংকে উদ্ধৃত করে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম জানায়, ‘ইউক্রেনের সংকট এমন একটি ঘটনা, যা আমরা দেখতে চাই না। ’ ইউক্রেন সংঘাতের পেছনের কারণগুলো সমাধানে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর আলোচনা করা উচিত বলে চিনপিং মন্তব্য করেছেন। তিনি বাইডেনকে বলেছেন, ‘ইউক্রেনে যে লড়াই চলছে তা কারো উপকারে আসবে না। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক সংঘাতের পর্যায়ে যাওয়া উচিত নয়। ’
চিনপিং আরো বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সঠিক পথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পরিচালিত করা। দুই পক্ষেরই উচিত আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করা। ’
এদিকে হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউক্রেনের শহরগুলোতে বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে বর্বর হামলা চালানোয় রাশিয়াকে যদি চীন সরঞ্জাম দিয়ে সমর্থন জোগায়, তাহলে যে প্রভাব ও পরিণতি হবে তা তুলে ধরেছেন বাইডেন। ’
এর সরাসরি জবাব দেওয়ার পরিবর্তে চিনপিং বলেছেন, ‘বাঘের গলায় ঘণ্টাটা যিনি বেঁধেছেন, খুলতে হবে তাঁকেই। ’ সূত্র : এএফপি, বিবিসি
আরো পড়ুন:
জয়নাল হত্যা মামলার সব আসামি খালাস; পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার নির্দেশ
Russia Ukrain: বাংলাদেশি জাহাজে হামলার জন্য ইউক্রেনকে দুষছে রাশিয়া
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন