সীমানা প্রাচীর ঘেরা বিদ্যালয়ের মাঠে গম চাষ !
Wheat cultivation in school field surrounded by border wall!
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গম চাষ করেছেন সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা। চাষাবাদের কারণে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা ও বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, খেলাধুলা করার জন্য বিদ্যালয়ের পাশে পর্যাপ্ত মাঠ রয়েছে। জমির মালিকানা সম্পর্কিত জটিলতা থাকার কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত বিষয়টি সমাধান করা হবে।
আরো পড়ুন: ইউক্রেনে নাজুক অবস্থায় পড়ে গেছি: প্রতিমন্ত্রী
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,
বিদ্যালয়টির দুটি ভবনের পুরোনো ভবন ঘেঁষা বেশ বড় বড় গমের চারায় পূর্ণ
গমখেত। সীমানা প্রাচীরের ভেতরের মাঠটি দেখলে মনে হবে কোনো আবাদি জমি।
শহীদ মিনারের উত্তর পাশে অল্প জায়গা রাখা হয়েছে শ্রেণিকক্ষে যাতায়াতের জন্য। এই জায়গা দিয়ে কোমলমতী শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করছে। বিদ্যালয়টিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৯২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, মাঠে গমখেত থাকার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বাচ্চাদের খেলাধুলায় বিঘ্ন ঘটছে।
ছবি তোলার সময় হরিণমারী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী ওয়াহেদুজ্জামান এগিয়ে এসে বলেন, ‘যখন মাধ্যমিকে পড়েছি তখন থেকে দেখছি বিদ্যালয়ের মাঠে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এখন কলেজে পড়ছি। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর হলো কিন্তু চাষাবাদ বন্ধ হলো না।’
এক শিক্ষার্থীর বাবা হাসিনুর রহমান জানান, শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি বিদ্যালয়ে যদি বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে তাহলে শিশুরা উৎসাহীত হয়। কিন্তু এখানে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলার মাঠটুকুও নেই। এ কারণে আমার সন্তানসহ এলাকার অনেক শিশুই এখন স্কুলে যেতে চায় না।
জানা গেছে, ১৯৫৪ সালে শিক্ষানুরাগী খোস মোহাম্মদ ও তার তিন ভাই মিলে হরিনমারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২.৩ একর জমি দান করে। তবে সম্প্রতি দাতাদের উত্তরসূরিরা গমের চাষাবাদ করা স্কুল মাঠের অংশটুকু নিজেদের বলে দাবি করেন। তাই জমি দখলে রাখার জন্যেই সেখানে চাষ শুরু করেছেন তারা।
গমচাষি সিরাজুল ইসলাম কথা বলতে রাজি না হলেও তাঁর ছোট ছেলে মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘বর্গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই জমিতে তার বাবা চাষাবাদ করছেন। এক বছর হলো সীমানা প্রাচীর দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। বিদ্যালয়ের মালিকানাধীন জমি নয়। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জমির কাগজপত্র দেখাতে পারলে তাঁরা দখল ছেড়ে দেবেন।’
আরো পড়ুন: পুতিনের বেপরোয়া পদক্ষেপ ইউরোপকে সরাসরি হুমকি দিচ্ছে
ওয়ারিশ হিসেবে চাষাবাদকৃত গমখেতের
৯ শতক জমির মালিক দাবি করে ফয়সাল কবির সৌরভ নামে একজন বলেন, ‘১৯৫৭ সালে আমাদের পূর্ব পুরুষদের দান করা জমি ছাড়াও ১১ শতক জমি বিদ্যালয় এখনো অলিখিতভাবে ভোগদখল করছে। আমাদের দখলে থাকা নয় শতক জমি সিরাজুল ইসলাম বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছেন। প্রধান শিক্ষকের সমঝোতার আশ্বাসের কারণে প্রাচীর নির্মাণকাজে বাধা দেয়নি। আশা করছি সরকারি লোকজন ও প্রধান শিক্ষক দ্রুত জমির ঝামেলাটি নিষ্পত্তি করবেন।’
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য পশ্চিম পাশে অনেক বড় মাঠ রয়েছে। গমখেতের জমির মালিকানা নিয়ে ঝামেলা রয়েছে। চাষাবাদের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলার পরও ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা চলছে। অংশীদারদের নিয়ে বসে শিগগিরই সমস্যার সমাধান করা হবে।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আজমল আজাদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের ভেতর চাষাবাদ করতে দেওয়া যাবে না। কেউ বিষয়টি জানায়নি। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বিষয়টি নজরে আসেনি। দুই দিন আগে জেনেই ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরো পড়ুন:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন