ফরিদপুরে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন
Book fair inaugurated in Faridpur
‘আট আনায় জীবনের আলো কেনা’ প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে ফরিদপুরে শুরু হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থ মেলা।
৭ই মার্চ সোমবার মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি জ্ঞানের আলো ট্রাস্ট'র দূরদর্শী সৃজনীশক্তি ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও জ্ঞানের আলো ট্রাস্ট যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে। জেলা শহরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ শহর শাখার মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
বেলা সাড়ে ১১ টায় মেলাটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জামাল পাশা, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, সিনিয়র সহসভাপতি শামীম হক, ফরিদপুর পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসীম কুমার সাহা। অনুষ্ঠানের গ্রন্থমেলা ও গ্রন্থের তাৎপর্য তুলে ধরেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজভী জামান।
মেলায় মোট স্টলের সংখ্যা অর্ধশত। সকলের জন্য মেলাটি উন্মুক্ত থাকবে। মেলাটি আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
অনুষ্ঠানে জ্ঞানের আলো ট্রাস্ট'র স্বপ্নদ্রষ্টা জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশপাশি খেলাধুলাসহ এক্সট্রা কারিকুলামে দক্ষ হতে হবে। মেধাবীদেরকে ভবিষ্যত নেতা হিসেবে তৈরী করতে হবে। এজন্য গঠনমূলক গ্রন্থের কোন বিকল্প নেই। এলক্ষ্য বাস্তবায়নে গ্রন্থমেলা ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। তিনি গ্রন্থ মেলার মালিকানা সম্পর্কে বলেন, এ মেলাটির মালিক এ জেলার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। প্রতিমাসে তাদের সঞ্চয় করা আট আনা (পঞ্চাশ পয়সা) ই এমেলাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জ্ঞান পিপাসু মানুষের আকাঙ্খার বাস্তব রূপায়নের লক্ষ্যে প্রতিবছর এই গ্রন্থ মেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে মেলা থেকে জানানো হয়।
জ্ঞানের আলো ট্রাস্ট কি?
সংস্কৃতির পরিপূর্ণ বিকাশের উজ্জ্বল ক্ষেত্র গ্রন্থমেলা সভ্যতার অগ্রযাত্রায় অন্যতম শক্তিশালী সোপান। শিক্ষার প্রতি ফরিদপুরবাসীর অনুরাগ সুবিদিত। মাতৃভাষার জন্য পরম আত্মত্যাগ ও মমত্ববোধ বাঙালী জাতিকে দিয়েছে অমিত সাহস,অশুভকে পরাভূত করার দুর্জয় প্রত্যয়। এই চেতনাকে ধারণ করে ফরিদপুরকে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করার মানসে ২০২০ সালে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের প্রাক প্রস্ততিমূলক সভায় ফরিদপুর জেলায় প্রথম বারের মত সকলের সংশ্লিষ্ঠতার মাধ্যমে গ্রন্থ মেলা আয়োজনের প্রস্তাবনা উত্থাপন করলে সভায় উপস্থিত ফরিদপুর জেলায় সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষকমন্ডলী, সাংবাদিক সহ সকলে এ প্রস্তাবে স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং গ্রন্থমেলার সফল বাস্তবায়নে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।
ফলশ্রুতিতে ২০২০ সালে ১৪-২১ ফেব্রুয়ারি “আট আনায় জীবনের আলো কেনা” থিমের উপর ভিত্তি করে আড়ম্বরপূর্ন পরিবেশে ফরিদপুরের সর্বস্তরের মানুষ বিশেষত শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ঠতায় বৃহৎ কলেবরে “প্রথম গ্রন্থ মেলা” উদযাপিত হয়। এই মেলা জনমনে এক নব উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। দাবি ওঠে মেলার অমরত্বের জন্য। জ্ঞান পিপাসু মানুষের আকাঙ্খার বাস্তব রূপায়নের লক্ষ্যে প্রতিবছর অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এই গ্রন্থ মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
প্রতিবছর নিয়মিত গ্রন্থমেলা আয়োজন করার জন্য ফরিদপুর জেলাধীন প্রতি শিক্ষার্থীর নিকট হতে স্বেচ্ছায় “আট আনা (পঞ্চাশ পয়সা)” করে সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর উদ্দেশ্য মেলার মালিকানাসত্ত্ব শিক্ষাথীদের হাতে তুলে দিয়ে এই মেলাকে শিক্ষার্থীদের প্রাণের মেলায় পরিনত করা এবং শিক্ষার্থী ও গ্রন্থমেলার মধ্যে নিবিড় বন্ধন তৈরী করা যাতে করে জ্ঞান পিপাসু শিক্ষার্থীরা বই পড়ার মধ্য দিয়ে তাদের অন্তরের দিব্য নয়ন বিকশিত করতে পারে।
এই প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানিক রূপায়ন এবং শিক্ষার্থীদের নিকট হতে সংগৃহীত অর্থের সদ্ব্যব্যবহারের লক্ষে শিক্ষার্থী ও জ্ঞান পিপাসু সন্মানিত নাগরিকদের নিকট হতে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে একটি ট্রাস্ট গঠেনর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এই ট্রাস্টের নামকরণ করা হয় ফরিদপুর জ্ঞানের আলো ট্রাস্ট। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট হতে “আট আনা (পঞ্চাশ পয়সা)” যা বছরে ০৬ টাকা হয় তার মধ্যে ০৫ টাকা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জ্ঞানের আলো ট্রাস্ট এর ব্যাংক একাউন্টে এবং অবশিষ্ট ০১ টাকা ব্যবস্থাপনা খরচ বাবদ স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঞ্চিত থাকবে। এর বিনিময়ে গ্রন্থমেলার স্বত্ত্ব শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। শিক্ষার্থী ব্যতীত আগ্রহী যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই জ্ঞানের আলো ট্রাস্টে তাদের অনুদান প্রদান করতে পারবেন।
উল্লেখ্য , এই ট্রাস্টের অনুরুপ একটি ট্রাস্ট সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় বিদ্যমান রয়েছে। বর্তমান জেলা প্রশাসক অতুল সরকার যখন উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন তখন (২০০৯-২০১৩) উল্লাপাড়ার জ্ঞানের আলো ট্রাস্ট ও “আট আনায় জীনের আলো কেনা’’ প্রতিপাদ্যর মধ্যে দিয়ে গ্রস্থমেলা ও ট্রাস্টের কার্যক্রমের সূচনা ঘটে যা অদ্যবদি অব্যাহত রয়েছে। জ্ঞানের আলো ট্রাস্ট এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ফরিদপুর জেলায় প্রতিবছর গ্রন্থমেলার আয়োজন করা এবং শিক্ষার্থীদের অনুদানের আট আনা নির্বাহের পর গ্রন্থমেলার খরচ ফরিদপুর জেলার সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্য হতে প্রতিবছর শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষককে “ফরিদপুর গ্রন্থ মেলা পদক” এবং বিভিন্ন স্তরের ১০০ জন মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীকে এক বছর মেয়াদি “শিক্ষা বৃত্তি” প্রদান করা। ট্রাস্টের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি সাপেক্ষে বৃত্তি প্রদানের সংখ্যা ও অর্থের পরিমান বৃদ্ধি করা যাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন