করাচি মহাকাব্যে পাকিস্তানের নায়ক বাবর, শফিক, রিজওয়ান
Pakistani heroes Babar, Shafiq, Rizwan in Karachi epic
দুই স্লিপ, প্রায় শর্ট গালির সঙ্গে সিলি মিড-অফ, শর্ট লেগ, লেগ স্লিপ, শর্ট এক্সট্রা কাভার, শর্ট মিড-অন নিয়ে শেষ ওভারটা করতে এলেন লেগ স্পিনার মিচেল সোয়েপসন। তবে টলাতে পারলেন না রিজওয়ানকে। ২ বল বাকি থাকতে ড্র মেনে নিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ বিকেলের আলোয় করাচি সাক্ষী হলো অন্যতম সেরা এক টেস্টের, যেটিতে মিশে থাকল বাবর আজমের স্মরণীয় ইনিংস, আব্দুল্লাহ শফিকের সঙ্গে তাঁর মহাকাব্যিক জুটি আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাল না ছাড়ার গল্প।
১৭২ ওভার ব্যাটিং অথবা ৫০৬ রান—করাচিতে ড্র বা জয়ের যে কোনোটি করতে হলেই বিশ্বরেকর্ড করতে হতো পাকিস্তানকে। চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রানতাড়ার রেকর্ডটা ৪১৮ রানের। ‘টাইমলেস’ টেস্ট বাদ দিলে এর আগে কখনো চতুর্থ ইনিংসে এতো ওভার ব্যাটিং করে বাঁচায়নি টেস্ট। করাচিতে পাকিস্তান চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা দেখিয়ে করল ড্র। তবে রাওয়ালপিন্ডির ড্র আর এ ড্রয়ের মধ্যে পার্থক্যটা যে ওই ১৭১.৪ ওভার ব্যাটিংয়ের মতোই বিশাল!
আরো পড়ুন: তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে গ্যাস বন্ধের হুমকি রাশিয়ার
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটা শেষ দিনে এসে রঙ বদলেছে বারবার। অস্ট্রেলিয়ার শেষবারের মতো ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা হয়েছিল বাবরের উইকেট দিয়ে। ৫০০ মিনিটের ওপর ব্যাটিং করে, ৪২৫ বলে ১৯৬ রান করে লায়নকে আগ বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাডে ক্যাচ তোলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক পাওয়া হয়নি, ম্যাচ ড্র করা থেকেও পাকিস্তান তখন দাঁড়িয়ে ১২.২ ওভার দূরে। এমন ইনিংসের পরও তাই হতাশই দেখাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার অভিনন্দনের মধ্য দিয়ে ফেরা বাবরকে। তখনো অবশ্য পাকিস্তানের হাতে ৫ উইকেট।
রোমাঞ্চ বাড়ে বাবরের আউটের ঠিক পরের বলেই ফাহিম আশরাফ স্লিপে ক্যাচ দিলে। হুট করেই ম্যাচ ঝুঁকে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। সেটিকে নিজেদের করে নিতে এর পরের ওভারেই তৃতীয় নতুন বলটা নিয়ে নেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক কামিন্স। রিজওয়ান প্রতি-আক্রমণের চেষ্টা করেছিলেন, তবে লায়নের বলে সাজিদ ফিরলে আবারও ঢুকতে হয় খোলসে। আট ওভার বাকি, হাতে তিন উইকেট! পাকিস্তানের সমর্থকদের স্নায়ুর চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া ৪৮টি বল বিপদহীন পার করিয়ে পাকিস্তানকে শেষ পর্যন্ত ড্র এনে দিলেন রিজওয়ান।
দিনের প্রথম ভাগে অবশ্য ম্যাচটার এমন রোমাঞ্চ ছড়ানোর গল্প লিখতে হবে, এমনটা মনে হয়নি। অস্ট্রেলিয়া দিনের প্রথম উল্লাসটা করতে পেরেছিল মধ্যাহ্নবিরতির আগ দিয়ে। অবশেষে ভাঙে বাবর ও শফিকের মহাকাব্যিক জুটি। আগের দিন ২০ রানে ব্যাটিং করা শফিকের সহজতম ক্যাচ স্লিপে ছেড়েছিলেন স্টিভ স্মিথ, আজ তাঁর হাতেই ধরা পড়েছেন আগের ম্যাচে শতক করা শফিক। ৪ রানের জন্য টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শতক পাননি।
আরো পড়ুন: সন্তানের সামনে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় আদালতে মামলা
তবে এর আগেই বাবরের সঙ্গে রেকর্ড জুটি গড়ে ফেলেছেন। আগেরদিন দুজনের জুটি শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের ২১ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর। আজ অবিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে দুজন মিলে খেলেছেন ৫২০ বল। টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে কোনো জুটি এর আগে এত বল খেলেনি। আগের রেকর্ডটি ছিল ভারতের দীপ দাসগুপ্ত ও রাহুল দ্রাবিড়ের, ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় উইকেটে দুজন খেলেছিলেন ৫০০ বল। আজ শফিক নিজে ক্রিজে ছিলেন ৪৬৫ মিনিট।
প্রথম ইনিংসে প্রথম বলেই আউট হয়ে যাওয়া ফাওয়াদ আলম আজ রানের কলাম পূর্ণ করেছেন ঠিকই, তবে তাঁকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি প্যাট কামিন্স। বিরতির পরের ৮ ওভারে ২১ রান তুলেছিল পাকিস্তান, এরপরই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফাওয়াদকে ফেরান কামিন্স। সে উইকেটের পরই হয়তো আক্রমণের ভাবনা থেকে সরে আসে পাকিস্তান।
সে সেশনে বাবর ও মোহাম্মদ রিজওয়ান মনোযোগ দেন সময় কাটানোর দিকেই। হাল ছাড়েনি অস্ট্রেলিয়াও। তবে কাছাকাছি গিয়েও সাফল্য পায়নি তারা। প্রায় নিখুঁত ব্যাটিং করে আসা বাবরকে চা-বিরতির আগে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেন দুই স্পিনার নাথান লায়ন ও মিচেল সোয়েপসন। ১৫৭ রানে ব্যাটিং করার সময় লায়নের বলে প্রায় এলবিডব্লু হয়েছিলেন বাবর, ডিআরএসে আম্পায়ারস কল আসায় বেঁচে যান। এরপর সোয়েপসনের পরপর দুই বলে বাবরের ক্যাচ ক্লোজ-ইনে ফেলেন ট্রাভিস হেড ও মারনাস লাবুশেন। রিজওয়ানের উইকেটও পেতে পারতেন সোয়েপসন, এবার ক্রিজের তিন মিটারের বেশি দূরত্বে থাকায় আম্পায়ারস কল হয় ইমপ্যাক্টে।
সে রিজওয়ানকে শেষ পর্যন্ত টলাতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। করাচি দেখল পাকিস্তানের মহাকাব্যিক ব্যাটিং প্রদর্শনী, যাতে বাবর-শফিকের পর অবদান থাকল রিজওয়ানেরও।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন