জানা গেছে, বালিয়াডাঙ্গীতে কৃষি কাজে ব্যবহৃত ৫৩৬টি সেচ রয়েছে। এর মধ্যে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় ১৮৯ টি। বাকি ৩৪৭টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ব্যক্তি মালিকানাধীন।
সেচের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ফলে বোরো চাষে সেচ প্রদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে চুরি বন্ধ না হলে বোরো চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।
বালিয়াডাঙ্গী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম কামরুল হাসান জানান, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে উপজেলার ১৩টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে আর ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ৪টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখের পর টানা তিন দিন ৩ টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এই চুরি অব্যাহত থাকলে বোরো চাষি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও সরকারকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
কামরুল আরও বলেন, ‘চুরি হওয়া ৫ কেভি ট্রান্সফরমার প্রতিটির মূল্য প্রায় ৪৩ হাজার টাকা। সমিতির নিয়ম অনুযায়ী ট্রান্সফরমার চুরি হলে সেচের মালিককে পুরো টাকা পরিশোধ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাছ থেকে পুনরায় ট্রান্সফরমার সংগ্রহ করতে হবে। এদিকে ট্রান্সফরমার পুনরায় স্থাপন কাজে সময় ব্যয় হওয়ার কারণে বোরো খেত শুকিয়ে নষ্ট হতেও পারে।’
এদিকে চুরির ঘটনা নিয়ে বিব্রত বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, এক বছরে ৫টি ও চলতি মাসের ফেব্রুয়ারিতে ২টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। তবে এসব ট্রান্সফরমার স্থাপনে অর্ধেক খরচ ব্যয় করেছে সরকার। কৃষকেরা চাইলে অর্ধেক খরচ ব্যয় বহনে কিস্তির সুবিধাও নিতে পারবেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, ‘সেচকাজে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমার চুরি বন্ধ করা না গেলে বোরো চাষিদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পাশাপাশি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে। আমি আগামী আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করব।’
বালিয়াডাঙ্গী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জোনাল ম্যানেজার আহসান হাবীব বলেন, ‘ট্রান্সফরমার চুরি বন্ধে আমরা স্থানীয় হাট-বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং সাধারণ মানুষকে সচেতন করছি। ট্রান্সফরমার চুরির সঙ্গে জড়িত চক্রকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণাও করা হয়েছে।’
ক্রেতাদের অভিযোগ, মোটা চাল থেকে শুরু করে বাজারে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দরই বাড়তির দিকে। আর সবজির বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না।
সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদফা বন্যার কারণে এ বছর মৌসুমি সবজির ফলন ভালো হয়নি। এ কারণে আড়তে সবজি আসছে কম। ফলে দামও বেশি।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে চরম সংকটে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। দ্রব্যমূল্যের ক্রম ঊর্ধ্বগতিকে কেউ কেউ দাবানলের সঙ্গে তুলনা করছেন। আগে যেখানে প্রচলিত বাক্য ছিল ‘নিত্যপণ্যের বাজারে আগুণ’। চাল-ডাল-তেল থেকে শুরু করে অতি প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দামের একই অবস্থা। নিত্যপণ্যের দামের এমন ঊর্ধ্বগতিতে প্রবণতার জন্য করোনা মহামারিতে উৎপাদন কমে যাওয়া, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা, অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতা ও সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। আবার কেউ কেউ অভ্যন্তরীণ বাজারের সুশাসনের অভাবকেও দায়ী করছেন।
সরেজমিনে উপজেলার শিবদীঘি, নেকমরদ, কাতিহারসহ একাধিক সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে আলু, টমেটো, গোল বেগুন, লম্বা বেগুন, করলা, পটল, লাউ, মটরশুঁটি, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, পাতাকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙ্গা, কচুর লতি, পালংশাক, লালশাক, পুঁইশাক, লাউয়ের ডগাসহ বিভিন্ন প্রকারের শাক পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারে কাঁচামরিচ ৬০-৮০টাকা, আলু ২০-২৫ টাকা, টমেটো ৪৫ টাকা, গোল বেগুন ৪০টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৪৫-৫০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৫০- ৬৫ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। এক হালি লেবু এবং ৪০ টাকা। দাম বেড়েছে সয়াবিন তেল, খোলা লবণ, গোখাদ্য, ও মাছের।
পাতাকপির দাম স্থিতিশীল থাকলেও গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়েছে ফুলকপি ও ব্রোকলির। পাতাকপি আগের মতোই ৩০-৪০ টাকা পিস বিক্রি হলেও ফুলকপি ও ব্রোকলি ৫০-৫৫ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।আকারভেদে প্রতি পিস লাউ ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত দাম চাইছেন বিক্রেতারা।
ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, কোয়েল পাখি পিসপ্রতি ২৫ থেকে ৫০ টাকা, লেয়ার মুগরি পিসপ্রতি ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং মুরগির ডিম হালিপ্রতি ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা দরে মিলছে। অবশ্য দেশি মুরগির ডিম কিনতে প্রতি হালিতে খরচ করতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর হাসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা হালি।
এদিকে লাউশাক, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাক, পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা আঁটি দরে। মসলার মধ্যে পেঁয়াজ ৪০-৫০ টাকা, রসুন ১৩০-১৪০ টাকা, দেশি আদা ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নেকমরদ বাজারে নিত্যপণ্য এবং সবজি কিনতে আসা লুতফর রহমান বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি।
এ কারণে বাজারের হিসেবে টান পড়েছে। কোনোরকমে বাজার করে মাস চালাতে হবে।
শ্রমজীবী নাসিম জানান, তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। এখন কাজ তেমন নেই। তাই আয়ও কম। কিন্তু বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি। বিশেষ করে চাল ডাল ও তৈলের দাম বাড়ায় কষ্ট বেশি হচ্ছে তার। কারণ চাল কিনতে পারলে কোনোরকমে ডাল-ভাত খেয়ে দিন কাটানো যায়। দাম বাড়ার কারণে তিনি বিপাকে পড়েছেন।
রাণীশংকৈল উপজেলার সবকটি বাজারেও নিত্যপণ্যের দর বেড়েছে। প্রশাসন বলছে, বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রিকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাৎক্ষণিক দণ্ড দেওয়া হচ্ছে। আর তা অব্যাহত থাকবে
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল শিবদীঘি নেকমরদ বাজারসহ আশপাশের বাজারে এমন দৃশ্য কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে। এতে গমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় গমের আবাদ এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। এখন খেত থেকে বাড়ন্ত গমের চারা কেটে বিক্রি করা হলে উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও গমের শিষ সবেমাত্র বের হয়েছে, আবার কোথাও শিষ বের হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। উপজেলার কুমোরগঞ্জ, ভবানন্দপুর, ধর্মগড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে কৃষক সেই বাড়ন্ত গমের চারা কাস্তে দিয়ে গোড়া থেকে কেটে বাঁধছেন আঁটি। তা শিবদীঘি ও নেকমরদ বাজারে বিক্রি করছেন ১০ থেকে ২০ টাকা আঁটি করে।
গমচাষিরা বলেন, গম চাষে প্রতি বিঘা জমি তৈরি, চারা রোপণ, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ খরচ, শ্রমিকের মজুরি, গম কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। আর বিঘাপ্রতি গমের ফলন হয় ৯ থেকে ১০ মণ। সেই গম বিক্রি করে বিঘায় ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। কিন্তু তাতে তেমন কোনো লাভ থাকে না। কিন্তু বর্তমানে বাজারে গবাদিপশুর খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে, পাশাপাশি প্রয়োজনের তুলনায় সবুজ ঘাসের সরবরাহও কম। এ সুযোগে গমের চারা ঘাস হিসেবে বিক্রি করে নগদ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। সার্বিক বিচারে এখান থেকে তুলনামূলক লাভ বেশি থাকছে বলে জানান তাঁরা। এ ছাড়া এখন গম তুলে নিলে জমিতে বোরো লাগানো সম্ভব। ধানের ভালো দাম থাকায় এতে করে দুদিক থেকেই লাভবান হওয়া যাবে।
গবাদিপশুর গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় ও চারণভূমির সংকটের কারণে বাজারে কাঁচা গম গাছের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ছাগল ও গরুর জন্য কাঁচা ঘাস হিসেবে কিনে খাওয়াচ্ছেন খামারিরা। বিক্রেতারা বলছেন ১০০ আঁটি বাজারে তুলতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে নিমেষেই। চাষিদের পাশাপাশি পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতাও দেখা গেছে কাঁচা গমের গাছ বিক্রি করতে।
একটি নছিমনে ১০০ আঁটি কাঁচা গমের গাছ বিক্রি করতে নিয়ে আসেন ধর্মগড় গ্রামের নওশাদ আলী। তিনি বলেন, নেকমরদ এলাকার এক গম চাষির দুই বিঘা কাঁচা গমের খেত তিনি কিনেছেন ২৬ হাজার টাকা দিয়ে। ১ টাকা দরে প্রতি আঁটি মজুরি দিয়ে প্রতিদিন শ্রমিকদের কাছে প্রতিদিন ১ হাজার আঁটি কেটে বাজারে বিক্রি করেন তিনি। দুই বিঘা জমিতে ৪ হাজার ২০০ আঁটি হবে। যার বাজার মূল্য ৪২ হাজার টাকা। শ্রমিকদের মজুরি দিয়েও তাঁর লাভ হবে ৮ হাজার টাকা।
কাঁচা গমের আঁটি কিনতে এসেছিলেন রাতোর গ্রামের শামসুল আলম। তিনি বলেন, বাড়িতে তিনি ছয়টি ছাগল পালন করেন। আগে এলাকায় সেগুলো নিজেরা চড়ে খেত। এখন সব খেতেই ফসল থাকায় ছাগলগুলো চড়ে খেতে পারে না। তাই গমগাছ কিনতে এসেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে গমের আবাদ হয় ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, কিন্তু চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৩০০ হেক্টরে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে এমনিতেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আবাদ করা হচ্ছে। এর ওপর যদি কাঁচা অবস্থাতেই কেটে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে গম উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে।
কৃষকেরা কাঁচা গমের গাছ কেটে বিক্রি যেন না করে এই জন্য তাঁদের উৎসাহ দেওয়া হবে।’ মাঠ পর্যায়ে সকলের সঙ্গে এ বিষয় কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মনজুরুল আলম জানান, জীবন রক্ষাকারী পণ্য ঔষুধ। অনেক অজানা সাধারণ মানুষ কোন কিছু না দেখে ঔষুধ ক্রয় করেন, এই সুযোগে অসাধু ফার্মেসী ব্যবসায়ীরা মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি করছে পাশাপাশি যে সমস্ত ঔষুধ নমুনা হিসাবে ডাক্তারদের দেন যা বিক্রয়ের জন্য নয় সেই সমস্ত ঔষুধও বিক্রি করছেন। এমন খবরের ভিত্তিতে উপজেলা সদরের সাদেক মেডিক্যাল স্টোর, মাসুদ ফার্মেসী, জাহানারা ফার্মেসীসহ ৬টি ঔষুধের দোকানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ঔষুধ নিরাপত্তায় এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। 0
ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ভালসিলকিভে ওই তেলের ডিপোটির অবস্থান। স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে সেখানে মিসাইল হামলা চালায় রাশিয়া। খবর আনাদোলুর।
ভালসিলকিভ শহরটি রাজধানীর কিয়েভের খুব কাছে অবস্থিত। শনিবার ভোর থেকেই কিয়েভের চারদিক ঘিরে ফেলে রুশ বাহিনী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল এক ভিডিওতে দেখা যায়, ভালসিলকিভে মেয়র নাটালিয়া বালাসিনোভিচ তেলের ডিপোতে হামলার পর সবাইকে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মিসাইল হামলার পর বিকট শব্দে আগুন ধরে যায় তেলের ডিপোতে। এর পর এ আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
রাজধানী কিয়েভ থেকে ভালসিলকিভ শহরটির দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার।
এদিকে রুশ সেনাদের এ আগ্রাসন ঠেকাতে এবার ইউক্রেনের নারীরা নিজেদের রক্ষা করতে বিশেষ কৌশল নিয়েছেন।
মরোটভ ককটেল (পেট্রল বোমা) বানাচ্ছেন। শহরটিতে রাশিয়ান সৈন্যদের আগ্রাসন রুখে দিতে এবং রাস্তায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেট্রল বোমা বানাচ্ছেন তারা।
ইউক্রেনের ওই শহরটির নাম ডিনিপ্রো। জড়ো হয়ে ঘাসের ওপর বাড়িতে বসে নারীরা পেট্রল বোমা বানাচ্ছেন। তাদের মধ্যে শিক্ষক, আইনজীবী ও গৃহিণী রয়েছেন। তারা কাচের বোতল, ন্যাকড়া ও জ্বালানি তেল নিয়ে বসেছেন।
তারা বলছিলেন, তারা আসলে কী করছে সে ব্যাপারে খুব গভীরভাবে ভাবছেন না। কারণ এক নারী বলেছেন, এটি খুবই ভয়ঙ্কর।
তারা জানিয়েছেন, তারা যে কোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে চান। এই শহরটিতে এখনো আক্রমণ চালানো হয়নি। কিন্তু এটি ইতোমধ্যে যুদ্ধের মূল্য বুঝতে পারছে। শহরটির ৪০০ শয্যার সামরিক হাসপাতালের সব শয্যাই পুরো উত্তর ইউক্রেন থেকে আসা আহত সৈনিকে পরিপূর্ণ।
সামরিক অভিযানের চতুর্থ দিনে খারকিভ এবং ইউক্রেনের রাজধানী কিভে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে রুশ সেনাকে। এই দুই জায়গায় জোর লড়াই চলছে দু’পক্ষের সেনার মধ্যে। একের পর এক রকেট হামলা চালিয়ে খারকিভে গ্যাস পাইপলাইন উড়িয়ে দিয়েছে রুশ সেনা। অন্য দিকে, কিভে তেল ভান্ডারেও বিস্ফোরণ ঘটানোর খবর পাওয়া গিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে।
ইতিমধ্যেই রাশিয়ার উপর আর্থিক প্রতিবন্ধকতা জারি করেছে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেন। রাশিয়ার ব্যাঙ্কগুলিকে আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার জোর প্রস্তুতি চলছে। গত কয়েক দিন ধরে পশ্চিমের দেশগুলি রাশিয়াকে নানা ভাবে হুঁশিয়ারি দিচ্ছিল, সামরিক অভিযান বন্ধ না করলে তার মাশুল গুনতে হবে। এ বার আর হুঁশিয়ারি নয়, রাশিয়াকে আর্থিক দিক থেকে পঙ্গু করে দেওয়ার কাজ শুরু করে দিল পশ্চিমের দেশগুলি।
শনিবারই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল মাকরঁ, তুরক্সের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। তাঁদের কাছে সহযোগিতার আর্জি জানিয়েছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোকে ফোন করে সে দেশ থেকে রুশ সেনা সরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর দেশের স্টেট ডিপার্টমেন্টকে নির্দেশ দিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতে হবে। জার্মানি এবং ফ্রান্সও অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করা শুরু করেছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে রবিবার জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডেকেছে। রাশিয়ার আগ্রাসনী নীতি এবং সামরিক অভিযান নিয়ে সোমবার সদস্য দেশিগুলির মধ্যে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মেলিটোপল শহরটি মূলত একটি মধ্য আকারের শহর। যা ইউক্রেনের অন্যতম মোরিউপুল বন্দরের নিকট অবস্থিত।
এদিকে, ইউক্রেনে সংঘাতের সময় রুশ বাহিনীর অন্তত সাড়ে তিন হাজার সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী।
বিবিসি জানায়, রুশ আগ্রাসঙ্গে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০০ রাশিয়ান সেনা নিহত হয়েছে এবং ২০০ বন্দি পালিয়েছে। ইউক্রেনের প্রতিরোধে ১৪টি বিমান, ৮টি হেলিকপ্টার ও ১০২টি ট্যাঙ্ক হারিয়েছে রুশ বাহিনী।
তবে, রাশিয়া এসবের কোনোটিই এখন পর্যন্ত স্বীকার করেনি।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চল থেকে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হচ্ছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছাড়াও, ইউক্রেনের বেশকিছু স্থানে এয়ার স্ট্রাইক করা হচ্ছে। যা গত কয়েকদিনের নির্মমতা থেকেও বেশি বলে দাবি করছে বিবিসি।
রাজধানী কিয়েভের একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলা করেছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেন সেনাবাহিনী জানায়, কিয়েভ সামরিক ঘাঁটিতে রাশিয়ার সৈন্যরা হামলা চালিয়েছে। তবে ইউক্রেন সে হামলা প্রতিহত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ইন্টারফ্যাক্স ইউক্রেন বার্তা সংস্থা বলেছে যে রাশিয়ান সৈন্যরা শহরের একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কিয়েভ শহরের কেন্দ্র থেকে কিছুটা দুরে ঘন ঘন বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তবে কোথায় বিস্ফোরণ ঘটছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে কিয়েভ সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শহরের বিভিন্ন রাস্তায় লড়াই চলছে।
লড়াইয়ের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মাইহাইলো পোডোলিয়াক। তিনি বলেন, রুশ সেনারা কিয়েভে সর্বোচ্চ পরিমাণ অস্ত্র নিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়েছেন।
তবে কিয়েভের উপকণ্ঠের বর্তমান পরিস্থিতি তাদের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
ইউক্রেনের টেলিভিশনে এক বার্তায় তিনি বলেন, শত্রুরা একাধিক জায়গায় আক্রমণ করেছে। তবে পুলিশ ও আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে শুক্রবার রাতে কিয়েভে প্রেসিডেন্ট ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজের মোবাইলে ভিডিওবার্তা দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি বলেন, আমরা সবাই এখানে। আমাদের সামরিক বাহিনী এখানে, সমাজের নাগরিকরা এখানে। আমরা সবাই দেশ ও স্বাধীনতাকে রক্ষা করছি এবং এভাবেই লড়াই করব।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়। খবর আল জাজিরার।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ বলেন, ১৪টি সামরিক বিমানঘাঁটি, ১৯টি কমান্ড পোস্ট, ২৪টি এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ৪৮টি রাডার স্টেশন ধ্বংস করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের ৮টি নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলে ‘সামরিক অভিযানের’ ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকে ভয়াবহ সংঘাত চলছে।
ইউক্রেন সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজে এক পোস্টে দাবি করা হয়, আক্রমণে জড়িত রাশিয়ার তিন হাজার ৫০০ সেনা নিহত হয়েছে এবং দুইশ সেনা সদস্যকে বন্দি করা হয়েছে।
তাই একাই রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন সেনারা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ আগ্রাসনের তৃতীয় দিন শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামলা শুরুর পর থেকে ৩ হাজার ৫০০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে। তাদের মরদেহ সরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রসকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে এই আহ্বান জানান ইউক্রেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেসচুক। তিনি বলেন, দখলদারদের হাজার হাজার মরদেহ ইউক্রেনে পড়ে আছে। মানবিক কারণে তাদের মরদেহ সরিয়ে নিতে হবে। তাই মরদেহগুলো রুশ ফেডারেশনে পৌঁছে দিতে রেড ক্রসের সহায়তা দরকার।
ইউক্রেন সেনাবাহিনী ফেসবুক পোস্টে জানায়, এ পর্যন্ত হামলায় জড়িত সাড়ে তিন হাজার রুশ সেনাকে হত্যা করা হয়েছে। বন্দি করা হয়েছে আরও ২০০ সেনা সদস্যকে। একই সঙ্গে রাশিয়ার ১৪টি যুদ্ধবিমান, ৮টি হেলিকপ্টার এবং ১০২টি ট্যাংক ধ্বংস করেছে ইউক্রেন।
তবে দেশটির এই দাবির সত্যতা তাৎক্ষণিক যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। অপরদিকে রাশিয়া এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো তথ্য জানায়নি।
যুদ্ধে ইউক্রেনের ১৯৮ জন নিহত
মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ১৯৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়েছে এক লাখের বেশি বাসিন্দা।
শনিবার ইউক্রেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিক্টর লিয়াশকো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। তাদের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয় বৃহস্পতিবার। এতে ১৯৮ জন নিহত এবং ১ হাজার ১১৫ জন আহত হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ৩৩ জন শিশু রয়েছে। তবে হতাহতদের মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক উভয়ই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কি না, তা বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়নি।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা বলছে, প্রতিবেশী দেশে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ১ লাখ ২০ হাজার বাসিন্দা পাশের দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে।
শনিবার তৃতীয় দিনের মতো ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে রুশ বাহিনী। তারা শুক্রবারই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে প্রবেশ করেছে। রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে ইউক্রেনের সেনারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কিয়েভ। একই সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক ডেপুটি হাইকমিশনার কেলি ক্লেমেন্টস সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
কেলি ক্লেমেন্টস বলেন, ইউক্রেনের ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি বাসিন্দা পাশের দেশে গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যে অভ্যর্থনা পাচ্ছে, তা অসাধারণ। কিন্তু সামনের দিনগুলোর কথা চিন্তা করে আমরা সত্যিই শঙ্কিত।
জানা গেছে, ইউক্রেনের বেশিরভাগ বাসিন্দা শরণার্থী হয়ে পাশের দেশ পোল্যান্ড, মলদোভা, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরিতে যাচ্ছে।
যুদ্ধের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, কিয়েভে তুমুল যুদ্ধের মধ্যে একটি সড়কে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে শহরের একটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাজধানীর মাইডান স্কয়ারের কাছে একটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এছাড়া শহরের ত্রয়েশ্চিনা এলাকায় পাওয়া গেছে একাধিক বিস্ফোরণের খবর। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হামলার শব্দ এত তীব্র ছিল যে, শহরের কেন্দ্র থেকে কয়েক মাইল দূর পর্যন্ত শব্দ পেয়েছেন তারা।
কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানিয়েছে, শহরের চিড়িয়াখানার কাছে এবং শুলিয়াভকা শহরের আশপাশে ৫০টিরও বেশি বিস্ফোরণ এবং ভারী মেশিনগানে গোলাগুলি হয়েছে।
আল-জাজিরা জানায়, পোল্যান্ডের সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভের মেয়র বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী শহরে রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করেছে।
লভিভের মেয়র আন্দ্রে সাডোভি টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে লিখেছেন, ইউক্রেনের সপ্তম বৃহত্তম নগর কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫৬ মাইল দূরের ছোট শহর ব্রডিতে তিনটি হেলিকপ্টার নিয়ে অবতরণ করেছে প্রায় ৬০ জন রুশ সেনা।
মেয়র বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দখলদারদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’।
রুশ সেনাদের ঠেকাতে মারিউপল শহরের অনেক সড়কে গাছ ফেলে বন্ধ করে দিয়েছে ইউক্রেনের সেনারা। এমন অবরোধ পরিস্থিতির মধ্যেও সেখানকার অনেক বাসিন্দা আহতদের রক্ত দিতে হাসপাতালে ভিড় করছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, মারিউপলে তীব্র যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া এই শহরকে জিম্মি বা আত্মসমর্পণ করাতে পারবে না।
চলমান যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদেরও অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইউক্রেনের পার্লামেন্ট সদস্য ও গলস পার্টির নেতা কিরা রুদিক বলেছেন, রাজধানী কিয়েভ ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না। তার কাছেও অস্ত্র আছে। যুদ্ধের জন্য তিনি প্রস্তুত।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে কিরা রুদিক বলেন, ‘আমি পার্লামেন্টের সদস্য। আমার দায়িত্ব রাজধানী কিয়েভে অবস্থান করা। ইউক্রেন সেনাবাহিনীর প্রতি আমার বিশ্বাস রয়েছে। তাদের হাতে অস্ত্র আছে। অস্ত্র আমার হাতেও আছে। আমি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত’।
কিয়েভের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে এই পার্লামেন্ট সদস্য বলেন, কিয়েভের আকাশে এখন একের পর এক বিমান হামলা হচ্ছে। বিস্ফোরণের শব্দে জানালা কেঁপে উঠেছে। তার বাড়ির পাশেও পরপর কয়েকটি বিমান হামলা হয়েছে। তবে এতে কেউ নিহত হয়নি।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে মারিউপল বন্দরের পাশের শহর মেলিটোপল দখলে নেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়ার সেনারা। শনিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই দাবি করেছে বলে রয়টার্স ও বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, স্থানীয় সময় ২৬ ফেব্রুয়ারি রুশ সেনারা কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই মেলিটোপলে প্রবেশ করে। স্থানীয় বাসিন্দারা শহরে টহলরত রুশ সেনাদের স্বাগত জানাচ্ছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর দেশটির প্রথম কোনা শহর দখলে নেওয়ার ঘোষণা দিল রাশিয়া।
প্রসঙ্গত, ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সেনা অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন। এর কয়েক মিনিট পরই ইউক্রেনে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়। এরপর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে।