ইলন মাস্ক সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি টুইটার কিনে নিলেন

 


ইলন মাস্ক সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি টুইটার কিনে নিলেন

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির জন্য এয়ারবিএনবি থেকে ভাড়া নেয়া এক বাড়িতে তাড়াহুড়ো করে আয়োজন করা হয়েছে একটি বৈঠক।

এটি টুইটারের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইলন মাস্ক সম্প্রতি টুইটারের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডারে পরিণত হয়েছেন। এখন কানাঘুষো চলছে, তিনি কোম্পানির বোর্ডেও যোগ দিতে চান।

টুইটারের চেয়ারম্যান ব্রেট টেলর সভাস্থলে এসে যা দেখলেন, সেটা তিনি প্রত্যাশা করেননি।

তিনি নাকি ইলন মাস্ককে পরে টেক্সট করে জানিয়েছিলেন, "এর চেয়ে আজব কোন জায়গায় আমি সম্প্রতি এরকম কোন বৈঠক করিনি।"

তিনি আরও বলেছিলেন, "এরা হয়তো এয়ারপোর্টের কাছাকাছি জায়গায় কোন এয়ারবিএনবি খুঁজছিল। সেখানে ট্রাক্টর থেকে গাধা, সবই ছিল।"

তবে বৈঠকটি বেশ ভালোভাবেই হয়েছিল।

এর কদিন পরেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল যে মিস্টার মাস্ক টুইটারের বোর্ডে যোগ দিচ্ছেন।

এরপর ইলন মাস্ক ১৪ এপ্রিল একটা ঘোষণা দিয়ে সবাইকে চমকে দিলেন- তিনি টুইটার একাই কিনে নিতে চান।

এজন্য তিনি ৪৪ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ চার হাজার ৪শ কোটি ডলার দাম অফার করে বললেন, এই দামে হলে তিনি কিনবেন, নইলে নয়।

টুইটারের বোর্ড সাথে সাথেই এই দাম প্রত্যাখ্যান করলো। তারা এমন কিছু ব্যবস্থাও নিল, যাতে করে ইলন মাস্ক টুইটার কিনতে না পারেন।

কিন্তু তারপরেই অবশ্য টুইটারের বোর্ড তাদের মত বদলালো। তারা বললো, ইলন মাস্কের প্রস্তাবে তারা রাজী। ২৫ এপ্রিল টুইটার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দিল।

ইলন মাস্ক টুইটার নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, এটি আসলে পথ হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেছিলেন, টুইটার খুব বেশীমাত্রায় মত প্রকাশের অধিকার সীমিত করছে এবং, বিশ্বের 'টাউন হল' হিসেবে এটিকে মত প্রকাশের অধিকারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

কানাডার ভ্যাংকুভারের একটি বাণিজ্য সম্মেলনে তিনি বললেন, তিনি এই কোম্পানির অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন।

তবে ইলন মাস্ক টুইটার কেনার ঘোষণা দেয়ার পরের সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে শেয়ার বাজারে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম পড়ে যাচ্ছিল। কোম্পানি হিসেবে টুইটারের দামও তখন কমতে থাকে। তখন অনেক বিশ্লেষকই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন, মি. মাস্ক টুইটারের জন্য বেশি দাম দিয়ে ফেলেছেন কিনা।

তবে মিস্টার মাস্ক প্রকাশ্যে ভিন্ন কিছু প্রশ্ন তুলছিলেন- তার একটা হচ্ছে, টুইটারে আসল ব্যবহারকারী একাউন্টের সংখ্যা কত?

ফোর্বস এবং ব্লুমবার্গ বিশ্বের সেরা ধনীদের যে তালিকা করেছে, ইলন মাস্ক আছেন তার শীর্ষে। তার সম্পদের পরিমাণ নাকি ২৫০ বিলিয়ন, অর্থাৎ দুই হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ইলন মাস্ক অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে যাচ্ছিলেন যে, টুইটারে বট বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃষ্টি করা ভুয়া একাউন্টের সংখ্যা অনেক বেশি।

টুইটার কেনার জন্য তার দেয়া প্রস্তাব যখন গৃহীত হলো, তখন তিনি বার বার জানতে চাইছিলেন, টুইটারের সত্যিকারের ব্যবহারকারীর সংখ্যা আসলে কতো।

টুইটারের নির্বাহীরা তখন জানিয়েছিলেন, প্রতিদিনের সক্রিয় ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫ শতাংশেরও কম আসলে 'বট' বা স্বয়ংক্রিয় কৃত্রিম ব্যবহারকারী। কিন্তু এই পরিসংখ্যান শুনে ক্ষেপে গিয়েছিলেন ইলন মাস্ক।

বট একাউন্টের এই সংখ্যাটা কিভাবে তারা হিসেব করে বের করেছেন, তা নিয়ে টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিস্টার আগরওয়াল একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছিলেন। মিস্টার মাস্ক সেই পোস্টের জবাব দেন 'পুপ', অর্থাৎ মলের ইমোজি পোস্ট করে।

টুইটারের সঙ্গে ইলন মাস্কের চুক্তি তখন ধসে পড়ার উপক্রম। এরপর ৮ জুলাই তিনি ঘোষণা দিলেন, তিনি এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চান।

ইলন মাস্ক আরও কম দামে টুইটার কিনতে দরকষাকষি করতে চাইছিলেন নাকি আসলেই এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছিলেন, সেটা বলা মুশকিল।

তবে টুইটার এসব কথা মানতে চাইছিল না। তারা যুক্তি দিচ্ছিল যে, টুইটার কেনার জন্য যে চুক্তি ইলন মাস্ক করেছেন, সেই চুক্তি মানতে তিনি আইনগত-ভাবে বাধ্য এবং এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

দুই পক্ষই এরপর নামী-দামী আইনজীবীদের নিয়োগ করেন, এবং ১৭ অক্টোবরে ডেলাওয়ারে এক আদালতে মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়, যেখানে মি, মাস্ককে চুক্তি মেনে কোম্পানিটি কিনতে বাধ্য করা হবে।

আদালতে দাখিল করা কাগজপত্রে টুইটার বলেছিল, এই প্লাটফর্মের প্রকৃত ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য তারা ইলন মাস্ককে দিয়েছে।

কিন্তু মি. মাস্ক বলেছিলেন, বট একাউন্টের সংখ্যা সম্পর্কে টুইটার প্রকাশ্যে যে দাবি করে, প্রকৃত সংখ্যা হয়তো তার কয়েকগুণ। তিনি এমনকি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পর্যন্ত এনেছিলেন।

প্রকাশ্যে কোম্পানির এরকম ক্রমাগত সমালোচনা টুইটারের বেশ ক্ষতি করছিল। টুইটারের বেশিরভাগ রাজস্ব আসে বিজ্ঞাপন থেকে। বিজ্ঞাপনদাতারা ভাবছিলেন, তাদের বিজ্ঞাপন আসলে ঠিক কতসংখ্যাক মানুষের কাছে পোঁছাচ্ছে।

টুইটার সদর দফতরেও এসব চাপ কাজ-কর্মে বেশ ব্যাঘাত সৃষ্টি করছিল। টুইটারের কিছু কর্মী বেশ চাইছিলেন ইলন মাস্ক যেন তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হয়ে আসেন। কিন্তু অনেকে গোপনে এবং প্রকাশ্যে বলছিলেন, ইলন মাস্ক টুইটার কিনে নিলে সেটা হবে একটা বিপর্যয়, কোম্পানির সার্বিক লক্ষ্য থেকে শুরু করে 'কনটেন্ট মডারেশন', সবকিছুর জন্য।

আরো পড়ুন:


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Holy Foods ads

Holy Foods ads

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget