চেহারা শনাক্ত করার প্রযুক্তি ফেসিয়াল রিকগনিশন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ফেসবুক
আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন, চেহারা শনাক্ত করার প্রযুক্তি ফেস রিকগনিশন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান ‘মেটা’। এই প্রযুক্তির সাহায্যে ছবি বা ভিডিওতে ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করতে পারে ফেসবুক। ব্যবহারকারীদের শঙ্কা এবং নীতিনির্ধারকদের চাপের মুখে সুবিধাটি বন্ধের ঘোষণা দিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মটি। তবে এর অর্থ কী এবং ফেসবুক ব্যবহারে কী ধরনের পরিবর্তন আনবে, চলুন তা জানার চেষ্টা করি।
মনে করুন, পাঁচ বন্ধুর দেখা হলো বহুদিন পরে। আবার কবে একসঙ্গে হবেন তার ঠিক নেই বলে কিছু ছবি তুললেন। ফেসবুকে সেই ছবি পোস্ট করার সময় দেখলেন, আপনি ট্যাগ করে দেওয়ার আগেই ফেসবুক নিজে থেকেই সবাইকে নির্ভুলভাবে ট্যাগ করে দিচ্ছে, অন্তত বলছে কে কোনটা। আবার অনেক সময় নোটিফিকেশন আসে, যেখানে বলা থাকে, অন্য কেউ একটি ছবি পোস্ট করেছেন, যে ছবিতে হয়তো আপনিও আছেন।
ফেসবুকের এই অটো ট্যাগিং সিস্টেম কাজ করে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির সাহায্যে। আপনার একাধিক ছবিতে চেহারা বিশ্লেষণ করে ফেসবুকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর অ্যালগরিদম বুঝতে শেখে আপনার চেহারা কেমন কিংবা কোন ছবিতে আপনি আছেন। এখন সেই প্রযুক্তি বন্ধ করে দেওয়া হলে নিজে থেকে ফেসবুক আপনাকে কিংবা আপনার ছবিতে থাকা অন্য ফেসবুক ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করতে পারবে না। অন্তত পারার কথা নয়। কারণ, এতদিন যে ছবিগুলো দেখে ফেসবুক আপনাকে বা অন্য ব্যবহারকারীদের চিনতে শিখেছে, ফেসবুক সেই শনাক্তকরণের তথ্য মুছে ফেলার ঘোষণা দিয়েছে।
ব্যবহারকারীরা ছবিতে ফেসবুক বন্ধুদের আগের মতোই ট্যাগ করতে পারবেন। কেবল ফেসবুক নিজে থেকে ট্যাগ করে দেবে না বা ট্যাগ করার পরামর্শ দেবে না। একই সঙ্গে অন্য কেউ যদি আপনার ছবি আপলোড করে, তবে ফেসবুক আপনাকে তা জানাতে পারবে না। কারণ, ওই ছবিতে যে আপনি আছেন, ফেসবুক তা বুঝতে পারবে না।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য একটি সুবিধা তৈরির ঘোষণা দিয়েছিল ফেসবুক। যেখানে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবির বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করে শোনানো হতো। যেমন ছবিতে মুহিব নদীতীরে দাঁড়িয়ে আছে, পেছনে উড়ে যাচ্ছে একঝাঁক পাখি। এখন নদীতীর কিংবা পাখির বর্ণনা আগের মতোই দেওয়া হবে, শুধু ছবির মানুষ যে মুহিব, তা বলা হবে না।
শঙ্কা কিসের
ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি এখন অনেকটা নির্ভুলভাবেই চেহারা শনাক্ত করতে পারে। আর সেই সঙ্গে প্রযুক্তিটির সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে শঙ্কা বাড়তে থাকে জনমনে। বিশেষ করে নানা দেশের সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নজরদারি বাড়াতে পারে। চীনে এই প্রযুক্তির সাহায্যে উইঘুর মুসলিমদের শনাক্ত করে দেশটির সরকার।
আগের ঘোষণা অনুযায়ী, ফেসবুক ব্যবহারকারীর ফেস রিকগনিশন–সংক্রান্ত তথ্য বিক্রি বা হস্তান্তর করে না, বরং নিজেদের সেবার উন্নয়নে কাজে লাগায়। সেই কথা যদি সত্যিও হয়, তবু নানা দেশের আইনপ্রণেতারা বিশ্বাস করবেন কেন? বিশেষ করে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের নজির যখন তাঁদের চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন