গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর ফলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে বাস ও লঞ্চ চলাচলের ঘোষণা দিয়েছেন মালিকরা। তাই রবিবার সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীতে কিছু বাস চলাচল শুরু করেছে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে দূরপাল্লার অনেক বাস। আজ সোমবার (৮ অক্টোবর) সকাল থেকে পুরোদমে নতুন ভাড়ায় বাস ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।
এদিকে, ভাড়া বাড়ার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন যাত্রীরা। রামপুরা থেকে ফার্মগেট যাবেন সাফায়েত হোসেন। পূর্বের ভাড়া ছিল ২০ টাকা। আজ তাকে দিতে হয়েছে ৩০টাকা। নতুন ভাড়ায় তাকে ১০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে। এ নিয়ে বাসের কন্ডাক্টর-হেলপারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় তার। ক্ষোভে সাফায়েত আহমেদ বলেন, ‘চাকরিজীবী মানুষের যে বেতন বাড়ছে না, সেটি নিয়ে কেউ কথা বলে না। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তার ওপর আবার যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি।’ খিলক্ষেত থেকে ফার্মগেট আসা গণমাধ্যমকর্মী মোস্তাফিজুর রহমানকে ১৫ টাকার স্থানে ২৫ টাকা দিতে হয়েছে। তাকেও ১০ টাকা ভাড়া বেশি দিতে হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বেতন তো আগের মতোই আছে; তবে নতুন বাড়তি ভাড়ার টাকা আসবে কোথায় থেকে? সীমিত আয়ের যারা, তাদের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে এ ভাড়া।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অথচ রবিবার সন্ধ্যায় নতুন ভাড়া নিয়ে জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকার স্থলে ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৫ টাকার স্থলে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি নিয়ম না মেনে বাসের কন্ডাক্টর-হেলপাররা ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ করছেন বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে স্টুডেন্ট ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছন অনেক শিক্ষার্থী।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে স্টাফকোয়াটার থেকে মোহাম্মদপুরগামী স্বাধীন পরিবহনের হেলপার বলেন, ‘সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে। আমি কী করবো? যার ভালো লাগে বাসে যাবে, ভালো না লাগলে যাবে না।’
এদিকে, লঞ্চের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের পর রাত থেকে শুরু হয়েছে লঞ্চ চলাচলও। রাজধানী সদরঘাটসহ বিভিন্ন ঘাট থেকে রাতেই বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় লঞ্চগুলো। সকালে এসব লঞ্চ নির্দিষ্ট গন্তর্ব্যে পৌঁছায়। লঞ্চের নতুন ভাড়াকেও অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেছেন যাত্রীরা।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার বর্তমান বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। অর্থাৎ, কিলোমিটার প্রতি যাত্রীকে বাড়তি ৩৮ পয়সা গুনতে হবে। এছাড়া বড় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা, মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া মহানগরে বাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা, সেটা ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৪৫ পয়সা। মহানগরে মিনিবাসের বর্তমান ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা। সেটি বাড়িয়ে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটার প্রতি ৪৫ পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার থেকে দেশজুড়ে বাস-ট্রাক ও শনিবার থেকে লঞ্চ ধর্মঘটের ডাক দেন গণপরিবহন মালিকরা। অবশেষে তাদের দাবির মুখে গতকাল রবিবার গণপরিবহনে নতুন করে ভাড়া সমন্বয় করলো সরকার। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী বাসে ২৭ শতাংশ ও লঞ্চে ৩৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে সিএনজিচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। এদিকে সরকার ভাড়া বৃদ্ধি করায় গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় বাস ও লঞ্চের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে ডিজেলের দাম না কমালে পণ্যবাহী ট্রাক চলবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন