কানাডার আন্দোলনকারীদের ব্যাংক হিসাব জব্দের হুমকি ট্রুডোর | Trudeau threatens to seize bank accounts of Canadian protesters
করোনাভাইরাস বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদরতদের আন্দোলন দমনে জরুরি আইন ব্যবহারের নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
এই আইনের অধীনে আদালতের আদেশ ছাড়াই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত যে কারও ব্যক্তিগত হিসাব ব্যাংকগুলো জব্দ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে জরুরি আইন স্বল্পকালীন সময়ের জন্য কার্যকর থাকবে এবং আইনটি অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট উপায়ে ব্যবহৃত হবে আর এটি কার্যকরে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা লাগবে না, এমনটি বলেছেন তিনি।
তিনি জানান, আইনটি প্রয়োগ করতে পুলিশকে ‘আরও উপকরণ’ দেওয়া হবে যেন তারা বিক্ষোভকারীদের আটক ও জরিমানা করতে পারে, সংবেদনশীল স্থাপনাগুলো সুরক্ষিত রাখতে পারে।
“এটা করা হচ্ছে কানাডাকে নিরাপদ রাখতে, লোকজনের কাজ সুরক্ষিত রাখতে,” সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জরুরি আইন জারির প্রসঙ্গে বলেন ট্রুডো।
সম্মেলনে কানাডার উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, “আদালতের আদেশ ছাড়াই এখন ব্যাংকগুলো বিক্ষোভের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কারও ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে পারবে।”
বিক্ষোভে জড়িত যে কারও যানবাহনের বীমাও স্থগিত করা যাবে, বলেছেন তিনি।
কানাডার এ উপপ্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মগুলোকে হিসাবের মধ্যে আনতে কানাডার ‘সন্ত্রাসী অর্থায়ন’ আইনের আওতা বাড়াতে যাচ্ছেন।
ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম গিভসেন্টগো-র মাধ্যমে আন্দোলনরত ট্রাকচালকদের দেওয়া ৯৩ হাজার ডলার চাঁদার তথ্য হ্যাকাররা প্রকাশ করে দেওয়ার পর ফ্রিল্যান্ড এসব বললেন।
কানাডার রাজধানীতে এখনও কোভিড বিধি ও টিকা বাধ্যতামূলক বিরোধী কয়েকশ বিক্ষোভকারী অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
রোববার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ উইন্ডসরের অ্যাম্বাসেডর সেতু থেকে টিকা বাধ্যতামূলক বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়; ওই বিক্ষোভকারীরা প্রায় এক সপ্তাহ ওই সেতুটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে পণ্য আনানেওয়া করা সব ট্রাকচালককে হয় টিকা নিতে হবে না হলে দেশে ফেরার পর তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে, এই নিয়মের বিরুদ্ধে শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হওয়া প্রতিবাদ পরে কানাডার সব কোভিড বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলনে রূপ নেয়।
এ আন্দোলন তৃতীয় সপ্তাহে প্রবেশের পর ট্রুডো জরুরি আইন জারির পথে হাঁটলেন।
কিন্তু সমালোচকরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভারত সরকারের করা কয়েকটি নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকরা বছরখানেক ধরে রাজধানী নয়াদিল্লির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মহাসড়ক অবরোধ করে রাখার সময় ওই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন ট্রুডো।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, “শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকার রক্ষায় কানাডা তাদের (ভারতের কৃষকদের) পাশে থাকবে।”
কানাডার জরুরি আইন জারির ক্ষেত্রে বড় ধরনের আইনি বাধাও রয়েছে। ১৯৮৮ সালে পাস হওয়া এ আইন কেবল ‘জরুরি ও সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতেই’ ব্যবহার করা যাবে, যখন ‘কানাডীয়দের জীবন, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ভয়াবহ বিপন্ন’ বলে মনে হবে।
এসব শর্ত পূরণ হওয়াতেই জরুরি আইন জারি হয়েছে বলে সোমবার যুক্তি দিয়েছেন কানাডার বিচারমন্ত্রী ডেভিড লামেত্তি। তবে কানাডার সিভিল লিবার্র্টিজ অ্যাসোসিয়েশন মন্ত্রীর ব্যাখ্যার সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছে।
সরকারের জরুরি আইন জারির এ পদক্ষেপ ‘কানাডার গণতন্ত্র ও নাগরিক স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে’ বলেও সতর্ক করেছে তারা।
অটোয়ার বিক্ষোভের নেতা তামারা লিচ প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে অগ্রাহ্য করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, “কোনো হুমকিই আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না।”
তবে অন্টারিওর রক্ষণশীল মুখ্যমন্ত্রী ডগ ফোর্ড কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তে তার সমর্থন আছে বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ক্যেবেক, মানিটোবা, অ্যালবার্ডা ও সাসকাচোয়ানের মুখ্যমন্ত্রীরা বলেছেন, তাদের অঞ্চলে জরুরি আইন বলবৎ করার প্রয়োজন নেই। ট্রুডোর ঘোষণার আগেই ক্যেবেকের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, জরুরি আইন ‘আগুনে ঘি ঢালতে’ পারে।
কানাডার বিভিন্ন অংশে এখনও কোভিড বিধি ও টিকা বাধ্যতামূলক বিরোধী বিক্ষোভ চলছে।
রাজধানী অটোয়ার কেন্দ্রস্থলে টানা ১৮ দিন ধরে চলা অবরোধস্থলে চার থেকে পাঁচশ ট্রাক অবস্থান নিয়ে আছে। বিক্ষোভকারীরা কুটস, অ্যালবার্টা, এমারসন ও মানিটোবার সীমান্ত ক্রসিংগুলোও আটকে রেখেছে।
সোমবার অ্যালবার্টার পুলিশ ১১জনকে আটক করার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বন্দুক ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র জব্দ করেছে। কোভিড বিধি ও টিকা বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধে টরন্টো ও উইনিপেগের মতো শহরগুলোতেও সপ্তাহান্তে বিক্ষোভ হয়েছে।