ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলার আবেদন
Extortion case against OC-SI of Boalmari police station in Faridpur
ফরিদপুরে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল আলম (৫৫) ও উপপরিদর্শক(এসআই) উত্তম কুমার সেনের (৫০) বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মামলার আবেদন করেছেন এক ব্যবসায়ী।
বুধবার (৬ এপ্রিল) ফরিদপুরের ৭ নম্বর আমলি আদালতে এ মামলার আবেদন করেন ওই ব্যাবসায়ী আতিয়ার রহমান নান্টু। তিনি বোয়ালমারী উপজেলার দাঁদপুর ইউনিয়নের মোবারকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও বোয়ালমারী পৌর সদরের ওয়াপদা মোড়ের একজন হার্ডওয়্যারের ব্যবসায়ী।
আদালতের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তরুণ বাছাড় মামলার অভিযোগটি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
দন্ডবিধির ৩২৩/৩৮৫/৫০৬(বি)/১১৪ ধারায় অভিযোগটি দায়ের করা হয়। আগামী ২৬ মে মামলার আবেদনের ওপর পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
মামলার আবেদন সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী ও ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমান নান্টু ২০০০ সালের ২৩ মে বোয়ালমারীর পৌরসভার ওয়াপদার পাশে মৃত রশিদ মোল্লার স্ত্রী ও চার মেয়ের কাছ থেকে দুটি দলিলে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করে ২ শতাংশ জমির ওপর দোকান ঘর তৈরি করে ব্যবসা করে আসছিলেন।
বোয়ালমারীর সোতাশী এলাকার বাসিন্দা, দুই ভাই মোঃ ইয়াকুব হোসেন ও মোঃ বেলায়েত হোসেন রশিদ মোল্লার স্বজনদের কাছ থেকে একই জায়গায় জমি ক্রয় করেছিলেন। উক্ত দুই ভাইয়ের দাবি ও অভিযোগ, তাঁদের ক্রয়কৃত দাগের জমি ভোগদখল করছেন আতিয়ার রহমান নান্টু। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।
আতিয়ার রহমান নান্টু মামলার আবেদনে বলেন, ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর ওই দুই ভাই ইয়াকুব হোসেন ও বেলায়েত হোসেন গুদাম দখলের চেষ্টা করেন। তখন তিনি বোয়ালমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি(জিডি) করেন। সাধারণ ডায়েরি( জিডি) করার পর তিনি থানার ওসির কক্ষে গেলে ওসি তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় তিনি ওসিকে ৫০ হাজার টাকা দেন। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ওই দুই ভাই আবার তাঁর গুদাম ঘরের তালা ভেঙে সিমেন্টের বস্তা ওঠানোর চেষ্টা করেন। তখন আতিয়ার রহমান বিষয়টি তাৎক্ষনিক ওসিকে জানান। ওই সময় ওসি তাঁর কাছে পুনরায় ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এবার তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। ওসি তখন হুমকি দিয়ে বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে (আতিয়ার রহমানকে) মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করবেন। পরে আতিয়ার রহমান থানার উপপরিদর্শক(এসআই) উত্তম কুমার সেন চড়, কিল ও ঘুষি মেরে থানা থেকে বের করে দেন।
আরো পড়ুন: তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে গ্যাস বন্ধের হুমকি রাশিয়ার
এ ঘটনার পরে আতিয়ার রহমান নান্টু ফরিদপুরের পুলিশ সুপার, ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ, মহাপুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ হেড কোয়ার্টারে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন স্থানীয়ভাবে ও বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ বিষয়টির কোনো সুরাহা না হওয়ায় তিনি আদালতে মামলার জন্য এ অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল আলম জানান,যে অভিযোগে মামলার আবেদন করা হয়েছে সে অভিযোগ সত্য নয়।
এ বিষয়ে মামলার আবেদনকারী আতিয়ার রহমানের আইনজীবী লুৎফর রহমান জানান, আতিয়ার রহমান নান্টু আদালতে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের সত্য মিথ্যা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অভিযোগটি যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদালত পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। পিবিআইয়ের তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে অভিযোগটি মামলায় পরিণত হবে। সত্য প্রমাণিত না হলে অভিযোগটি খারিজ হয়ে যাবে।
এদিকে থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) ও উপপরিদর্শক (এসআই) মামলার আবেদনের বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার(৬ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান। সংবাদ সন্মেলনে তিনি বলেন, আতিয়ার রহমান নান্টু গত ৬ মার্চ তাঁর বরাবর এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পরদিন ৭ এপ্রিল এক তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তদন্তের জন্য নিয়োগ প্রদান করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত কাজ শুরু করেন। এ পর্যন্ত ওই তদন্ত কর্মকর্তা আতিয়ার রহমানসহ ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, আতিয়ার রহমান পুলিশের নির্ধারিত তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট একটি কাগজও পৌঁছে দেন। অথচ একই দিন তিনি আদালতে গিয়ে মামলার অভিযোগ করেন। তাতে আগের অভিযোগ ও পরের অভিযোগে অনেক অমিল রয়েছে। আগের অভিযোগের চেয়ে নতুন অভিযোগে অনেক কথা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অভিযোগকারী বলেছেন, স্থানীয়ভাবে ও বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো সুরাহা তিনি পাননি। তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে তদন্তসংশ্লিষ্ট কাগজ জমা দেওয়ার দিনই আদালতে একই বিষয়ে মামলার আবদেন করার বিষয়টি বোধগম্য নয়।
আরো পড়ুন: