রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের ভূমিকা
Turkey's role in the Russia-Ukraine war
রাশিয়া আর ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের মধ্যে বৃহস্পতিবার শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় তুরস্কের শহর আন্তালিয়ায়। বৈঠক থেকে কোন সিদ্ধান্ত না এলেও তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসলু এই বৈঠকটিকে 'গুরুত্বপূর্ণ সূচনা' বলে উল্লেখ করেছেন।
তুরস্কের একটি সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, 'মাত্র একটি বৈঠক থেকে অলৌকিক কিছু আশা করা ঠিক নয়।' কিন্তু রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে চলমান সংকটে তুরস্কের ভূমিকা আসলে কী?
বিশ্লেষকরা বলছেন, তুরস্ক একইসঙ্গে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য আবার অন্যদিকে দেশটির সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেনেরও সম্পর্ক ভালো থাকায় যুদ্ধকে সমাপ্তির দিকে নিয়ে যেতে তাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে।
ইউক্রেনের কিয়েভ-ভিত্তিক ইস্ট ইউরোপিয়ান ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটের চেয়ারপার্সন ডঃ মৃদুলা ঘোষ বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সাথে তুরস্কের একটা ঐতিহাসিক যোগসূত্র আছে। আবার ন্যাটোর সদস্য হলেও দেশটি রাশিয়ারও ঘনিষ্ঠ মিত্র। এ কারণেই ভ্লাদিমির পুতিন চাইছেন কাউকে যদি মধ্যস্থতা করতে হয় সেটা তুরস্কই করুক।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ
যুদ্ধ শুরুর পরপরই রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব, যার ফলে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাশিয়া ও দেশটির প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু ৬ই মার্চ প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ফোনে কথা বলেন ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে। এক ঘণ্টার ফোনালাপে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। তবে একই সাথে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহার এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রতিও তিনি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন।
তুরস্কের সরকারপন্থী পত্রিকাগুলো তখন থেকেই তুরস্কের পরিকল্পনাকে 'পিস টেবিল' বা 'হোপ ফর পিস' হিসেবে আখ্যায়িত করতে শুরু করে। মূলত এখান থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের ভূমিকা রাখার সুযোগ নিয়ে নানা খবর আসতে থাকে সেখানকার পত্রপত্রিকায়।
এসব খবরে একটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয় যে 'তুরস্ক উভয় পক্ষের সাথেই সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে' অর্থাৎ নিরপেক্ষ একটি ভূমিকার বিষয়ে দেশটির নেতৃত্ব সচেষ্ট।
অবশ্য ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলার আগে থেকেই এ সংকট নিরসনের মধ্যস্থতার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন এরদোয়ান।
তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য এবং ওয়াশিংটনেরও মিত্রতা আছে তাদের সাথে," বলেন তিনি।
হুমায়ুন কবির বলছেন তুরস্কের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত ইতিবাচক কারণ পশ্চিমা বিশ্ব, মস্কো ও কিয়েভ-সব পক্ষের কাছেই তার গ্রহণযোগ্যতা আছে।
তুরস্কের সরকারপন্থী সাবাহ পত্রিকার কলামিস্ট ওকান মুদেরিসগুলো ৩রা মার্চ তার লেখায় এরদোয়ানের সম্ভাব্য মধ্যস্থতার বিষয়টি তুলে ধরে বলেছেন, যে কৌশল আঙ্কারা নিয়েছে সেটি 'সক্রিয় নিরপেক্ষতা।' অর্থাৎ যুদ্ধবিরতি ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে আঙ্কারা ভূমিকা রাখবে।
আরো পড়ুন: যা থাকছে নিপুণের ওয়েব সিরিজ ‘সাবরিনা’য় (ভিডিও)
ঐতিহাসিক যোগসূত্র ও আঞ্চলিক সুপার পাওয়ার
ডঃ মৃদুলা ঘোষ বলেছেন, ক্রিমিয়ার সঙ্গে তুরস্কের একটি ঐতিহাসিক যোগসূত্র আছে। সেখানকার তাতারদের ওপর তুরস্কের প্রভাব ব্যাপক। যদিও তারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী।
আবার পর্দার অন্তরালে যা কিছুই হোক না কেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন মিস্টার এরদোয়ান।
বিশ্লেষকরা বলছেন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনা নিয়ে ন্যাটোর সঙ্গে বিবাদে জড়ালেও সিরিয়া, লিবিয়া ও নাগার্নো কারাবাখে রাশিয়ার উল্টো দিকেও অবস্থান নিয়েছে দেশটি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তুরস্কের অর্থনীতি-সেটিও বিবেচনায় নিয়েছেন মিস্টার এরদোয়ান। এসব কারণে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেওয়াকেই হয়তো জরুরি বলে বিবেচনা করেছেন তিনি।
এদিকে ইসরায়েলের দিক থেকে কিছুটা তৎপরতা দেখা গেলেও সেটি খুব বেশি অগ্রসর হওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন ডঃ মৃদুলা ঘোষ ও হুমায়ুন কবির।
হুমায়ুন কবির বলছেন, 'সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে ইসরায়েলের সেই গ্রহণযোগ্যতা নেই যা তুরস্কের আছে।'
মৃদুলা ঘোষ বলছেন, 'ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইহুদি বলে হয়তো ইসরায়েল আগ্রহ দেখাচ্ছে, কিন্তু এ ধরনের সংকটে ভূমিকা রাখার প্রভাব প্রতিপত্তি তুরস্কেরই বেশি।'
সূত্রঃ বিবিসি
আরো পড়ুন: