উদ্ধারকর্মীদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হল, মরক্কোর একটি কুয়ায় চার দিন ধরে আটকে থাকা পাঁচ বছরের শিশুটিকে বাঁচানো গেল না।
বিবিসি জানিয়েছে, শনিবার রাতে রায়ান ওরাম নামের ওই শিশুটিকে কুয়া থেকে তুলে আনার পরপরই রাজকীয় এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
গত মঙ্গলবার মরক্কোর উত্তরাঞ্চলের পার্বত্য এলাকা তামরতে ১০৪ ফুট গভীর একটি কুয়ায় পড়ে যায় রায়ান। কুয়ার মুখ মাত্র ১৮ ইঞ্চি চওড়া হওয়ায় উদ্ধারকর্মীরা নামতে পারছিলেন না।
রায়ানের কুয়ায় আটকে থাকার খবর নাড়িয়ে দেয় পুরো মরক্কোকে। হাজার হাজার মানুষ সেই কুয়ার কাছে ভিড় করে। অসংখ্য মানুষ রায়ানের খবরের জন্য নজর রাখেন অনলাইনে।
সামাজিক মাধ্যমে #SaveRyan হ্যাশট্যাগে শিশুটির প্রতি সহমর্মিতা জানান অনেকে। সাড়া মেলে মরেক্কোর বাইরেও থেকেও।
উদ্ধারকর্মীরা বুলডোজার দিয়ে ওই পহাড়ে কুয়ার সমান্তরালে একটি গর্ত খোঁড়েন। কিন্তু তাতে ভূমিধসের শঙ্কা ছিল। ঝুঁকি এড়াতে সেই গর্তে পিভিসি টিউব বসানো হয়।
শনিবার উদ্ধারকর্মীরা জানান, রায়ানের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন তারা। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যার পর শিশুটিকে তুলে আনতে পারেন তারা।
শিশুটি কেমন আছে- সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি সে সময়। তবে দীর্ঘ চেষ্টার পর তাকে তুলে আনা সম্ভব হওয়ায় আনন্দ আর স্বস্তি প্রকাশ করেছিল কুয়ার কাছে ভিড় করে থাকা জনতা।
কিন্তু আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে যখন রায়ানের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করা হল, সবার স্বস্তি পরিণত হয় শোকে। সেই একই হ্যাশট্যাগে টুইটার ভরে ওঠে শোকবার্তায়।
মরক্কোর রাজপ্রাসাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “শিশু রায়ান ওরামের প্রাণ কেড়ে নেওয়া মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পর তার বাবা-মাকে সাক্ষাৎ দিয়েছেন বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ। কুয়ায় পড়ে রায়ানের মৃত্যুর ঘটনায় বাদশাহ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।”
গত মঙ্গলবার যখন ওই দুর্ঘটনা ঘটে, ওই কুয়াটি মেরামত করছিলেন রায়ানের বাবা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, এক মুহূর্তের জন্য ছেলের ওপর থেকে তার নজর সরেছিল, এর মধ্যেই সর্বনাশ হয়ে গেল।
মরক্কোর সিভিল প্রটেকশন ডিরেকটরেটের নেতৃত্বে সেদিন সন্ধ্যা থেকেই উদ্ধার অভিযান শুরু হয় শেফশাওয়েন শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে ছোট্ট শহর তামরতের ওই পহাড়ে।
বৃহস্পতিবার কুয়ায় নামানো ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা যায়, শিশুটি তখনও জীবিত, তার চেতনাও আছে। উদ্ধারকর্মীরা তার কাছে খাবার, পানি আর অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তবে সেসব তার কোনো কাজে লেগেছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়।
ওই পহাড়ের বালি আর পাথরের গঠনের কারণে কুয়ার মুখ বড় করে উদ্ধার অভিযান চালানোর সুযোগ ছিল না, কারণ তাতে যে কোনো সময় ধসের আশঙ্কা ছিল। সে কারণে বুলডোজার দিয়ে কুয়ার সমান্তরালে মাটি কেটে বিরাট এক গর্ত খোঁড়া শুরু হয়। শক্তিশালী ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে রাতেও কাজ চলে।
পুরো সময়টায় সেখানে জড়ো হওয়া হাজারো মানুষ প্রার্থনা করছিলেন রায়ানের জন্য। তারা আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিচ্ছিলেন, ধর্মীয় গান গাইছিলেন। কেউ কেউ তাঁবু খাটিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন।
কিন্তু তাদের সঙ্গে পুরো মরক্কো শোকে ভাসে শনিবার রাতে, যখন রায়ানের মৃত্যুর খবর জানানো হয় আনুষ্ঠানিকভাবে।