ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণে
Rape of a schoolgirl at Ranishankail in Thakurgaon
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর শিক্ষক তৌহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতারে গড়িমসির অভিযোগ এনে এবার সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
রোববার দুপুরে উপজেলার বন্দর ও শিবদীঘি মোড়ে সম্মিলিত ছাত্রজোট ও সম্মিলিত অভিভাবক মহলের ব্যানারে ঘণ্টাব্যপী আন্দোলন করে তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছি আমরা। মামলার এতদিনেও কেন পুলিশ ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করতে পারেনি আমরা তার জবাব চাই। তা না হলে আরও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে আদালতে না পাঠানো হবে এবং ন্যায়বিচার করা হবে আমাদের আন্দোলন চলবে। এসময় আন্দোলনকারীরা তৌহিদুলের গ্রেফতারের ৬ ঘন্টা সময় বেধে দেন পুলিশকে।
পরে ইউএনও কার্যালয়ে মিছিল নিয়ে অবস্থান নেন তারা। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে এসে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আলী শাহরিয়ার এসময় তারা শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, আমরা খুব শিঘ্রই ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং এর সুষ্ঠু বিচার হবে।
ইউএনও জুলকার নাইন কবির স্টিভ থানার ওসি এসএম জাহিদ ইকবালের বরাতে বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে গ্রেফতার করা হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী অয়ন প্রিতম, মাহিদ,বর্ষা, তাবাসসুম ও সুমি আক্তার জানান, আমাদের সহপাঠীর সঙ্গে যে অন্যায় অবিচার হয়েছে তার সঠিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আজ ধরে এক সপ্তাহ হয়ে গেলো এখনো কোন সমাধান হয়নি। আমরা চরিত্রহীন শিক্ষকের কঠিন শাস্তি চাই। যাতে তার শাস্তি দেখে আর কোন শিক্ষক ভুল করেও শিক্ষার্থীদের দিকে কু-নজরে না তাকায়। লম্পট তৌহিদুল গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান শিক্ষার্থী
জানা যায়, রাণীশংকৈল উপজেলার সহোদর গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে পাইলট হাইস্কুলের কম্পিউটার অপারেটর
শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম পৌর শহরের ভান্ডারা মহল্লার ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীর সঙ্গে বিয়ের প্রলভোনে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ঘটনা জানাজানি হলে ওই শিক্ষার্থীর বাবা তৌহিদুলের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
তৌহিদুল ১৫ লাখ টাকার যৌতুক চেয়ে বিয়ে করতে চান। ওই ছাত্রীর বাবা এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ লোকজন গত ৩ মার্চ ওই শিক্ষার্থীকে তৌহিদুলের বাড়িতে রেখে আসেন। ওই শিক্ষার্থী বিয়ের দাবিতে ওই বাড়িতে অবস্থান নিলে তৌহিদুল বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে পরদিন ৪ মার্চ তড়িঘড়ি করে প্বার্শবর্তী উপজেলা হরিপুরে বিয়ে করেন।
এতে ওই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা গত ৫ মার্চ তৌহিদুলের বিচার চেয়ে পৌরশহরে মানববন্ধন করেন। ওইদিনই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে রাণীশংকৈল থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। সেইসঙ্গে ইউএনও এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয় বলে নিশ্চিত করেন রানীশংকৈল থানা পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল লতিফ সেখ।
গত শনিবার (৫ মার্চ) ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে রাজপথে নামেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল রাস্তা অবরোধ করেন তারা।
৭ই মার্চ আবারো পৌর শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিবদিঘী যাত্রী ছাউনী মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন উপজেলার বিভিন্ন স্কুল কলেজের নানা শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে তৌহিদুলের গ্রেফতারের দাবিতে ফের রবিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে রাজপথে নামেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা সড়ক অবরোধ করে।
অভিযুক্ত কম্পিউটার অপারেটর শিক্ষক তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহেল রানা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পরে ঘটনা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সহকারী পুলিশ সুপার (রাণীশংকৈল সার্কেল) মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, শিক্ষক তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ করছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আমারা ভিকটিম কে আমাদের হেফাজতে নিয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। আসামিকে দ্রুত গ্রেফতারের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, এর আগে শিক্ষার্থীরা আমাকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। তৌহিদুলের গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশকে বলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরো পড়ুন: