ছবিতে এই চুম্বন দৃশ্যের কথায় নিজের চিরাচরিত মজাদার ভঙ্গিতে শাহিদের উদ্দেশে কপিল বলে উঠলেন ' রেসপিরেটরি থেরাপি'-র মাধ্যমে নিজের বহু ছবির নায়িকার মুখে অক্সিজেন পুরে দিয়েছেন এই বলি-তারকা। বলি-তারকার উদ্দেশে এরপর তাঁর প্রশ্ন, 'এই যে আপনি এই সমাজসেবামূলক কাজকর্মগুলো করেন তা শুধুই স্ক্রিপ্ট এর নির্দেশে নাকি নিজের মনের ডাকে?' হাসতে হাসতে শাহিদের জবাব, 'দ্যাখো, ব্যাপারটা হল মুখ দিয়েই 'এই কাজটা' করে থাকি, কিন্তু তার সঙ্গে খানিকটা মনের ডাকও থাকে আর কী।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে করোনাভাইরাসের জিনোমের উন্মুক্ত বৈশ্বিক তথ্যভাণ্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটাতে (জিআইএসএআইডি) এসব তথ্য জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ এবং এসংক্রান্ত তথ্য জিআইএসএআইডির কাছে পাঠিয়েছে।
এর আগে গতকাল সোমবার ৫৬ বছর বয়সী পুরুষের শরীরে ওমিক্রন ধরা পড়ে। রোগী ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারও আগে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি দুজনের শরীরে শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এ ধর্ষণ মামলার ৩ নম্বর আসামি ইসরাফিল হুদা জয়কে মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) ভোরে অভিযান চালিয়ে চকরিয়ার বাস টার্মিনাল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন।
গ্রেফতারকৃত জয় কক্সবাজার শহরের শফিউদ্দীনের ছেলে ও ঘটনার মূল হোতাদের একজন।
মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মুসলিম বলেন, এ পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত আশিকসহ এজাহারনামীয় তিনজন এবং ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গ্রেফতার জিয়া গেস্ট ইন ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন ৪ দিন এবং অন্য ৩ আসামি দুই দিনের রিমান্ডে রয়েছে।
দুই দিনের রিমান্ডে থাকা আসামিরা হলেন- কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ বাহারছড়া এলাকার রেজাউল করিম শাহাবুদ্দিন (২৫), চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারার উলুবনিয়া এলাকার মামুনুর রশীদ (২৮) ও কক্সবাজার শহরের পশ্চিম বাহারছড়া এলাকার মেহেদী হাসান (২১)।
এদিকে, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার মাদারীপুর থেকে র্যাব গ্রেফতার করে মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিককে। এর আগে ঘটনার পরদিনই র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন মামলার এজাহারভুক্ত আরেক আসামি হোটেল জিয়া গেস্ট ইনের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, গত ২২ ডিসেম্বর শহরের কবিতা চত্বর রোড সংলগ্ন এক ঝুপড়ি ঘরে আটকে রেখে তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরে সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের আবাসিক হোটেলে। দ্বিতীয় দফায় সেখানেও তিনি ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় ২৩ ডিসেম্বর চারজনের নাম উল্লেখ করে ও দু-তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগীর নারীর স্বামী।
এদিকে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সোমবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ধর্ষণের শিকার পর্যটক তার হৃদরোগে আক্রান্ত আট মাসের শিশুর চিকিৎসার জন্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারে যান। পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ জোগানোর বিষয়টি জেনে তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন ধর্ষক আশিক ও তার সহযোগীরা। এ অর্থ না দেওয়ায় ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী।
মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া সংস্থা ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন জানান, মাদারীপুরে র্যাবের হাতে ধৃত ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আশিককে আমাদের কাছে হস্তান্তর করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
সর্বশেষ ঝালকাঠির বিশখালীর নদীর সাচিলাপুরে অজ্ঞাত কিশোর (১৩) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ২টার সময় ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে। লাশটির দেহ অর্ধপোড়া ছিল এবং গায়ে কালো রংয়ের সোয়েটার ও জিন্সের প্যান্ট ছিল।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ঝালকাঠির লঞ্চঘাট-সংলগ্ন মাঝনদী থেকে অজ্ঞাত যুবকের (৩২) লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এই যুবকের মুখমণ্ডল পোড়া ছিল এবং অফ হোয়াইট শীতের পোশাক ও জিন্সের প্যান্ট পরা ছিল জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার ডিএডি শফিক । লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চ ট্রাজেডির ঘটনায় এই নিয়ে নিখোঁজ তিনজনের লাশ উদ্ধার হলো।
এদিকে ঝালকাঠির বিষখালী নদী থেকে সোমবার উদ্ধার হওয়া যুবকের লাশটি দাবি করে দুই পক্ষ। এক পক্ষের দাবি, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম মো. শাকিল মোল্লা। তিনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ইসদাইর গ্রামের মৃত শফি উদ্দিন মোল্লার ছেলে। আগুনে পুড়ে যাওয়া অভিযান-১০ লঞ্চের সহকারী বাবুর্চি ছিলেন তিনি। ফেসবুকে ছবি দেখে বোন সাহিদা আক্তার নিশা ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
এদিকে আরেক পক্ষের দাবি, ওই যুবক বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের হাকিম শরীফ। তিনি ঢাকার এসএমডি কোম্পানিতে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করতেন। হাতের আংটি ও পোশাক দেখে হাকিম শরীফের বড় ভাই আবদুল মোতালেব শরীফ লাশ শনাক্ত করেন। ফেসবুকে লাশ উদ্ধারের খবর ও ছবি দেখে সেটি তার ভাইয়ের বলে দাবি করেন তিনি। দুই পক্ষের দাবির কারণে উদ্ধার হওয়া লাশ হস্তান্তর নিয়ে বিপাকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু দুই পক্ষ উদ্ধার হওয়া যুবকের লাশ তাদের স্বজনের বলে দাবি করছেন। এ কারণে উভয় পক্ষের লোকজন আসার পর তাদের দেখানো হবে, উপযুক্ত প্রমাণের পর লাশ হস্তান্তর করা হবে। সেটা করা সম্ভব না হলে ডিএনএ পরীক্ষা করে হস্তান্তর করা হবে। তবে পুলিশ শেষ পর্যন্ত মধ্য রাতে এ লাশটির নারায়ণগঞ্জের শাকিল মোল্লার (৩৪) বলে নিশ্চিত হয়ে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। শাকিল মোল্লা নারায়ণগঞ্জের শফিউদ্দিন মোল্লার পুত্র ও পেশায় সহকারী বাবুর্চি। আগুনে পুড়ে যাওয়া অভিযান-১০ লঞ্চের সহকারী বাবুর্চি ছিলেন তিনি।
সোমবার রাতে লঞ্চের তদন্ত কাজে ও আলামত সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে সিআইডি। সিআইডির এএসপি পদ মর্যাদার অরিদ সরকারের নেতৃত্বে একটি টিম। মৃতের আলামত সংগ্রহ করে নিখোঁজদের সঠিক পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য দলে ডিএনএ বিশেষজ্ঞও রয়েছে। এই দুর্ঘটনায় আগুনে ব্যাপকভাবে পুড়ে যাওয়ায় অনেকের লাশ তার পরিবারের পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্যই এ টিমটি পুলিশকে সহযোগিতা করতে এসেছে। উদ্ধারকৃত লাশগুলোতে কমবেশি দগ্ধ হওয়ার চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হয়, শরীরে আগুন ধরে গেলে বাঁচার জন্য নদীতে ঝাঁপ দেয়ার পর নিখোঁজ ছিল।
এদিকে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বরগুনার জেলা প্রশাসন থেকে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী এখনো নিখোঁজ আছেন ৩৩ জন। আর ঝালকাঠি যুব রেড ক্রিসেন্টের তালিকা অনুযায়ী নিখোঁজ রয়েছেন ৫১ জন। আবার ঝালকাঠি জেলা পুলিশের তালিকায় নিখোঁজ আছেন ৪০ জন।
পুলিশের কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা নিখোঁজ হিসেবে ৪১ জনের নাম দিয়েছে।
বলিউডি ইন্ডাস্ট্রিতে ৩২ বছরের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে নিয়মিতই বক্স অফিসে ঘূর্ণিঝড় তুলেছেন সালমান খান। এখনও তুলছেন। এক কথায় গত তিন দশকে বলিউডের সবচেয়ে সফল তারকাদের একজন তিনি। তিন খানের মধ্যে অন্যতম।
জনপ্রিয় সব সিনেমা উপহার দেওয়ার মধ্যেই বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েছেন সালমান খান, যা বলিউডের আর কোনো অভিনেতার নেই।
১) একটানা ১৫টি ১০০ কোটির বেশি আয় করা সিনেমা উপহার দিয়েছেন সালমান, যা বলিউডের ইতিহাসে আর কেউ পারেননি।
২) ৩০০ কোটি রুপি আয়ের ক্লাবেও রয়েছে সালমানের ৩টি সিনেমা। এ অনন্য অর্জনও নেই আর কারও।
৩) ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সালমান খান অভিনীত ছবি ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’ সিনেমাটি একটি অনন্য রেকর্ড গড়ে। মুক্তির পর সিনেমাটির টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৭ কোটি ৪০ লাখের বেশি। হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে আর কোনো সিনেমার এতো বেশি টিকিট বিক্রি হয়নি।
৪) শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন সালমান খান। এছাড়া বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, শো করার মাধ্যমে অঢেল অর্থের মালিক হয়েছেন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার কোটির বেশি।
৫) শুধু বড় পর্দায় নয়; ছোট পর্দা তথা টিভিতে হাজির হয়েও সুপারহিট সালমান খান। যে অর্জনের বলিউডের অনেক সুপারস্টারের নেই। ‘দশ কা দম’, ‘বিগ বস’-এর মতো তুমুল জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলো সঞ্চালনা করেছেন তিনি। বছরের পর বছর ধরে সালমানের এসব অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।
৬) ব্যক্তিগত জীবনে বেশকিছু প্রেমে জড়ালেও বিয়ে করেননি সালমান খান। বলিউড ভাইজান খ্যাত তারকা ৫৭ বছরে এসেও সিঙ্গেল। যে কারণে বলিউডের ‘মোস্ট এলিজেবল’ ব্যাচেলর খেতাবটি এখনও তারই।
ট্রেলার মুক্তির পরই ‘বাহুবলী’র রেকর্ড ভেঙেছে আরআরআর। চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বছর এই প্যান ইন্ডিয়া ছবি বক্স অফিস কাঁপাবে।
বক্স অফিস রিপোর্ট অনুযায়ী, মুক্তির আগে ‘আরআরআর’ ৮০০ কোটি রুপি আয় করেছে। এর মধ্যে ছবি স্বত্ব বিক্রিসহ গানের আয়ও আছে। এই ছবির মোট বাজেট ৪০০ কোটি রুপি বলে জানা গেছে। উত্তর ভারতীয় স্বত্ব থেকে ছবিটি পেয়েছে ১৩৫ কোটি। হিন্দি ছাড়াও ছবিটি তামিল, তেলেগু, মালয়ালম ও কন্নড় ভাষায় মুক্তি পাবে।
তেলেগু রাইটসের জন্য ছবিটি ১৬৫ কোটিতে বিক্রি করা হয়েছে। কন্নড়, মালয়ালম, বিদেশি স্যাটেলাইট রাইটস, সব মিলে ‘আরআরআর’ ৮০০ কোটির বেশি আয় করেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯০০ কোটি টাকার বেশি।
‘রুদ্রম রণম রুধিরাম’ অথবা ইংরেজিতে বলা হচ্ছে ‘রাইজ রোর রিভেঞ্জ’ সংক্ষেপে সিনেমাটির নাম ‘আরআরআর’ বা ‘থ্রি আর’। সিনেমাটি নিয়ে এতো আলোচনার কারণ হলো এই সিনেমায় পর্দা কাঁপাবে দক্ষিণী, বলিউড ও হলিউডের একঝাঁক তারকা। সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন— জুনিয়র এনটিআর, রাম চরণ, আলিয়া ভাট, অজয় দেবগন প্রমুখ। পাশাপাশি আছেন রে স্টিভেনসন, অলিভিয়া মরিস, অ্যালিসন ডুডির মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তারকারাও।
এই ছবিতে কোন তারকা কত রুপি নিয়েছেন, তা ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
জানা গেছে, ‘আরআরআর’ ছবির জন্য সব তারকা চড়া পারিশ্রমিক নিয়েছেন। দক্ষিণের সবচেয়ে দামী তারকাদের মধ্যে রামচরণ, জুনিয়র এন টি আরের নাম শীর্ষে আছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী অল্লুরি সীতারাম রাজুর ভূমিকায় দেখা যাবে রামচরণকে। এই ছবির জন্য এই দক্ষিণি তারকা নিয়েছেন ৪৫ কোটি রুপি।
এদিকে ‘আরআরআর’ ছবিতে আর এক বিপ্লবী কোমারাম ভীমের চরিত্রে অভিনয় করছেন জুনিয়র এন টি আর। এই বিপ্লবী হায়দরাবাদের নিজামের বিরুদ্ধে বিপ্লব করেছিলেন। জুনিয়র এন টি আরও এই ছবির জন্য একই দর হাঁকিয়েছেন বলে খবর। রাজামৌলির এই প্যান ইন্ডিয়া ছবিতে ক্যামিও হিসেবে দেখা যাবে বলিউড সুপারস্টার অজয় দেবগণকে। এই ছবিতে স্বল্প উপস্থিতির জন্যও বড়সড় দর হাঁকিয়েছেন তিনি।
অজয় ‘আরআরআর’-এর জন্য ২৫ কোটি নিয়েছেন। আর আলিয়া ভাট ‘সীতা’র ভূমিকার জন্য নিয়েছেন ৯ কোটি। এদিকে পরিচালক রাজামৌলি ছবির লাভ থেকে ৩০ শতাংশ নিজের পকেটস্থ করবেন জানা গেছে।
ই-মেইল বার্তায় শাকিব বলেন, ‘এক সিনিয়র নির্মাতা ঘোষণা দিয়েছেন আমার বায়োপিক নির্মাণ করবেন। অথচ এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কারও বায়োপিক নির্মাণ করতে গেলে তার অনুমতি নিতে হয়। তিনি কী আমার অনুমতি নিয়েছেন? এটি দেশের মানুষের কাছে আমার ইমেজ নষ্ট করার ষড়যন্ত্র নয় কি? এ ধরনের ষড়যন্ত্র আর মেনে নেওয়া যায় না।
দেশীয় চলচ্চিত্রের কারও বায়োপিক যদি নির্মাণ করতে হয় তাহলে নায়করাজ রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, সোহেল রানা, ববিতা, শাবানা, কবরীদের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের নির্মাণ করা উচিত। আমাকে নিয়ে কেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি বেশ কিছুদিন ধরে আমার দেশে না থাকার সুযোগে চলচ্চিত্রজগতের কেউ কেউ আমাকে নিয়ে অনাকাক্ষিতভাবে মিডিয়ায় বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা ছড়াচ্ছেন। এর মধ্যে আরেক নির্মাতা আমার বিদেশে যাওয়া, সেখানে বসে ছবির কাজ করা নিয়ে মিডিয়ার কাছে অনভিপ্রেত কথা বলেছেন। যা অন্যকে অন্যায়ভাবে আক্রমণ করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমি এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই যারা আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বিছাতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব। মানহানি ও সাইবার ক্রাইম অ্যাক্টে মামলা করব। ইতিপূর্বে আমার স্টারডাম ক্ষুণ্ণ করতে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। এসব আমি আর মুখ বুজে সহ্য করব না।’
কিছুটা বিরতি দিয়ে এবার অভিনয়ে ফিরলেন।
সোমবার এফডিসিতে ‘বুবুজান’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নিলেন তিনি। এ সময় সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড নিয়েও কথা বলেন মাহি।
‘অগ্নিৎ’ সিনেমাখ্যাত এ নায়িকা জানান, এই রকম ফোনকল শুধু একদিন আসেনি, আরও অনেক এসেছে।
মাহি বলেন, ‘একটা মাতাল মানুষ, তার সঙ্গে কথা বাড়ানো তো বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। এই রকম ফোন তো একদিন আসেনি, আরও অনেক এসেছে। আমার কাছের মানুষদের সঙ্গে শেয়ার করতাম। তাদের একটা ভয় কাজ করত, চুপ থাকতে বলতেন। এভাবেই পাশ কাটিয়ে গিয়েছি। দেখেন আমি তখন ফেসবুকে লাইভে আসতে পরতাম। হইচই হতো। কিন্তু আমার ইমেজ, পরিবারের ইমেজ ও নিরাপত্তার বিষয়টিও তো দেখতে হয়। যে খারাপ সে তার শাস্তি পেয়েছে।’
ফোনে কথা চালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মাহি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেখুন! আগেও বলেছি এখনও বলছি- ওই সময়ে কিছুই করার ছিল না আমার। আপনারাই ভাবুন, এমন পরিস্থিতে ওই রকম পজিশনের একজন এভাবে কথা বললে তার বিপরীতে কিইবা করার থাকে!’
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র গত সোমবার গভীর রাতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা আগামী ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ ওই তারিখটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এ আলোচনা সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত জুনে সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রথম শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সেনা সমাবেশ নিয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই আলোচনা হতে যাচ্ছে। আক্রমণের উদ্দেশ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের আশপাশে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে বলে অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
১০ জানুয়ারির আলোচনায় পক্ষগুলোর প্রতিনিধিত্ব কারা করবেন সে বিষয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো কথা বলা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের সামরিক জোট ন্যাটো রাশিয়ার সীমান্তের দেশগুলোকে দলে টানার মাধ্যমে বিপজ্জনকভাবে কাছে চলে আসছে বলে ক্রমেই বেশি করে অভিযোগ করছে রাশিয়া। চলতি মাসের শুরুর দিকে মস্কো পশ্চিমের দেশগুলোর কাছে দাবি তুলে ধরে বলেছে, ন্যাটোর অবশ্যই উচিত নয় নতুন সদস্য হিসেবে ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত করা। রাশিয়া চায় না, তার সীমান্তের কাছে সাবেক এই সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রে ন্যাটো ঘাঁটি স্থাপন করুক।
নাম প্রকাশ না করা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র সোমবার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য আগ্রহী। যখন আমরা কথা বলতে বসব, রাশিয়া তার উদ্বেগগুলো আলোচনার টেবিলে উত্থাপন করতে পারে। আমরা রাশিয়ার কার্যকলাপের ফিরিস্তি তুলে ধরার পাশাপাশি আমাদের উদ্বেগগুলোকে আলোচনার টেবিলে উত্থাপন করব।’
ওই মুখপাত্র আরো বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পরে মস্কো ও ন্যাটোর প্রতিনিধিরা ১২ জানুয়ারি আলোচনার জন্য মিলিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর ১৩ জানুয়ারি রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেবেন।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কৌশলগত নিরাপত্তা সংলাপ চালু করার মূল উদ্দেশ্য স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা হলেও এখন এর মধ্যে ইউক্রেন নিয়ে অচলাবস্থাও অন্তর্ভুক্ত হবে।
ন্যাটো-রাশিয়া কাউন্সিলের বৈঠক এবং মস্কো ও অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) স্থায়ী কাউন্সিলের মধ্যে আলোচনাটি হবে ইউক্রেনকে কেন্দ্র করেই। স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালে রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে একটি ফোরাম হিসেবে ওএসসিই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ গতকাল বলেছেন, রাশিয়ার নিরাপত্তার দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে আশা করে মস্কো। তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা টিএএসএসকে বলেছেন, ‘১০ জানুয়ারি হবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রধান দিন। আমরা আশা করি, আমাদের আলোচনাটি খসড়া চুক্তিতে পরিণত হবে। আমরা এই প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখতে পারি না। ইস্যুটি অত্যন্ত জরুরি।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, আলোচনায় মস্কো তার স্বার্থরক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকবে। দেশটির প্রতিবেশী ইউক্রেন মস্কোর প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে অবশেষে ন্যাটো জোটে যোগ দিতে চাইছে।
রাশিয়া এরই মধ্যে ক্রিমীয় উপদ্বীপের একটি অংশ ইউক্রেনের কাছ থেকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নিয়েছে। একই সঙ্গে তারা ইউক্রেনের মস্কোপন্থী বিদ্রোহীদের উসকে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করলেও পুতিন প্রতিবেশী দেশটিতে হামলার পরিকল্পনা অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁদের সেনাদের এই বিচরণ পশ্চিমা সেনাবাহিনীর দখলদারির বিরুদ্ধে রাশিয়াকে রক্ষা করার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় অংশীদাররা ইউক্রেন আক্রমণ করলে রাশিয়ার ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে ইউক্রেনের স্বার্থকে উপেক্ষা করা হবে না।
স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলেছে, আইসোলেশনের পর উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের আরো পাঁচ দিন অন্যদের আশপাশে থাকার সময় মাস্ক পরে থাকতে হবে। আগে আইসোলেশনের মেয়াদ ছিল ১০ দিন।
তবে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যাদের উপসর্গ নেই, তারা পাঁচ দিন আইসোলেশনে থেকে পরে মাস্ক ব্যবহার করলেই চলবে। তবে যারা করোনা টিকার বুস্টার ডোজ নিয়েছেন, তারা ভাইরাসের সংস্পর্শে এলেও কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না। অবশ্য তাদেরও ১০ দিন মাস্ক পরে থাকতে হবে।
সিডিসির পরিচালক রোসেল ওয়েলনস্কি বলেছেন, করোনার বিস্তার এবং টিকা ও বুস্টার ডোজের মাধ্যমে পাওয়া সুরক্ষা সম্পর্কে আমরা যা জেনেছি, তার সঙ্গে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের সংগতি সাধনের জন্যই এসব সুপারিশ করেছে সিডিসি।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ওই মুখপাত্র বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সাথে আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছে।’
এরপর মস্কো ও ন্যাটোর প্রতিনিধিরা আগামী ১২ জানুয়ারি বৈঠক করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, রাশিয়া ও ওএসসিই আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিষদ আগামী ১৩ জানুয়ারি আলোচনা করার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ পরিষদের অন্তর্ভূক্ত দেশ।
গত ২৫ অক্টোবরে সুদানের সামরিক অভ্যুত্থানের পর শনিবার দেশটিতে এক সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে।
সুদানের সেনট্রাল কমিটির চিকিৎসকরা বলেছেন, শনিবারের বিক্ষোভে সহিংসতায় ১৭৮ জন আহত হয়েছে। আটজন তাজা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আরেকটি বিবৃতিতে কমিটি বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনী খার্তুম হাসপাতাল এবং পোর্ট সুদান হাসপাতালে ঢুকেছে।
সুদানে প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদককে গতমাসে প্রধানমন্ত্রী পদে পুনর্বহাল করার পরও সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীরা বলছে, অবাধ একটি নির্বাচনে যাওয়ার সময়টিতে সেনাবাহিনী সরকারে যেন কোনও ভূমিকা পালন না করে।
এক সপ্তাহ আগে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের প্রবেশদ্বারে বসে বিক্ষোভ শুরু করেছিল। পরে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করা হয়। তবে শনিবার বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভকারীদেরকে ফিরিয়ে দেয় তারা।
সুদানের রাজধানীতে ইন্টারনেট পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। অধিবাসীরা ফোন কল করতে পারছে না রিসিভও করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সেনা এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স খার্তুমের সঙ্গে ওমডারমানের সংযোগ সেতু অভিমুখী সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে।
শনিবার কিছু কিছু পরিষেবা চালু হয়েছে। মানুষ কোনওভাবে কয়েকটি শহরে চলমান বিক্ষোভের ছবি স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে পেরেছে। ওমডারমানে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন রয়টার্সের এক সাংবাদিক।
খার্তুমে বিক্ষোভকারীরা সামরিক অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল বুরহানের নাম তুলে স্লোগান দিয়ে বলেছে, “রাস্তা বন্ধ করুন! সেতু বন্ধ করে দিন! বুরহান আমরা সোজা আপনার কাছেই আসব।”
জবানবন্দিতে ওই নারী জানান, তার ৮ মাস বয়সী শিশুর হার্টে ছিদ্র রয়েছে। তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। টাকা যোগাড় করতে তিনি কক্সবাজার এসেছেন। বিগত তিন মাস ধরে শহরের অন্তত ৭টি হোটেলে অবস্থান করেছেন বলেও জানান ওই নারী।
তার ভাষ্যে মতে, সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে কলাতলী এলাকায় সি ল্যান্ড নামে একটি গেস্ট হাউজে অভিযুক্ত আশিকুল ইসলামের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে। আশিক তার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এর আগে তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু আরো টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ওই নারীকে বুধবার রাত ৮টার দিকে কলাতলী লাইট হাউজ এলাকার একটি কটেজের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী আশিক।
জবানবন্দিতে ওই নারী জানান, তাকে বুধবার রাত ৮টার দিকে সৈকত পোস্ট অফিসের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে যায়। সেখানে আশিকের দুই বন্ধু তাকে ধর্ষণ করে। এরপর আশিক তাকে আবার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় কলাতলী এলাকার জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। তাকে নিয়ে ওই হোটেলের একটি কক্ষে উঠেন আশিক। সেখানে তাকে ধর্ষণের সুযোগ পায়নি সন্ত্রাসী আশিক। তার আগেই একটি ফোন কলের কারণে আশিক কক্ষ থেকে চলে যায়।
ওই নারী জানান, তিনি নিজেই হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়ে পর্যটন মোটেলের সামনের সড়কে আসেন। সেখানে স্বামীকে দেখতে পান র্যাবের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে। র্যাব তাকে নিয়ে হোটেল জিয়া গেস্ট ইনে আসে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন, বুধবার বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে তারা বেড়াতে যান। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে, কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজি অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়।
এ সময় আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিনজন।
এরপর তাকে নেয়া হয় কলাতলীতে জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করেন ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা। র্যাব এসে তাকে উদ্ধার করেন।
কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার মো: জিল্লুর রহমান বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও ভিকটিম এবং মামলার বাদীকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পেরেছি ওই নারী ও তার স্বামী গত তিন মাসে ধরে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেল কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে লাইট হাউজ এলাকার আরমান কটেজ, একই এলাকার দারুল আল এহসান, সি ল্যান্ডসহ কয়েকটি কটেজে থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ওই নারী ও তার স্বামীর দেয়া তথ্যে অনেক গড়মিল রয়েছে। যা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নারী ধর্ষণের এই মামলা তদন্ত করছে।
এদিকে আরমান কটেজের ম্যানেজার মো: হাসান বলেন, কিশোরগঞ্জ সদরের পরিচয় দিয়ে ওই নারী ও তার স্বামী দৈনিক এক হাজার টাকা ভাড়ায় আমাদের কটেজে অনেক দিন ছিলেন। বেশিরভাগ সময় বাচ্চা নিয়ে হোটেলে থাকতো ওই নারীর স্বামী। আর ওই নারী বাইরে যেতো। তবে কোথায় যেতো, কী করতো আমরা জানি না।
গত ২০ ডিসেম্বর ওই দম্পতি আরমান কটেজের বিপরীতে দারুল এহছান নামে একটি কটেজে উঠেন। পরের দিন তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে হোটেল মালিক আলি আকবর বলেন, ২০ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে হোটেলের সামনে আশিকের সাথে ওই নারীর স্বামীর কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি আমার নজরে আসলে আমি ওই নারীর স্বামীর কাছে জানতে চাই কী সমস্যা। কিন্তু তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। এই কারণে আমি তাদেরকে আমার হোটেল থেকে বের করে দেই। সেখানে থেকে তারা একটু দূরে অন্য একটি কটেজ সি ল্যান্ড হোটেলে উঠেন। সেখানেই ছিলেন ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
পুলিশ জানিয়েছে, রাতে ওই হোটেল থেকে তুলে নিয়ে যায় আশিক। এরপর সেখান থেকে তাকে সৈকত পোস্ট অফিসের পেছনে ছেনুয়ারা নামে এক নারীর ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী আশিক।
চায়ের দোকানের মালিক ছেনুয়ারা বেগম বলেন, আশিক এক নারীকে সাথে নিয়ে বুধবার রাত ৮টার দিকে আমার এখানে আসেন। এরপর আশিক ওই নারীকে দিয়ে তার স্বামীকে ফোন করান। সেসময় ওই নারী তার স্বামীকে মুঠোফোনে বলেন ‘তুমি নাকি আশিক ভাইয়ের সাথে বেয়াদবি করেছো। তুমি এখানে আসো, আমি আছি। আশিক ভাই তোমাকে কিছু করবে না।’ ওই নারীর স্বামী সেখানে আসেনি। এরপর আশিক কিছুক্ষণ এখানে অবস্থান করেন। পরে ওই নারীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে চলে যায়।
তিনি আরো বলেন, সেদিন আশিক আমার দোকানের একটু দূরে এক কিশোরকে ছুরির ভয় দেখিয়ে টাকা লুট করে।
এ বিষয়ে ভিকটিম নারী বলেন, আশিক সেখানে ধর্ষণ না করলেও তার দুই বন্ধু দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছে। পরে হোটেল মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইনে নিয়ে আসে আশিক।
জিয়া গেস্ট ইন এর পরিচালক রায়হান বলেন, আশিক ও ওই নারী স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে স্বাভাবিক পর্যটকের মতো হোটেলে আসে। এখানে ওই নারী নিজেকে সাথী নাম পরিচয় দিয়ে কার্ডে স্বাক্ষর করে আশিকের সাথে রুমে গেছেন। তারা একটি কক্ষে ৪০ মিনিট অবস্থান করে। তারপর আশিক বেরিয়ে যায়। এরপর ওই নারীও এখান থেকে চলে যায়। এর অনেক পরে ওই নারী ও তার স্বামীকে নিয়ে আমার হোটেলে আসেন। এখানকার ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিনকে র্যাব আটক করে নিয়ে যায়।
৯৯৯-এ কল করেনি ভিকটিম
ভিকটিম ৯৯৯-এ সাহায্য চেয়ে কল করার কথাটি মিথ্যাচার বলছেন কক্সবাজার জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মহিউদ্দিন বলেন, এই দম্পতি বুধবারের ঘটনার পর ৯৯৯-এ কোনো কল করেনি। তবে দুই মাস আগে ৯৯৯-এ কল করে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন। ওই সময়ে থানায় গিয়ে তারা শহরের দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী ফাহিম ও বাবুর নামে অভিযোগ দিয়েছিলেন। যার তদন্ত করেছিলেন একজন এসআই। তবে পরে ওই নারীর অসহযোগিতার কারণে তদন্ত কাজ বন্ধ করে দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
এদিকে ঘটনার ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে মূলহোতা আশিক ও তার সহযোগীরা। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আহনাফ আকিব ও আদনিন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জহিরুল ইসলামের ছেলে। সন্তানদের নিখোঁজের খবরে ফতুল্লা থেকে ছুটে যান মা সাইদা শিউলী ও মামা শামীম।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বান্দরবান থেকে ১০ পর্যটক নৌকাতে করে সাঙ্গু নদীপথে বেতছড়ায় বেড়াতে আসেন। এ সময় বেতছড়ার বাধরা ঝর্ণার পাশে নদীতে গোসল করতে নামলে আট জন স্রোতে ভেসে যান। স্থানীয়রা ছয় জনকে জীবিত উদ্ধার করে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়।
বান্দরবান রোয়াংছড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মান্নান জানান, নিখোঁজ দুই ভাই-বোনের মধ্যে সকালে একজনের লাশ পাওয়া গেছে। আরেকজনকে উদ্ধারে এখনেও চেষ্টা চলছে।
দাউ দাউ আগুনে বাঁচার আকুতি নিয়ে শত শত মানুষ লাফিয়ে পড়ে সুগন্ধা নদীর দিয়াকুল নামক স্থানে। অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপ দিলেও হারিয়ে যায় চিরতরে। কেউ হারিয়েছেন সন্তান, কেউ পিতা-মাতা।
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহতদের খোঁজে নদীর পাড় ও হাসপাতালে ভিড় করছেন স্বজনেরা। এ সময় প্রিয়জনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঝালকাঠি সদরের দিয়াকুল গ্রামের কাছে সুগন্ধা নদীতে লঞ্চটিতে আগুন লেগে যায়।
লঞ্চটি প্রায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পথে ঝালকাঠিতে ওই দুর্ঘটনার শিকার হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, শুক্র ও শনিবার দু’দিন বন্ধ থাকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী ছিল লঞ্চে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত লঞ্চটি থেকে ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ বাহিনী। এ ঘটনায় দগ্ধ প্রায় ৭৫ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ১৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। দুর্ঘটনার পর থেকে পৌর মিনিপার্কে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে পোড়া মরদেহ। কান্নায় ভারি হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ। কেউ বা শোকে পাথর। অনেকই আপনজনের খোঁজে ছুটছেন লাশের স্তুপ থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত। কেউ সুগন্ধা নদীর তীরে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনদের। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে এমনটাই দাবি স্বজনদের। এ দৃশ্য দেখে ঘটনাস্থলে ভীড় করা সাধারণ মানুষের চোখেও ঝরছে পানি।
গতকাল দুপুর ৩টায় পার্কে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া মরদেহগুলো নদীর পার্শ্বের অংশে সারিবদ্ধভাবে রাখা। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘিরে রেখেছে লাশ। রেড ক্রিসেন্টসহ বন্ধুসভার স্বেচ্ছাসেবী সদস্যারা স্বজন হারানো ব্যক্তিদের বিভিন্নভাবে তথ্য দিচ্ছেন ও নিচ্ছেন। মৃতদের অধিকাংশ পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়ায় অনেকেরই পরিচয় শনাক্ত হয়নি। স্বজনরা পোড়া দেহ দেখতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাগ খুলে দেখাচ্ছেন। এ সময় পোড়া গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। অনেকেই তা সহ্য করেই খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রিয় মানুষটিকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে, সাজিয়ে রাখা মরদেহের মধ্যে একটি ব্যাগে দুটি লাশ রাখা হয়েছে। সাজিয়ে রাখা ২৬ নম্বর মরদেহটি বয়স্ক কোনো নারী কিংবা পুরুষের। তার বুকের উপর একটি শিশুর মরদেহ দেখা গেছে। যার নম্বর ৩৬। সেখানে দেখা যায়, ২৬ নম্বর ব্যক্তি ৩৬ নম্বরধারী শিশুটিকে জড়িয়ে ধরেছেন। দুজনের শরীর পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। তাদেরকে শনাক্ত করার মতো কোনো উৎস খুঁজে পাচ্ছেনা দায়িত্বে থাকা লোকজন।
নিখোঁজদের ছবি নিয়ে বিলাপ করছেন কারও মা,বাবা, ভাই-বোন। তাদের একজন রুহুল আমিন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গতকাল ঢাকা থেকে বরগুনার পাথরঘাটার উদ্দেশ্যে ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে লঞ্চে উঠি। মধ্যরাতে চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে দেখি লঞ্চে আগুন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার স্ত্রী ও মেয়েকে দেখি লঞ্চের মধ্যে ছোটাছুটি করছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তারা ধোয়ায় হারিয়ে যায়। তাদেরকে আর দেখতে পাইনি। কোনো কিছু ভেবে না পেয়ে ছেলেকে নিয়ে পানিতে লাফ দেই। কিন্তু মেয়ে ও স্ত্রীকে আর পাইনি। এখন তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছি। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। খোঁজ নিয়েছি কোনো হাসপাতালে নাই। আল্লাহ জানে তারা কি বেঁচে আছে নাকি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আল্লাহ আর সহ্য করতে পারছি না। জানিনা ভাগ্যে কি আছে।
এদিকে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬ জনের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। তবে কারও মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি।
এদিকে সন্তানকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা গীতা রানী। বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়ালেও সন্তানকে খুঁজে না পেয়ে আহাজারি করছিলেন গীতা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমার দুই সন্তান স্বপ্নীল চন্দ্র হালদার ও প্রত্যয় (৬) কে নিয়ে বরগুনায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম। আগুন লাগার কিছু আগে স্বপ্নীল লঞ্চের টয়লেটে যায়। এরপরই আগুন লাগে। যাত্রীরা আত্মরক্ষায় বিভিন্নদিকে ছুটতে থাকে। আগুনের তাপ সহ্য করতে না পেরে প্রত্যয়কে নিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে মানুষের ধাক্কায় ছেলে আমার হাত থেকে ছুটে যায়। আর তাকে পাইনি। ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজেও তাকে পাইনি।
সূত্রে জানা যায়, এর আগে বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৩টায় ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলাধীন সরই এলাকা সংলগ্ন সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অগ্মিদগ্ধ হয়ে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ জন। এরমধ্যে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ১৬ জনকে।
শেবাচিম হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের ছুটি বাতিল
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনার কারণে ভর্তি হওয়া অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামক লঞ্চের ইঞ্জিন থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হয়েছেন বহু মানুষ। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪০ জন। অগ্নিদ্বগ্ধ প্রায় শতাধিক। ভোর ৫টা থে?কে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লঞ্চে আগুনে দগ্ধ রোগীরা আসতে শুরু করে। কিন্তু শেবাচিম হাসপাতালে বার্ন ইউনিট থাকলেও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিল না। সাধারণ চিকিৎসক ও নার্স দিয়েই চলছে চিকিৎসা। হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ৭০ জন দগ্ধ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া আশঙ্কাজনক ১৬ দগ্ধ রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসার সুবিধার্থে সব চিকিৎসক ও নার্সের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এদিকে, সন্ধ্যায় হাসপাতালে অগ্নিদ্বগ্ধ রোগীদের দেখতে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, স্বাস্থ্যসচিব মো. লোকমান হোসেন। তারা রোগীদের সুচিকিৎসার সব ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
দুই বছর পর তালা খুললো শেবাচিম বার্ন ইউনিটের: ওদিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ শতাধিক রোগী বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর প্রায় বাধ্য হয়েই বার্ন ইউনিটের তালা খোলা হলো। দুই বছর আগে এ বার্ন ইউনিটটি উদ্বোধন করা হলেও কোনো চিকিৎসক না থাকায় অব্যবহৃতই ছিল এটি। গতকাল শুক্রবার সকালে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর এ ইউনিটে ভর্তি হওয়া বিপুলসংখ্যক অগ্নিদগ্ধ রোগী নিয়ে বিপাকে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শেষ পর্যন্ত ঢাকা থেকে রোগীর চিকিৎসায় আনা হলো চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। গতকাল বিকালে ফ্লাইটযোগে তারা বরিশাল আসেন। দেশের ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে। সকালে ঘটনা শোনার পর ঢাকা থেকে সড়কপথে বার্ন ইউনিটের চারজন চিকিৎসককে বরিশাল পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সড়কপথে ফেরি পারাপারসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাদের ফ্লাইটযোগে বরিশাল পাঠানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মালদ্বীপে সফররত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও তার সঙ্গে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে পোড়া রোগীদের চিকিৎসায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে আলোচনা ও নির্দেশনা প্রদান করেন বলে তিনি জানান।
বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট দুই বছর আগে খোলা হলেও বর্তমানে কেন সেটি বন্ধ রয়েছে- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. সামন্ত লাল সেন মিডিয়াকে জানান, ইউনিটটি চালুর সময় একজন চিকিৎসক ছিলেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরে আত্মহত্যা করলে নতুন করে আর কাউকে সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়নি। বার্ন চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে একাধিকবার প্রচেষ্টা নিলেও চিকিৎসক পদায়নে সফল হওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টায় ঝালকাঠী সংলগ্ন সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪০ জন নিহত হন। শতাধিক যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের বেশিরভাগই বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সন্তানদের খুঁজে না পেয়ে পাগলপ্রায় দুই মা: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ দুই সন্তানকে খুঁজে না পেয়ে পাগলপ্রায় দুই মা।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে ঢাকা উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী স্বপ্নিল চন্দ্র হাওলাদার (১৬)। সে তার মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি বরগুনার বামনায় বেড়াতে যাচ্ছিল। নিখোঁজ অপর শিশুসন্তান হচ্ছে- আড়াই বছরের তাবাস্সুম। তার বাবা বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ছোট পাথরঘাটা গ্রামের একটি মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ নাছরুল্লাহ্ (২৭)।
ওই দুই সন্তানের মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের খোঁজে কখনো সুগন্ধার পাড়ে, আবার কখনো সদর হাসপাতালে ছুটছেন। তাদের কান্নায় হাসপাতাল ও সুগন্ধার পাড়ের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। প্রশাসন বলছে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ নাছরুল্লাহ বলেন, ‘লঞ্চের মধ্যে ধোঁয়ায় টিকতে না পেরে আমি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনতলার ছাদে উঠে যাই। সেখানে কুয়াশার মধ্যে নদীর কিছু দেখা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায়ই আমরা মেয়েসহ নদীতে ঝাঁপ দিই। পরে তীরে ওঠার আগেই মেয়েকে হারিয়ে ফেলি।’ একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে স্ত্রী সোনিয়াও বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘আমার মেয়েকে যেন প্রশাসন খুঁজে বের করে দেয়। আমার সোনার মানিককে আপনারা আইনা দেন।’
শিক্ষার্থী স্বপ্নিল চন্দ্র হাওলাদারের মা স্বপ্না হাওলাদার বলেন, ‘লঞ্চে আগুন লাগার আগমুহূর্তে আমার ছেলে স্বপ্নিল শৌচাগারে যায়। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে আমি আমার ছোট ছেলেকে নিয়ে কেবিন থেকে লঞ্চের সামনে যাই। পরে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করলেও আমার ছেলেকে খুঁজে পাইনি।’
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে শতাধিক যাত্রী দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। বৃদ্ধ, শিশুসহ অনেকে নিখোঁজ। লঞ্চে আট শতাধিক যাত্রী ছিল।
আহতদের মধ্যে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ১৫ জন এবং বাকিদের বরিশালে শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ৭০ এবং ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাতজনকে ভর্তি করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনার পর রোগী সামাল দিতে বরিশালের শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঢাকা থেকে ছয় বার্ন বিশেষজ্ঞকে পাঠানো হয়েছে বরিশালে।
মাঝনদীতে লঞ্চে এমন ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনা দেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম। চলন্ত লঞ্চে অঙ্গার হয়ে একসঙ্গে এত মৃত্যু আগে কখনও দেখেনি দেশ।
বরগুনা যাওয়ার পথে বরিশাল ঘাট থেকে ছাড়ার কিছু সময় পর লঞ্চে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে লঞ্চটির স্টিলের কাঠামো ছাড়া সব কিছু পুড়ে গেছে। একপর্যায়ে লঞ্চটি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর উত্তরপাড় দিয়াকুল এলাকায় এসে চরে উঠে যায়। এ সময় পুরো লঞ্চটিতে আগুন ধরে যায়। লঞ্চটির ইঞ্জিন কক্ষের কাছে রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্ধারে ঝালকাঠি ও বরিশালের পাঁচটি ইউনিট কাজ করেছে।
ওই লঞ্চের একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, লঞ্চটিতে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী ছিলেন। তাদের মতে, লঞ্চটিতে হাজারখানেক যাত্রী ছিলেন। আগুন লাগার পর লঞ্চ কর্মচারীরা যাত্রীদের রক্ষায় এগিয়ে আসেননি। কোনো যাত্রীকে লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয়নি। লঞ্চে ছিল না আগুন নেভানোর কোনো সরঞ্জাম।
এদিকে, লঞ্চ দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান, ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী গতকাল দুপুরে দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটি পরিদর্শন করেন।
ভোরে প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে উদ্ধার কাজ চালাতে বেগ পেতে হচ্ছিল। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকারী দল পর্যায়ক্রমে ৩৩টি লাশ উদ্ধার করে। এর মধ্যে লঞ্চের ভেতর থেকে ৩২টি, নদীতে ভাসমান অবস্থায় একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ঝালকাঠি ও বরিশাল হাসপাতালে আরও চারজনের মৃত্যু হয়। তবে অঙ্গার হওয়া মানুষের চেহারা পুরোটাই বিকৃত হয়ে গেছে। স্বজনরাও প্রিয়জনের মুখ চিনতে পারছেন না। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে, দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটি উদ্ধারে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ 'নির্ভীক' গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থলে এসেছে।
লঞ্চে থাকা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার কাকচিড়া গ্রামের যাত্রী রিমা আক্তার বলেন, 'আমি লঞ্চের নিচতলার ডেকে বসা ছিলাম। পাশেই ঘুমিয়ে ছিল ছেলে ইমরান (১৩)। লঞ্চটি বরিশাল ঘাট থেকে ছাড়ার কিছু পর ইঞ্জিন কক্ষের কাছে বিকট শব্দ হয়, পরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠতে দেখি। ওই সময় আমি ঘুমন্ত ছেলেকে জাগিয়ে লঞ্চের সামনের দিকে দৌড় দিই। ধোঁয়া আর কুয়াশায় কিছুই চোখে দেখছিলাম না। কোনো দিশা না পেয়ে ছেলেকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিই। প্রায় আধাঘণ্টা সাঁতার কেটে তীরে উঠি।'
লঞ্চের আরেক যাত্রী বরগুনার বেতাগীর মোহাম্মদ মহসিন বলেন, 'রাত ২টার পরে হঠাৎ নিচতলায় আগুন জ্বলতে দেখি। আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে আমি তিনতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে নদীতে পড়ে সাঁতরে তীরে উঠি।' ঝালকাঠি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল কাইউম বলেন, 'দোতলায় ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি লঞ্চে আগুন জ্বলছে। এ সময় নদীতে ঝাঁপ দিই।'
বরিশাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন দগ্ধ যাত্রী খুলনার বটিয়াঘাটার বাসিন্দা ইব্রাহিম (৪০) ছিলেন লঞ্চের চারতলার একটি কেবিনে। তিনি বলেন, অন্য যাত্রীদের চিৎকার আর আহাজারির শব্দে ঘুম ভেঙে দেখি চারদিকে আগুন। তাৎক্ষণিক নদীতে ঝাঁপ দিই। তবে আগুনে আমার দুই পা পুড়ে গেছে।
বিআইডব্লিউটিএর ঝালকাঠি স্টেশনের ট্রাফিক পরিদর্শক কবির হোসেন ও শামসুদ্দিন খান জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে লঞ্চটি ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় ৩১০ যাত্রী ছিলেন বলে সদরঘাটের রেজিস্টার খাতায় উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে ছাড়ার পর লঞ্চটি চাঁদপুরসহ একাধিক স্টেশন থেকে আরও যাত্রী ওঠানোর কারণে মোট কতজন যাত্রী ছিলেন, তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
গতকাল দুপুরে বরিশালের শেবাচিম হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক যাত্রীর পরিবারকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সংস্থা থেকে দেড় লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি পরিস্কারভাবে বলা যাবে, আসলে কী ঘটেছে। তিনি বলেন, যতটুকু জানি লঞ্চটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ আছে ২০২২ সাল পর্যন্ত। এখন নৌপথে বিলাসবহুল লঞ্চ যাত্রী পরিবহন করছে। ফলে প্রতিটি লঞ্চেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকা উচিত।
এ সময় তিনি দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি পরিবারকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে ঘোষণা দেন।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে দাফন ও সৎকারের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
ঝালকাঠি সদর থানার ওসি খলিলুর রহমান বলেন, 'আমরা ৩৭টি লাশ পেয়ে মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের পর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তদন্তে দায়ীদের আসামি করা হবে।'
অনেকেই নিখোঁজ: অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নি দুর্ঘটনায় কত যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন, তার সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারছেন না। দুর্ঘটনার পর গতকাল সকাল থেকে সুগন্ধা তীরের দিয়াকুল গ্রামে এবং ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে আসতে থাকেন ওই লঞ্চে নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারি হয় সুগন্ধা তীর এবং হাসপাতালের পরিবেশ।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, নিখোঁজ যাত্রীদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা আমরা এখনও বলতে পারছি না। ফায়ার সার্ভিস এবং কোস্টগার্ডের একাধিক দল সুগন্ধায় নিখোঁজদের খোঁজে টহল দিচ্ছে। বরগুনায় কন্ট্রোল রুম খুলে শহরে মাইকিং করা হয়েছে নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহের জন্য।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বরিশাল ও ঝালকাঠির একাধিক দল নদীতে নিখোঁজদের সন্ধান চালাচ্ছে।
তিনটি তদন্ত কমিটি: অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন থেকে গতকাল শুক্রবার এসব তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তোফায়েল আহমেদকে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সাইফুল ইসলামকে কমিটির প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। লঞ্চে আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মুখ বিকৃত, চেনা যাচ্ছে না লাশ: ঝালকাঠি জেলা হাসপাতাল মর্গে আছে ৩২ জনের লাশ। বেশিরভাগই পোড়া। শরীর ও মুখ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় লাশ শনাক্ত করতে পারছেন না স্বজনরা। পাঁচজনের লাশ স্বজনরা শনাক্ত করে নিয়ে গেছেন।
গতকাল বিকেলে হাসপাতাল মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করতে না পেরে ঘটনাস্থল ও বরিশাল হাসপাতালে গেছেন অনেক স্বজন। লাশ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার কথা জানিয়েছেন ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী।
খোঁজ রাখছেন প্রধানমন্ত্রী: লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় সফরে মালদ্বীপে অবস্থান করলেও সেখান থেকেই এই দুর্ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এবং নিহতদের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মালদ্বীপ সফররত প্রধানমন্ত্রী এক শোকবার্তায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। পাশাপাশি আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেছেন।
বরিশালে চিকিৎসক ও ওষুধ পাঠানো হয়েছে: দগ্ধদের চিকিৎসা যেন যথাযথভাবে হয়, সেজন্য বরিশালে চিকিৎসক ও ওষুধ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল সন্ধ্যায় দগ্ধদের দেখতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, ইঞ্জিনরুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জেনেছি। সেখানে গ্যাসের সিলিন্ডারও ছিল। অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৩৭ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এটি আরও বাড়তে পারে। অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের সবার পরিচয় পাওয়া গেছে।
আরও একজনের মৃত্যু: দগ্ধদের মধ্যে একজন গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে মারা গেছেন। তার নাম হাবীব খান (৪৫)। তিনি ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার বাবার নাম বেলায়েত আলী। বাড়ি বরগুনা সদরে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল সমকালকে বলেন, লঞ্চের আগুনের ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১৭ জনকে এই হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্য ১৫ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
মরদেহগুলো দাফনের জন্য সার্কিট হাউস সংলগ্ন পোটকাখালী গণকবরে নেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চটি বরগুনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া এলাকায় পৌঁছানোর পর লঞ্চের ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। তিন থেকে চারটি ঘাট পার হয়ে গেলেও লঞ্চটি নোঙর করেননি সারেং। লঞ্চটি ঝালকাঠি সদর উপজেলার চরকাঠি গ্রামের বিষখাঁলী নদীতে পৌঁছানোর পর ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায় এবং আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জোয়ারে লঞ্চটি ভেসে দিয়াকুল গ্রামে সুগন্ধা নদীর পাড়ে এসে নোঙর করে।