তানজিনা তানিন : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমিবায়ু দুয়ারে কড়া নেড়েছে। রূপসী তরু নীপবনে ফুল ফুটেছে। ছায়াবীথি তলে আষাঢ়ের সুর। বাংলার ষড়ঋতুর পরিচিতিতে বর্ষা শুরুর প্রতীকী ফুল কদম। এখন জ্যৈষ্ঠের প্রান্তসীমা। আষাঢ়ের প্রবেশ। কদমের সঙ্গে পিছু নিয়েছে বৃষ্টি। সেই আভাস দিয়েছে প্রকৃতি। মেঘ বাদলের আকাশ উঁকি দিয়েছে। এবার আষাঢ়ের উদ্বোধনী বৃষ্টি ঈদের দিন রাজধানী ঢাকা থেকেই শুরু। সে কি বৃষ্টি। মুষলধারে। এবারের বর্ষা বোধকরি রাজার ভাব নিয়েই আসছে। প্রস্তুতি শুরু করেছে কিছুটা আগেই, চৈত্রে কদম ফুটিয়ে, যা সাধারণত হয় না। গত ক’বছর বর্ষা তেমন তেজী ছিল না। টানা বৃষ্টি,ভারি বৃষ্টি ছিল। তবে গ্রাম, নদীতীর ও চরগ্রাম ভাসিয়ে দেয়নি। এবারের আষাঢ় যে কি বারতা নিয়ে আসে! জনকণ্ঠ
আবহাওয়া বিভাগের আভাস বর্ষার অনুকূলে। তারা বলছে, আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহেই (জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ) সারা দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমিবায়ু বড় ঝাপটা দিতে পারে। বঙ্গোপসাগরে মৌসুমের একাধিক নিম্নচাপ বেশ জোরদার হওয়ার আশঙ্কা। দেশজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাতের শঙ্কা উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে। সেই আভাস একটু করে কার্যকর করছে প্রকৃতি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝে মধ্যেই হচ্ছে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত। হঠাৎই বিদ্যুতের আগুনেরেখা আকাশকে ক্ষণিকের খ-িত করে তুলছে মেঘের গর্জনে।
পথচারী তাকিয়ে থাকে উর্ধপানে রূপসী তরুর দিকে। যেথায় শাখা-প্রশাখায় ফুটেছে কদম। পাতাগুলোও সজীব। বলাবলি করে, এই তো আষাঢ়। কদম তো ফুটবেই। উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়া উষ্ণ। ঝড়-বৃষ্টি আর বলে-কয়ে আসে না। হঠাৎ শুরু হয়। দিনাকয়েক আগে বগুড়ায় হঠাৎ মধ্যরাতের ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হলো। তারপর শুরু হলো বৃষ্টি। সঙ্গে বজ্রপাতের গগনবিদারী ভীতিকর শব্দ। এখন আকাশে কখনও তাপপ্রবাহ, কখনও কালো মেঘ। কখনও বৃষ্টি। নীপবনে ফুটছে বর্ষার ফুল কদম (কদমের আরকে নাম নীপ)। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন “এসো নীপ বনে ছায়াবীথি তলে, এসো করো স্নান নব ধারা জলে…”।
ঋতুবৈচিত্রে প্রকৃতির নিয়মে কদম ফোটে আষাঢ়ে। শীতে পাতা ঝরে। বসন্তে কচিপাতা (কিশলয়) গজায়। সেই কদম এখন ফুটেছে। বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন জানালেন, তার স্কুলের ভেতরের কদম গাছে মাঝে মধ্যেই কদম ফুটছে। বৃক্ষটি অনেক পুরনো। ছাল-বাকল পুরু ও ফাটল। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের এক অধ্যাপক জানান, প্রকৃতি, ভূগঠন, আবহাওয়াগত ও জলবায়ুর পরিবর্তন ও অন্য কোন কারণে বছরের যে কোন সময় কদম ফুটতে পারে।
কদমের বিজ্ঞান নাম এ্যানথোসিফালাস ইন্ডিকাস। ইংরেজী নাম লারান লিচহার্ডন্টপাইন। বাংলা নাম অনেক। যেমন নীপ, বৃত্তপুষ্প, মেঘামপ্রিয়, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, প্রকৃষ্য, ললনপ্রিয়, সিন্ধুপুষ্প। কদম বাংলাদেশের ফুল। তবে ভারত, চীন, মালয়ে কদম ফোটে। প্রাচীনকাল থেকেই উপমহাদেশে বর্ষার প্রতীকী ফুল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কদম সমান্তরাল বহু শাখাবিশিষ্ট বিশাল বৃক্ষ। পাতা বড়, ডিম্বাকৃতির। পরিণত পাতার চেয়ে কচিপাতা বড়। এর ফুল গোলাকৃতি ও এক পূর্ণ মঞ্জুরির। পুষ্পাধারে সরু বিকীর্ণ। হলুদ ও সাদার আধিক্য বেশি।
কদম ফুলের পুষ্পাধারে ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাসে হলুদের আধিক্য বেশি অংশ পেকে গেলে পাখিরা খায়। কদম বেশি প্রিয় বাদুরের। পাখি ও বাদুর ফল খেয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ছোট্ট বীজ মাটিতে ফেলে। সেখানই প্রকৃতির পরিচর্যায় বেড়ে ওঠে নীপবৃক্ষ। কদমের মিষ্টি ঘ্রাণ পেলেই লেজ নাড়িয়ে নীপবনের শাখা- প্রশাখায় কাঠবেড়ালি লাফিয়ে বেড়ায়। ফুলের মঞ্জরির স্বাদ কাঠবেড়ালির প্রিয়। যেমনটি তারা পেয়ারায় পায়। পাখিকুল আর প্রাণিকুলের এমন ভোজন দেখে কদমের গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা চলছে। বর্তমানে এই ফুল কৌতূহলী করে তুলেছে। প্রকৃতির সঙ্গে বৃক্ষ ও প্রাণিকুলের অসাধারণ যোগাযোগ এনে দিয়েছে এই কদম ফুল।
(amadershomoy)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন