ডেস্ক রিপোর্ট : কেউ খাল ভরাট করে তৈরি করেছেন দোকান, কেউ আবার নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন। ফলে প্রতি বর্ষায় ব্যাহত হচ্ছে পানি চলাচল। অল্প বৃষ্টিতেই জমে যাচ্ছে কোমরসমান পানি। দুর্ভোগে পড়ছে নগরবাসী। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়ে আটটি খালের দখলদারদের চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। চলতি মাসেই খালগুলো থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তারা। সমকাল
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী বলেন, ‘খাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সুফল মিলবে না। খালের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। খালের যে প্রশস্ততা থাকার কথা তা এখন নেই। এতে পানি নিস্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে খালের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসেই খালের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করা হবে।’
সিডিএ সূত্র অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরের পানি নিস্কাশনের প্রধান মাধ্যম চাক্তাই খালের অবৈধ দখলে আছে ১ দশমিক ৫ একর জায়গা, মহেশখালের ১১ দশমিক ৪৪ একর, ফিরিঙ্গীবাজার খালের শূন্য দশমিক ৬৩ একর, গয়নাছড়া খালের ৪ দশমিক ৮৮ একর, খন্দকিয়া খালের ৭ দশমিক ৭০ একর, মহেশখাল সংযোগ খালের ১ দশমিক ২১ একর, টেকপাড়া খালের শূন্য দশমিক ১৭ একর ও রাজাখালী-২ খালের ৩ দশমিক ৬০ একর জায়গা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তৈরি করা দখলদারদের তালিকা অনুযায়ী, চাক্তাই খালের ডানতীরে বাকলিয়া এলাকায় ৩৭২ বর্গফুট জায়গা দখল করে দোকান গড়ে তুলেছেন আমির হোসেন, আবদুল বারেক, জসিম উদ্দিন, হাজি আমিনুল হক, হাজি রেজোয়ান ইসলাম, আহম্মদ হোসেন ও বাহাদুর। দুই হাজার বর্গফুট জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর শহীদুল আলম, মো. ইউছুফ, মো. রফিক, শামসুল হক, বশির আহম্মদ, মো. ইউসুফ, আবদুছ ছালাম, নুরুল আমিন, জামাল আহাম্মদ, মাহবুব হোসেন, মো. নাছের ও মনির আহম্মদ।
আবাসন প্রতিষ্ঠান সিপিডিএল দখল করেছে ৮০ বর্গফুট। খাল ভরাট করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গড়ে তুলেছে চারতলা ভবন। বর্তমানে রাজস্ব সার্কেল-২ এর কার্যালয় রয়েছে এখানে। চাক্তাই খালের ১৩ হাজার ১২৫ বর্গফুট জায়গা ভরাট করে গড়ে উঠেছে বহদ্দারহাট বাজার। বাজারটির পরিচালনায়ও রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
চাক্তাই খালের এক হাজার ৫৩০ বর্গফুট জায়গার ওপর রয়েছে এনামুল হকের পাঁচতারা বাণিজ্যালয়, মোহাম্মদ আলমগীরের মাওলা স্টোর, জয়নাল আবেদীন আজাদের জেবি ট্রেডার্স, বাদল দেবের এএম ট্রেডিং, দেব প্রসাদ চৌধুরীর মেসার্স সুভাষ স্টোর, আবদুল করিমের মামুন ব্রাদার্স, স্বপন বিশ্বাসের হাজি ছালাম অ্যান্ড সন্স, মঈনুল আলমের টিনের দোকান, মো. শাহজাহানের এস কে ট্রেডিং। আবু বক্কর চৌধুরী ও নীলকৃষ্ণ দাশ মজুমদারও গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া কাঠ ও টিনের বেড়া দিয়ে খালের জায়গা দখলে রেখেছেন পাঁচ ব্যক্তি। মো. ইউছুফের দখলে ৮৫ বর্গফুট, ছালেহ আহম্মদ অ্যান্ড সন্স ৮৫ বর্গফুট, আবু মিয়া চৌধুরী ১০০ বর্গফুট, মো. মনির ১০০ বর্গফুট ও আবু ছুফিয়ান ১২০ ফুট জায়গা।
চাক্তাই খালের বামতীরে দখলে রয়েছে প্রায় এক হাজার ২৭৬ বর্গফুট জায়গা। এখানে অবৈধ দখলদাররা হলেন- মাজহার আলী ইসলাম, মো. ইয়াকুব খান, স্বপন চৌধুরী, সিরাজ মিয়া, আবুল কালাম, নুর মোহাম্মদ, আলমগীর হোসেন ও আনোয়ার হোসেন। এর মধ্যে ২৮৬ বর্গফুট জায়গা দখল করে একতলা ভবন গড়ে তুলেছেন নুর মোহাম্মদ, ৫৮০ বর্গফুট জায়গার ওপর আলমগীর হোসেনের একতলা ভবন ও ৫০ বর্গফুট জায়গার ওপর আনোয়ার হোসেনের টিনশেড ঘর।
এদিকে ৫৪ জনের দখলে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরের আরেকটি প্রধান খাল রাজাখালী খালের এক দশমিক ৩২ একর জায়গা। রাজাখালী খালের দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ের ২৫ হাজার ৮৮৫ বর্গফুট জায়গা দখল করে সেমিপাকা ঘর ও তেলের গোডাউন গড়ে তুলেছেন ফরিদ চেয়ারম্যান, ফরিদ সওদাগর, আক্তার সওদাগর, শফিউল আজম, বাবুল হাজি, মো. নাছের ও আবুল কালাম। রাজাখালী খালের উত্তর-পশ্চিম পাড়ে ১৮ হাজার ৭৩৫ বর্গফুট জায়গা দখল করে সেমিপাকা ঘর, গোডাউন, রাইস মিল, ভবন, খাদ্যের মিল ও মাদ্রাসা গড়ে তুলেছেন হাজি সিরাজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, হাজি আবদুল ছোবহান, হাজি নবী হোসেন সওদাগর, বাদশা মিয়া চৌধুরী, সালাউদ্দিন, টাইগার ফরিদ, জামাল সওদাগর, পিউরিটি ময়দার মিল, ওসমান সওদাগর, আশু বাবু, কালাম সওদাগর, মো. এমরান, শাহীন স্টোর, গফুর ভিউ, জাফর, সিরাজ, আব্দুল খালেক, আব্দুল মালেক ও নুরুল ইসলাম সওদাগর।
রাজাখালী খালের দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ে ১৩ হাজার ১৯২ বর্গফুট খালের জায়গা দখল করে সেমিপাকা ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন মো. কালাম, মো. জাহাঙ্গীর, মো. নেজাম, নুরুল ইসলাম, মো. জাহাঙ্গীর, জাগীর হোসেন, সেকান্দার, ভোলা মাঝি, জানে আলম, মরিয়ম বেগম, হালিমা বেগম, আবুল কাসেম, মো. আলী সাহেব, মো. ইসমাইল ও তার লোকজন, রবি আলী, হাফিজিয়া মাদ্রাসা, মসজিদ, কামাল মাঝি, মোজাহার কোম্পানি, হাজি আবুল কামাল ও জয়নাল আবেদীন আজাদ।
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। প্রকল্পটির পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল খনন করা হবে। তিন পর্যায়ে নগরের খালগুলো খনন ও সংস্কার করা হচ্ছে। প্রথম দফায় গুরুত্ব অনুযায়ী ১৩টি খালের খননকাজ চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০টি এবং শেষ পর্যায়ে বাকি খালগুলো থেকে মাটি উত্তোলন করা হবে। গত বছর খালগুলো থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ঘনফুট এবং চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ৪২ লাখ ঘনফুট মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। খালের দুই পাশে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ ও সড়কের কাজ শুরু হলেই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।’
(amadershomoy)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন