পাঁচ দিনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ভেনেজুয়েলায় বিরোধী দল–নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস গতকাল সোমবার দেশটিতে ‘রাষ্ট্রীয় সতর্কতা’ ঘোষণা করেছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে তেল রপ্তানিকারক দেশটির লাখো মানুষ খাবার ও পানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। গতকাল সোমবারও দেশটির বেশির ভাগ অঞ্চল বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার দেশটি ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে পড়ে। এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাবোটেজ বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দলের নেতা এবং দেশটির স্বঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুয়াইদোর প্রতি সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
গতকাল কংগ্রেসের অধিবেশনে রাষ্ট্রীয় সতর্কতা জারির আহ্বান জানিয়ে হুয়ান গুয়াইদো বলেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো কিছু স্বাভাবিক নেই। এই মর্মান্তিক ঘটনাকে সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা বরদাশত করা হবে না। তাই এ সময় রাষ্ট্রীয় সতর্কতা জারির আদেশ প্রয়োজন।
ভেনেজুয়েলার সংবিধান অনুসারে দেশে মহাদুর্যোগের সময় ‘জাতির নিরাপত্তা গুরুতরভাবে সমঝোতা’ করার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় সতর্কতা জারি করতে পারেন। তবে এ ঘোষণার বাস্তবিক প্রভাব কী, সে সম্পর্কে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়নি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে নিকোলা মাদুরোর বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে এ বছরের জানুয়ারি মাসে নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন গুয়াইদো। তাঁকে ভেনেজুয়েলার বৈধ নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশ। তবে রাশিয়া, চীনসহ কয়েকটি দেশের সমর্থনে মাদুরোর এখনো সশস্ত্র বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
তেলশিল্প সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের অভাবে তেল রপ্তানির প্রাথমিক বন্দর হোজের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে ভেনেজুয়েলার রাজস্ব আয়ের প্রথম উৎস বন্ধ হয়ে গেছে।
কংগ্রেস অধিবেশনে গুয়াইদো জাহাজে করে মাদুরোর মিত্রদেশ কিউবায় তেল রপ্তানি বন্ধের আহ্বান জানান। কিউবা প্রায় দুই দশক ধরে ভেনেজুয়েলার কাছ থেকে কম মূল্যে অপরিশোধিত তেল পেয়ে আসছে।
গুয়াইদো এই পদক্ষেপ (কিউবায় তেল রপ্তানি বন্ধ) বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, জাতীয় এই বিপর্যয়ে ভেনেজুয়েলার মানুষের এখন জরুরি ভিত্তিতে তেল প্রয়োজন। এই তেল বাইরে দেওয়া যাবে না।
গুয়াইদোর এই আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে রেফ্রিজারেটরে মজুত রাখা খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা যন্ত্রপাতি চালু রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মোবাইল ফোনের সিগন্যাল পেতে রাস্তায় নেমে আসছে লোকজন। গতকাল অনেকে সুয়ারেজ সংযোগ থেকেও কন্টেইনারে করে পানি সংগ্রহ করে।
রাজধানী কারাকাসের এক বাসিন্দা নেয়লে গঞ্জালেজ অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, তাঁর পাগল মতো লাগছে। সরকার মেনে নিচ্ছে না যে এটা তাদের দোষ। বছরের পর বছর ধরে তারা বিদ্যুৎ লাইনের কোনো ব্যবস্থাপনা করেনি।
ভেনেজুয়েলার বিদ্যুৎ গ্রিড বছরের পর বছর ধরে বিনিয়োগের অভাবে ধুঁকছে। আমদানির ওপর বিধিনিষেধ থাকায় যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় তা প্রভাব ফেলেছে। কারিগরিভাবে দক্ষ অনেকে দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন। গত কয়েক বছরে ৩০ লাখ লোক ভেনেজুয়েলা ছেড়ে চলে গেছে।
দেশটির তড়িৎ প্রকৌশলীদের পেশাদার এক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট উইস্টন কাবাস বলেন, জ্বালানির অভাবে দেশটির কয়েকটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ২০ শতাংশ সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছিল। সরকার নির্দিষ্ট পরিমাপে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল। এখন বিদ্যুৎ–সংযোগ চালু করার বিষয়টি বেশ ‘জটিল’ হবে। এতে পাঁচ-ছয় দিন লেগে যেতে পারে।
আলফ্রেদো কিনতেরো নামের ২৩ বছর বয়সী এক তরুণের কিডনি পাঁচ বছর ধরে অকার্যকর। বেঁচে থাকার জন্য তাঁকে সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। তাঁর মতো রোগীরা এখন সেখানে আতঙ্কে ভুগছেন। তিনি জানান, যখন বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন তাঁর ডায়ালাইসিস চলছিল। তবে ভাগ্যক্রমে গত রোববার কারাকাসের যে এলাকায় স্বল্প পরিসরে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়েছে, সেখানে তিনি ডায়ালাইসিসের সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাগ্য যাচাই করতে এসেছি, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে সেখানে বিদ্যুৎ আছে।’
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া বেসরকারি সংগঠন কোদভিদার তথ্য অনুসারে ডায়ালাইসিসের অভাবে গত শনি ও রোববার দুদিনে ১৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের অভাবে কোনো মৃত্যুর কথা অস্বীকার করেছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জেনারেটরের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস যন্ত্র চালু রাখা হয়েছে।
কোদভিদা আরও জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলায় ১০ হাজার ২০০ মানুষ কিডনি সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে তিন হাজার রোগী ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল।
হোস ম্যানুয়েল রদ্রিগেজ নামের এক ব্যক্তি তাঁর ৮৭ বছর বয়সী শ্বশুরকে নিয়ে হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ভেনেজুয়েলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় হরহামেশাই ঘটে থাকে।
ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ৫১ বছর বয়সী এক ব্যাংককর্মী হারলেন পেরেইরা। তিনি বলেন, যুদ্ধের চেয়েও খারাপ অবস্থা চলছে এখন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার দেশটি ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে পড়ে। এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাবোটেজ বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দলের নেতা এবং দেশটির স্বঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুয়াইদোর প্রতি সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
গতকাল কংগ্রেসের অধিবেশনে রাষ্ট্রীয় সতর্কতা জারির আহ্বান জানিয়ে হুয়ান গুয়াইদো বলেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো কিছু স্বাভাবিক নেই। এই মর্মান্তিক ঘটনাকে সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা বরদাশত করা হবে না। তাই এ সময় রাষ্ট্রীয় সতর্কতা জারির আদেশ প্রয়োজন।
বিদ্যুৎ–সংযোগ চালু করতে কাজ করছেন বিদ্যুৎকর্মীরা। ছবি: রয়টার্স |
ভেনেজুয়েলার সংবিধান অনুসারে দেশে মহাদুর্যোগের সময় ‘জাতির নিরাপত্তা গুরুতরভাবে সমঝোতা’ করার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় সতর্কতা জারি করতে পারেন। তবে এ ঘোষণার বাস্তবিক প্রভাব কী, সে সম্পর্কে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়নি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে নিকোলা মাদুরোর বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে এ বছরের জানুয়ারি মাসে নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন গুয়াইদো। তাঁকে ভেনেজুয়েলার বৈধ নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশ। তবে রাশিয়া, চীনসহ কয়েকটি দেশের সমর্থনে মাদুরোর এখনো সশস্ত্র বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
তেলশিল্প সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের অভাবে তেল রপ্তানির প্রাথমিক বন্দর হোজের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে ভেনেজুয়েলার রাজস্ব আয়ের প্রথম উৎস বন্ধ হয়ে গেছে।
কংগ্রেস অধিবেশনে গুয়াইদো জাহাজে করে মাদুরোর মিত্রদেশ কিউবায় তেল রপ্তানি বন্ধের আহ্বান জানান। কিউবা প্রায় দুই দশক ধরে ভেনেজুয়েলার কাছ থেকে কম মূল্যে অপরিশোধিত তেল পেয়ে আসছে।
গুয়াইদো এই পদক্ষেপ (কিউবায় তেল রপ্তানি বন্ধ) বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, জাতীয় এই বিপর্যয়ে ভেনেজুয়েলার মানুষের এখন জরুরি ভিত্তিতে তেল প্রয়োজন। এই তেল বাইরে দেওয়া যাবে না।
গুয়াইদোর এই আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে রেফ্রিজারেটরে মজুত রাখা খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা যন্ত্রপাতি চালু রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মোবাইল ফোনের সিগন্যাল পেতে রাস্তায় নেমে আসছে লোকজন। গতকাল অনেকে সুয়ারেজ সংযোগ থেকেও কন্টেইনারে করে পানি সংগ্রহ করে।
রাজধানী কারাকাসের এক বাসিন্দা নেয়লে গঞ্জালেজ অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, তাঁর পাগল মতো লাগছে। সরকার মেনে নিচ্ছে না যে এটা তাদের দোষ। বছরের পর বছর ধরে তারা বিদ্যুৎ লাইনের কোনো ব্যবস্থাপনা করেনি।
ভেনেজুয়েলার বিদ্যুৎ গ্রিড বছরের পর বছর ধরে বিনিয়োগের অভাবে ধুঁকছে। আমদানির ওপর বিধিনিষেধ থাকায় যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় তা প্রভাব ফেলেছে। কারিগরিভাবে দক্ষ অনেকে দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন। গত কয়েক বছরে ৩০ লাখ লোক ভেনেজুয়েলা ছেড়ে চলে গেছে।
দেশটির তড়িৎ প্রকৌশলীদের পেশাদার এক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট উইস্টন কাবাস বলেন, জ্বালানির অভাবে দেশটির কয়েকটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ২০ শতাংশ সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছিল। সরকার নির্দিষ্ট পরিমাপে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল। এখন বিদ্যুৎ–সংযোগ চালু করার বিষয়টি বেশ ‘জটিল’ হবে। এতে পাঁচ-ছয় দিন লেগে যেতে পারে।
আলফ্রেদো কিনতেরো নামের ২৩ বছর বয়সী এক তরুণের কিডনি পাঁচ বছর ধরে অকার্যকর। বেঁচে থাকার জন্য তাঁকে সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। তাঁর মতো রোগীরা এখন সেখানে আতঙ্কে ভুগছেন। তিনি জানান, যখন বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন তাঁর ডায়ালাইসিস চলছিল। তবে ভাগ্যক্রমে গত রোববার কারাকাসের যে এলাকায় স্বল্প পরিসরে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়েছে, সেখানে তিনি ডায়ালাইসিসের সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাগ্য যাচাই করতে এসেছি, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে সেখানে বিদ্যুৎ আছে।’
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া বেসরকারি সংগঠন কোদভিদার তথ্য অনুসারে ডায়ালাইসিসের অভাবে গত শনি ও রোববার দুদিনে ১৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের অভাবে কোনো মৃত্যুর কথা অস্বীকার করেছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জেনারেটরের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস যন্ত্র চালু রাখা হয়েছে।
কোদভিদা আরও জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলায় ১০ হাজার ২০০ মানুষ কিডনি সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে তিন হাজার রোগী ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল।
হোস ম্যানুয়েল রদ্রিগেজ নামের এক ব্যক্তি তাঁর ৮৭ বছর বয়সী শ্বশুরকে নিয়ে হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ভেনেজুয়েলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় হরহামেশাই ঘটে থাকে।
ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ৫১ বছর বয়সী এক ব্যাংককর্মী হারলেন পেরেইরা। তিনি বলেন, যুদ্ধের চেয়েও খারাপ অবস্থা চলছে এখন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন