ব্যাটিং-ফিল্ডিংয়ে নিদারুণ ব্যর্থতায় বাংলাদেশের বড় হার
Bangladesh's big rate of failure in batting-fielding
নিয়মিত উইকেট হারিয়ে ১২০ রানের আগেই থমকে গেল বাংলাদেশ। এই রান নিয়েও লড়াই সম্ভব ছিল, কিন্তু ফিল্ডিংয়ে ব্যর্থতায় তাও হয়নি। তিনটি ক্যাচ ছেড়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হেরেছে মাহমুদউল্লাহর দল।
৮ উইকেটের হার
ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশের জন্য সিরিজের শেষটা হলো ভীষণ হতাশার। একপেশে ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হেরেছে মাহমুদউল্লাহর দল। ছক্কায় দারবিশ রাসুলি ম্যাচ শেষ করার সময়ও বাকি ছিল ১৪ বল।
শূন্য রানে জীবন পাওয়া ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই অপরাজিত ছিলেন পাঁচ ছক্কা ও তিন চারে ৪৫ বলে ৫৯ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১১৫/৯ (মুনিম ৪, নাঈম ১৩, লিটন ১৩, সাকিব ৯, মুশফিক ৩০, মাহমুদউল্লাহ ২১, আফিফ ৭, মেহেদি ০. নাসুম ৫* , শরিফুল ০, মুস্তাফিজ ৬*; ফারুকি ৪-০-১৮-৩, নবি ৪-০-১৪-১, ওমরজাই ৪-০-২২-৩, রশিদ ৪-০-৩০-১, আশরাফ ২-০-১০-০, জানাত ২-০-১৭-০)
আফগানিস্তান: ১৭.৪ ওভারে ১২১/২ (জাজাই ৫৯*, গুরবাজ ৩, গনি ৪৭, রাসুলি ৯*; নাসুম ৩.৪-০-২৯-০, মেহেদি ৪-০-১৯-১, শরিফুল ৩-০-২৫-০, সাকিব ৩-০-৩২-০,মুস্তাফিজ ৩-০-১৩-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-২-১)
জুটি ভাঙলেন মাহমুদউল্লাহ
৫ ওভারে প্রয়োজন স্রেফ ১৩ রান। এমন সময়ে বোলিংয়ে এসে জুটি ভাঙলেন মাহমুদউল্লাহ। দুবার জীবন পাওয়া উসমান গনি ফিরলেন কট বিহাইন্ড হয়ে।
বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই উইকেট পান মাহমুদউল্লাহ। জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলার চেষ্টায় লিটন দাসকে ক্যাচ দেন উসমান। ভাঙে ৮২ বল স্থায়ী ৯৯ রানের জুটি।
৪৮ বলে পাঁচ চার ও এক ছক্কায় ৪৭ রান করেন উসমান।
১৬ ওভারে আফগানিস্তানের রান ২ উইকেটে ১০৫। ক্রিজে হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের সঙ্গী দারবিশ রাসুলি।
ছক্কায় জাজাইয়ের ফিফটি
ফিরতে পারতেন শূন্য রানে। নাসুম আহমেদের ব্যর্থতায় জীবন পেয়ে টানছেন দলকে। সাকিব আল হাসানকে ছক্কায় উড়িয়ে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ৩৭ বলে।
জাজাইয়ের ইনিংসে চারটি ছক্কা, সব কটিই এসেছে সাকিবের বলে।
এবার ক্যাচ ছাড়লেন আফিফ
সীমানায় সহজ ক্যাচ, বিস্ময়করভাবে ধরতে পারলেন না দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন আফিফ হোসেন। শেষ মুহূর্তে তার হাত থেকে ফস্কে গেল উসমান গনির ক্যাচে। সে সময় ৩৯ রানে ছিলেন তিনি। এর আগে শূন্য রানে জীবন পান আফগানিস্তানের ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই।
১২ ওভারে আফগানিস্তানের রান ১ উইকেটে ৭৯।
জাজাই-গনির জুটিতে পঞ্চাশ
শূন্য রানে জীবন পাওয়া হজরতউল্লাহ জাজাই কাজে লাগাচ্ছেন সুযোগ। একাদশে ফেরা উসমান গনি তাকে দিয়ে যাচ্ছেন সঙ্গ। ৪৫ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছে জুটির রান।
১০ ওভারে আফগানিস্তানের রান ১ উইকেটে ৬৮।
পাওয়ার প্লেতে এগিয়ে আফগানিস্তান
নাসুম আহমেদ প্রথম ওভারে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে হয়তো চিত্রটা ভিন্ন হতো। তবে তার ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন হজরতউল্লাহ জাজাই। পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের চেয়ে একটু এগিয়ে রেখেছেন দলকে।
৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ৩৩। আফগানিস্তানের ১ উইকেটে ৩৪।
আম্পায়ার্স কলে বাঁচলেন গনি
নাসুম আহমেদকে ছক্কার পর চার মারলেন উসমান গনি। তবে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ালেন বাঁহাতি স্পিনার। আশা জাগালেন উইকেটের। কিন্তু আম্পায়ার্স কলে বেঁচে গেলেন আফগান টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
ভেতরে ঢোকা বলের লাইন পুরোপুরি মিস করেন গনি। আম্পায়ার এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিপ্লেতে দেখা যায়, লেগ স্টাম্পের বাইরের দিকে লাগতো বল।
৫ ওভারে আফগানিস্তানের রান ১ উইকেটে ২৯।
রিভিউ নিয়ে বাঁচার পর আউট গুরবাজ
মেহেদি হাসানের প্রথম বলে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে বাঁচেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। এক বল পর কাভারে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহর হাতে। ব্যাট ছুঁড়ে ফেলে ভীষণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখাতে মাঠ ছাড়েন গুরবাজ।
তুলে মারতে চেয়েছিলেন ডানহাতি এই ওপেনার। কিন্তু টাইমিং করতে পারেননি, ব্যাটের কানায় লেগে কাভারে যাওয়া ক্যাচ জমান মাহমুদউল্লাহ।
৫ বলে ৩ রান করেন গুরবাজ।
২ ওভারে আফগানিস্তানের রান ২ উইকেটে ৮।
নাসুমের বিস্ময়কর মিস
শূন্য রানে হজরতউল্লাহ জাজাইকে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল কিন্তু বিস্ময়করভাবে বল মুঠোয় জমাতে পারেননি নাসুম। তার বলেই অনেক উঁচুতে তুলে দিয়েছিলেন জাজাই। অনেক সময় পেয়েছিলেন নাসুম। বলের নিচেও গিয়েছিলেন কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফস্কে যায় ক্যাচ।
সীমানায় কেবল দুই জন ফিল্ডার থাকার সুবিধা এই ম্যাচেও নিতে পারেনি বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে হারিয়েছে মুনিম শাহরিয়ার ও লিটন দাসের উইকেট।
৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৩৩।
সব বলই মারার পণ করে নামা মুনিম বিদায় নেন একটি চার মেরেই। ফজলহক ফারুকির বল পুল করে ছক্কায় ওড়ানো লিটন বিদায় নেন উড়িয়ে মেরেই।
নিজের মতো করেই খেলছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। পাওয়ার প্লেতে ১২ বল খেলে করেছেন ১১ রান।
টিকলেন না লিটনও
বোলিংয়ে এসেই উইকেট পেলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তাকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচ দিলেন ছন্দে থাকা লিটন দাস।
শর্ট বলে তুলে মেরেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। টাইমিং করতে পারেননি, সীমানায় ক্যাচ নেন শরাফউদ্দিন আশরাফ। ১০ বলে এক ছক্কায় ১৩ রান করেন লিটন।
সেই ওভারেই দুটি চার মারেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৩০। ক্রিজে নাঈমের সঙ্গী সাকিব আল হাসান।
শুরুতেই শেষ মুনিম
শুরু থেকে রানের জন্য ছটফট করছিলেন। ছিল না বল বুঝে খেলার চেষ্টা। মুনিম শাহরিয়ার তারই মাশুল দিলেন দ্রুত ফিরে।
ফজলহক ফারুকির করা প্রথম ওভারে কোনো বলেই টাইমিং করতে পারেননি। ওভারের শেষ বলে বাই থেকে ধরে রাখেন স্ট্রাইক। পরের ওভারে মোহাম্মদ নবিকে মারেন বাউন্ডারি। তবে শেষ এর পরেই। বেরিয়ে এসে আফগান অধিনায়ককে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ধরা পড়েন মিড অফে।
১০ বলে মুনিম করেন ৪।
২ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৮। ক্রিজে মোহাম্মদ নাঈম শেখের সঙ্গী লিটন দাস। নাঈম এখনও খেলতে পারেননি কোনো বল।
মার্শ-ওয়ার্নকে স্মরণ
২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের পথে অসীমের পথে যাত্রা করা অস্ট্রেলিয়ার দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার রডনি মার্শ ও শেন ওয়ার্নকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। খেলা শুরুর আগে পালন করেছে এক মিনিট নীরবতা।
দুই দল খেলছে কালো আর্ম ব্যান্ড পরে।
আফগানিস্তান দলে নেই মুজিব-কাইস
আগের ম্যাচে হেরে যাওয়া দল থেকে দুটি পরিবর্তন এনেছে আফগানিস্তান। চোটের জন্য ছিটকে গেছেন রহস্য স্পিনার মুজিব উর রহমান। নিষ্প্রভ বোলিংয়ে জায়গা হারিয়েছেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কাইস আহমেদ।
ব্যাটিংয়ে শক্তি বাড়িয়েছে আফগানিস্তান। দলে ফিরেছেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান উসমান গনি ও অলরাউন্ডার শরাফউদ্দিন আশরাফ। স্রেফ ৫ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান নিয়ে আগের ম্যাচ খেলে ৯৪ রানে থমকে গিয়েছিল আফগানদের ইনিংস।
আফগান একাদশ: হজরতউল্লাহ জাজাই, রহমানউল্লাহ গুরবাজ, দারবিশ রাসুলি, নাজিবউল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবি (অধিনায়ক),আজমতউল্লাহ ওমরজাই, করিম জানাত, রশিদ খান, উসমান গনি, শরাফউদ্দিন আশরাফ, ফজলহক ফারুকি।
আবারও সবুজাভ উইকেট
ওয়ানডে সিরিজে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের উইকেটে তিন ম্যাচেই ছিল ঘাস। একই চেহারা ছিল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের প্রথম ম্যাচের উইকেটেরও। দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচের উইকেটেও জীবন্ত ঘাসের ছোঁয়া আছে বেশ।
মুশফিকের ‘সেঞ্চুরি’
ছিলেন না পাকিস্তান সিরিজে। চোটের জন্য প্রথম ম্যাচের দলেও না থাকায় শততম টি-টোয়েন্টি খেলার জন্য বাড়ছিল অপেক্ষা। চোট কাটিয়ে দলে ফেরায় অবসান হচ্ছে অপেক্ষার। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে একশ টি-টোয়েন্টি খেলতে নামছেন মুশফিকুর রহিম।
বুধবার অনুশীলনে বুড়ো আঙুলে চোট পেয়েছিলেন মুশফিক। এক্স-রে করে অবশ্য চিড় ধরা পড়েনি মুশফিকের আঙুলে। তবে বিসিবির ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম জানান, জায়গাটা ফুলে আছে। শুক্রবার তিনিই জানিয়েছিলেন, দ্বিতীয় ম্যাচে মুশফিকের খেলতে কোনো বাধা নেই।
বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন এই একটিই। মুশফিক ফেরায় একাদশে জায়গা হারিয়েছেন ইয়াসির আলি চৌধুরি।
বাংলাদেশ একাদশ: মুনিম শাহরিয়ার, লিটন দাস, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, সাকিব আল হাসান, আফিফ হোসেন, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), শেখ মেহেদি হাসান, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
উইকেটে ঘাসের ছোঁয়া থাকলেও টানা দ্বিতীয়বার টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি বললেন, টস জিতলে ব্যাটিং করতেন তারাও।
মাহমুদউল্লাহ বললেন, উইকেটে বেশ ঘাস থাকলে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো মনে হচ্ছে তার কাছে।
টসের সময় নবি বললেন, উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো মনে হচ্ছে তার কাছেও। টস হেরে যাওয়ার পর বাংলাদেশকে থামাতে চান যত কম রানের সম্ভব।
সিরিজ জেতার হাতছানি
দুই দলের প্রথম সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা কিছুটা ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ তাদের সামনে। দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহর দল জিতলে হোয়াইটওয়াশ হবে আফগানিস্তান।
একই সঙ্গে জয় পরাজয়ের হিসেবে আফগানদের স্পর্শ করবে বাংলাদেশ। আগের সাত ম্যাচে বাংলাদেশের জয় তিনটি, আফগানিস্তানের চারটি।
শক্তি-সামর্থ্যে বেশ এগিয়ে থাকা আফগানদের প্রথম ম্যাচে অনায়াসেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে যে কোনো দলের জন্যই সমীহ জাগানিয়া দল আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতেছে ৬১ রানে।