সংক্ষিপ্ত স্কোর: আফগানিস্তান ১৭.৪ ওভারে ৯৪ (বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৫৫/৮)
রেকর্ড গড়া জয়
৬১ রানের জয় দিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। দেশের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটি। আগেরটি ছিল গত অগাস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬০ রানের।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে বিপদে পড়লেও লিটন দাসের ৬০ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ করতে পারে ১৫৫ রান। এরপর নাসুম আহমেদের অসাধারণ প্রথম স্পেলেই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। ১০ রানে ৪ উইকেট নেন নাসুম।
সিরিজের শেষ ম্যাচ শনিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫১/৮ (মুনিম ১৭, নাঈম ২, লিটন ৬০, সাকিব ৫, মাহমুদউল্লাহ ১০, আফিফ ২৫, ইয়াসির ৮, মেহেদি , নাসুম ৩*; ফারুকি ৪-০-২৭-২, মুজিব ৩-০-২৪-০, রশিদ ৪-০-১৫-১, নবি ২-০-১৯-০, কাইস ২-০-২১-১, ওমরজাই ৪-০-৩১-২, করিম ১-০-৫-০)।
আফগানিস্তান: ১৭.৪ ওভারে ৯৪ (জাজাই ৬, গুরবাজ ০, রাসুলি ২, নাজিবউল্লাহ ২৭, করিম ৬, নবি ১৬, ওমরজাই ২০, রশিদ ১, কাইস ৮, মুজিব ৪, ফারুকি ০*; নাসুম ৪-০-১০-৪, মেহেদি ৩-০-১৭-০, মুস্তাফিজ ৩-০-১৯-১, শরিফুল ৩৪.-০-২৯-৩, সাকিব ৪-০-১৮-২)।
শরিফুলের আরও দুটি
এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানের ইনিংস শেষ করে দিলেন শরিফুল ইসলাম। ওভারের প্রথম বলে চার মারেন কাইস আহমেদ, পরের বলেই তার ফিরতি ক্যাচ নেন শরিফুল। পরের
বলে মুজিব উর রহমান মারেন বাউন্ডারি। আবারও পরের বলেই তাকে ফিরিয়ে দেন শরিফুল। আফগানিস্তান অলআউট ৯৪ রানে।
২৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শেষ করলেন শরিফুল, এই সংস্করণে তার সেরা বোলিং।
মুস্তাফিজের প্রথম
আফগানদের হয়ে একটু লড়াইয়ের চেষ্টা করছিলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তাকে থামিয়ে ম্যাচে নিজের প্রথম উইকেটের দেখা পেলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
মুস্তাফিজের লেংথ বল উড়িয়ে মারেন ওমরজাই। কিন্তু স্লোয়ার বলের গতিতে বিভ্রান্ত হন তিনি। বল উঠে যায় স্রেফ ওপরে। বৃত্তের ভেতরে বলতি মুঠোয় জমান মাহমুদউল্লাহ।
আউট হওয়ার আগে অবশ্য অভিষেক ম্যাচে নিজের সামর্থ্যের ঝলক ওমরজাই। সাকিবকে বাউন্ডারির পর চার-ছক্কা মারেন শরিফুলকে। শেষ পর্যন্ত আউট হন ১৮ বলে ২০ রান করে।
১৬.৩ ওভারে আফগানিস্তান ৮ উইকেটে ৮৫।
শরিফুলের শিকার রশিদ
রশিদ খানের সঙ্গে একরকম মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চলছিল শরিফুল ইসলামের। বাংলাদেশের তরুণ বাঁহাতি পেসার দারুণ এক বাউন্সারে নাড়িয়ে দেন রশিদকে। একটু পর রশিদ চেষ্টা করেন শোধ তোলার। কিন্তু লাভ হয়নি। জিতে যান শরিফুলই।
শরিফুলের অফ স্টাম্পের বাইরের বেরিয়ে যাওয়া বল উড়িয়ে মারেন রশিদ। কাভার-পয়েন্ট সীমানার একটু ভেতরে ক্যাচ নেন ইয়াসির।
রশিদ খান আউট ৭ বলে ১ রান করে। আফগানিস্তান ১৪ ওভারে ৭ উইকেটে ৬৬।
বিদায় নিলেন নাজিবউল্লাহও
মোহাম্মদ নবি আউট হওয়ার পর আরেক থিতু ব্যাটসম্যান নাজিবউল্লাহ জাদরানরাও আউট হলেন সাকিবের বলে। দুই থিতু ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে আবারও বিপদে আফগানিস্তান।
বলটি অবশ্য খুব ভালো কিছু ছিল না। লেগ স্টাম্পের ওপর লেংথ বল, একটু ধীরগতির। নাজিবউল্লাহ চেষ্টা করেন গায়ের জোরে উড়িয়ে মারতে। শট খেলার মতোই বল। কিন্তু বেশি জোরে মারার চেষ্টায় হয়তো টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন নাজিবউল্লাহ। আকাশে ওঠা বল স্কয়ার লেগে মুঠোবন্দি করেন মুনিম শাহরিয়ার।
নাজিবউল্লাহ আউট ২৬ বলে ২৭ রানে। আফগানিস্তানের রান ২১.২ ওভারে ৬ উইকেটে ৬১।
জুটি থামালেন সাকিব
পানি পানের বিরতির পরই থেমে গেল আফগানদের প্রতিরোধের জুটি। সাকিব আল হাসানের বলে আউট হলেন মোহাম্মদ নবি।
সাকিবের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ইনসাইড আউট খেলার চেষ্টা করেন নবি। কিন্তু টাইমিং ঠিকমতো করতে পারেননি, বল রাখতে পারেননি ফাঁকা জায়গায়। বরং সহজ ক্যাচ যায় কাভার সীমানায় আফিফ হোসেনের হাতে।
১৯ বলে ১৬ করে আউট হলেন নবি। ১০.৫ ওভারে আফগানিস্তান ৫ উইকেটে ৫৭।
সাদা বলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪০০ উইকেট হয়ে গেল সাকিব আল হাসানের।
জুটির চেষ্টায় নাজিবউল্লাহ-নবি
টপ অর্ডার বিধ্বস্ত হওয়ার পর দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করছেন নাজিবউল্লাহ জাদরান ও আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি। দুজনে গড়ে তুলছেন জুটি।
১০ ওভারে আফগানদের রান ৪ উইকেটে ৫৩। এই জুটির রান ৩৩।
নাসুমের সেরা
টানা বোলিংয়ে চার ওভারের স্পেল শেষ করলেন নাসুম আহমেদ। দারুণ বোলিংয়ে স্পর্শ করলেন নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। তার বোলিং ফিগার ৪-০-১০-৪।
গত সেপ্টেম্বরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামেই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ১০ রানে ৪ উইকেট।
১৯ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার ৪ উইকেট আছে আরও একটি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গত অগাস্টে ১৯ রানে ৪ উইকেট।
পাওয়ার প্লেতে এগিয়ে বাংলাদেশ
পাওয়ার প্লেতে চেনা ঝড় তুলতে পারেনি আফগানিস্তান। বরং নাসুম আহমেদের সৌজন্যে বাংলাদেশের শুরুটা হলো দুর্দান্ত।
৬ ওভারে আফগানদের রান ৪ উইকেটে ২৯।
নাসুমের চার
তিন ওভারেই চার উইকেট হয়ে গেল নাসুম আহমেদের। গুঁড়িয়ে দিলেন তিনি আফগান টপ অর্ডার। তার চতুর্থ শিকার করিম জানাত।
শর্ট অব লেংথ বল হালকা টার্ন করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। করিম চেয়েছিলেন জায়গা বানিয়ে ড্রাইভ করতে। কিন্তু সেই জায়গা তাকে দেননি বোলার। টাইমিংও তাই হয়নি ঠিকমতো। শর্ট কাভারে সহজ ক্যাচ নেন শেখ মেহেদি হাসান।
৮ বলে ৬ রান করে আউট করিম। ৪.৩ ওভারে আফগানিস্তান ৪ উইকেটে ২০।
জীবন পেলেন নাজিবউল্লাহ
মুস্তাফিজুর রহমানের বলে একটি বাউন্ডারির পরই জীবন পেলেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। অফ স্টাম্পের বাইরে একটু লাফিয়ে ওঠা বল নাজিবউল্লাহর গ্লাভসে ছোবল দিয়ে উড়ে যায় পেছনে। কিপার লিটন ডাইভ দিয়ে দুই হাতে বল হাতে জমানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বল জমাতে পারেননি গ্লাভসে।
নাজিবউল্লাহ রক্ষা পেলেন ৫ রানে।
নাসুমের আরেকটি
আফগান টপ অর্ডারকে দাঁড়াতেই দিলেন না নাসুম আহমেদ। এবার তার শিকার অভিষিক্ত দারবিশ রাসুলি।
অফ স্টাম্পের ওপর নাসুমের ঝুলিয়ে দেওয়া বল খানিকটা আলসে ভঙ্গিতে সুইপ করার চেষ্টা করেন রাসুলি। ব্যাটে-বলে হয়নি, বল ছোবল দেয় স্টাস্পে। রাসুলির অভিষেক ইনিংস শেষ ৬ বলে ২ রান করে।
আফগানিস্তানের রান ৩ উইকেটে ৮।
জাজাইয়ের বিদায়
দুই দফায় বেঁচে গিয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না হজরতউল্লাহ জাজাই। নাসুম আহমেদ ফুল লেংথ বল হাঁটু গেঁড়ে মিড অফের ওপর দিয়ে স্লগ করার চেষ্টা করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু একটু আগেভাগেই ব্যাট চালানোয় টাইমিং হয়নি ঠিকমতো। মিড অফে সহজ ক্যাচ নেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ।
৭ বলে ৬ রান করে আউট জাজাই। আফগানিস্তানের রান ২ উইকেটে ৮। নতুন ব্যাটসম্যান নাজিবউল্লাহ জাদরান।
জাজাইয়ের জীবন
দুই ওভারে দ্বিতীয় উইকেট পেতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের সহজ ক্যাচ নিতে পারলেন না মুনিম শাহরিয়ার।
শেখ মেহেদি হাসানের বলে জায়গা বানিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন জাজাই। কিন্তু পারেননি টাইমিং করতে। কাভার-পয়েন্টে সহজ ক্যাচ নিতে ব্যর্থ মুনিম। বল তার হাতে লেগে পড়ে যায় মাটিতে। জাজাই বেঁচে গেলেন ৫ রানে।
শুরুতেই সাফল্য
ইনিংসের দ্বিতীয় বলে অল্পের জন্য নিজের বলে হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের ক্যাচ নিতে পারেননি নাসুম আহমেদ। তবে সাফল্য পেলেন তিনি চতুর্থ বলেই। ফিরিয়ে দিলেন জাজাইয়ের সঙ্গী রহমানউল্লাহ গুরবাজকে।
নাসুমকে জায়গা বানিয়ে খেলার জন্য একটু আগেভাগেই স্টাম্প ছাড়েন গুরবাজ। সেটি থেকেই একটু টেনে বল করেন নাসুম। গুরবাজ তাই জোর পাননি লফটেড কাট শটে। বৃত্তের ভেতরে সহজ ক্যাচ নেন ইয়াসির আলি চৌধুরি।
বিপজ্জনক গুরবাজ বিদায় নিলেন ২ বলে শূন্য করে। আফগানিস্তানের রান ১ উইকেটে ১।
নতুন ব্যাটসম্যান অভিষিক্ত দারবিশ রাসুলি।
দেড়শ ছাড়িয়ে বাংলাদেশ
শুরুর দিকে ধাক্কা সামলে শেষ পর্যন্ত কোনোরকমে দেড়শ ছাড়াতে পারল বাংলাদেশ। ২০ ওভারে রান ৮ উইকেট ১৫৫।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম দেড়শ ছাড়াতে পারল বাংলাদেশ।
ইনিংসের শেষের আগের বলে দ্বিতীয় রানের চেষ্টায় রান আউট হন শেখ মেহেদি হাসান (৭ বলে ৫)। শেষ বলে শরিফুল ইসলামের ব্যাটের কানায় লেগে আসে একটি বাউন্ডারি। দলে ফেরার ম্যাচে তিনে নেমে ৬০ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস।
আফগানদের সেরা বোলার দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা পেসার ফজলহক ফারুকি (২/২৭)। দুটি উইকেট নেন অভিষিক্ত আজমতউল্লাহ ওমরজাই। রশিদ খান যথারীতি ছিলেন সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫১/৮ (মুনিম ১৭, নাঈম ২, লিটন ৬০, সাকিব ৫, মাহমুদউল্লাহ ১০, আফিফ ২৫, ইয়াসির ৮, মেহেদি ৫, নাসুম ৩*; ফারুকি ৪-০-২৭-২, মুজিব ৩-০-২৪-০, রশিদ ৪-০-১৫-১, নবি ২-০-১৯-০, কাইস ২-০-২১-১, ওমরজাই ৪-০-৩১-২, করিম ১-০-৫-০)।
রান আউট ইয়াসির
দ্রুত রান তোলার তাড়ায় শেষ ওভারে রান আউট ইয়াসির আলি চৌধুরি। টি-টোয়েন্টিতে তার অভিষেক ইনিংস শেষ ৭ বলে ৮ রানে।
পারলেন না আফিফও
থিতু হয়েও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারলেন না আফিফ হোসেনও। লিটনের বিদায়ের পরপর তিনি আউট হয়ে গেলেন ২৪ বলে ২৫ রান করে।
আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ফুল লেংথ বল বৃত্তের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন আফিফ। কিন্তু শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারেননি ঠিকমতা। তাতে জোর হয়নি শটে। কাভারে সহজ ক্যাচ নেন মোহাম্মদ নবি।
নতুন ব্যাটসম্যান শেখ মেহেদি হাসান।
থামলেন লিটন
ফিফটির পর ইনিংসটিকে বেশি দূর টানতে পারলেন না লিটন। আউট হয়ে গেলেন দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা ফজলহক ফারুকির বলে।
ফারুকির স্লোয়াল শর্ট ডেলিভারিতে বলের নিচে গিয়ে গায়ের শক্তিতে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন লিটন। কিন্তু মন্থর গতির কারণে টাইমিং হয়নি। শর্ট ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
লিটন আউট হলেন ৪৪ বলে ৬০ রান করে। সবশেষ টি-টোয়েন্টি ফিফটিতে ২০২০ সালের মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছিলেন ৪৫ বলে ৬০।
১৭ ওভারে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ১২৬। নতুন ব্যাটসম্যান অভিষিক্ত ইয়াসির আলি চৌধুরি।
লিটনের ফিফটি
টি-টোয়েন্টিতে ফেরার ম্যাচ দুর্দান্ত ফিফটিতে রাঙালেন লিটন কুমার দাস। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যেও পঞ্চাশে পা রাখলেন ৩৪ বলে।
শুরুতে একটু সময় নেন লিটন। প্রথম ৭ বলে রান ছিল ৩। পরে মুজিবের এক ওভারে মারেন দুটি বাউন্ডারি। আরেকপাশে উইকেট হারানোয় আবারও সাবধান হতে হয় তাকে। এক পর্যায়ে
রান দাঁড়ায় ২১ বলে ২৩। এরপর স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন কাইসকে। আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে কাট করে ছক্কা মারেন পয়েন্টের ওপর দিয়ে।
৪৬ টি-টোয়েন্টিতে লিটনের পঞ্চম ফিফটি এটি। এই সংস্করণে ফিফটি পেলেন ১৬ ইনিংস পর। তিন নম্বরে ৬ ইনিংস ব্যাট করে ফিফটি এই প্রথম।
ব্যর্থ অধিনায়ক
সাম্প্রতিক ব্যর্থতার জাল ছিঁড়ে বের হতে পারলেন না মাহমুদউল্লাহ। একটি ছক্কা মারতে পারলেও বাংলাদেশ অধিনায়ক বিদায় নিলেন ৭ বলে ১০ করেই। টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পেলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
ফুল টস বল শেষ মুহূর্তে অনেকটা নিচু হয়ে যায়। মাহমুদউল্লাহ হয়তো চমকে যান খানিকটা। চেষ্টা করেন অন সাইডে খেলার। কিন্তু বলের লাইন মিস করে বসেন। আম্পায়ার আঙুল তুলতে সময় নেননি। মাহমুদউল্লাহ নেননি রিভিউ।
১১ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৮১। নতুন ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন।
মাঝপথে ভরসা লিটন
ওয়ানডে সিরিজের ফর্মকেই যেন টি-টোয়েন্টিতে বয়ে আনলেন লিটন দাস। তার ব্যাটেই যা একটু বাড়ছে দলের রান। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ৭১।
লিটন খেলছেন ২৬ বলে ৩৪ রান নিয়ে। উইকেটে যাওয়ার পরপরই কাইস আহমেদের বলে বিশাল এক ছক্কা মেরেছেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ অধিনায়ক খেলছেন ৫ বলে ৯ রান করে।
বাংলাদেশের পঞ্চাশ
টি-টোয়েন্টিতে বেশির ভাগ সময় পাওয়ার প্লেতে ফিফটি করতে না পারাকে মনে করা হয় ব্যর্থতা। বাংলাদেশের সেখানে পঞ্চাশ ছুঁতে লাগল ৮.১ ওভার।
এবার গেলেন সাকিব
চার নম্বরে নেমে দলরকে টানতে পারলেন না সাকিব আল হাসান। বিপিএলে টুর্নামেন্ট সেরা হওয়া অলরাউন্ডার বিদায় নিলেন ৬ বলে ৫ রান করে। লেগ স্পিনার কাইস আহমেদ প্রথম ওভারেই পেলেন সাফল্য।
কাইসের ফ্লাইটেড বলে একটু আগেই সুইপ করার পজিশনে গিয়ে ব্যাট চালান সাকিব। একটু বাড়তি লাফিয়ে বল লাগে সাকিবের ব্যাটের ওপরের দিকে। সহজ ক্যাচ উঠে যায় শর্ট ফাইন লেগে। ক্যাচ নিতে একটুও বেগ পেতে হয়নি ফিল্ডার মুজিব উর রহমানকে।
৭.৪ ওভারে বাংলাদেশ ৩ উইকটে ৪৭।
নতুন ব্যাটসম্যান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।
পাওয়ার প্লেতে অনুজ্জ্বল বাংলাদেশ
নতুন উদ্বোধনী জুটি, ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন এনেও পাওয়ার প্লেতে সেই পুরনো বাংলাদেশ। শুরুতে নেই ঝড়, বৃত্তের ভেতর ৯ ফিল্ডার পেয়েও নেই রানের জোয়ার।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ১২ রান তোলার পরও ৬ ওভারে রান ২ উইকেটে ৩৭।
অভিষেকে মুনিম ১৭
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বলেই দারুণ লফটেড শটে বাউন্ডারি। দারুণ আভাস দিয়ে শুরু করলেন মুনিম শাহরিয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না অভিষেক রাঙাতে। পারলেন না খুব ঝড়ো ব্যাটিং করতেও।
শুরুর ওই বাউন্ডারির পর মুজিব উর রহমানকে টানা দুটি বাউন্ডারি মারেন মুনিম। কিন্তু পারেননি রশিদ খানের সামনে। ফ্লাইটেড ডেলিভারি একটু আগেভাগেই সু্ইপ করার চেষ্টা
করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। বল শেষ মুহূর্তে নেমে যায় আচমকা। শাফল করে সুইপ করার চেষ্টায় ব্যাটে-বলে করতে পারেননি মুনিম। এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
মুনিম রিভিউ নেন। কিন্তু বল লাগত মিডল স্টাম্পে। হারাতে হয় রিভিউ। মুনিমের অভিষেক ইনিংস শেষ ১৮ বলে ১৭ রানে। বাংলাদেশের রান ৫ ওভারে ২ উইকেটে ২৫।
নতুন ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান।
ভরে উঠছে গ্যালারি
কোভিড মহামারী শুরুর পর এই প্রথম ক্রিকেট মাঠে পুরো গ্যালারিতে দর্শক রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এই ম্যাচ দিয়েই। সময়ের সঙ্গে গ্যালারিও ভরে উঠছে। চতুর্থ ওভার যখন চলছে, গ্যালারিতে তখন দর্শক আনুমানিক ১৫ হাজার।
শুরুতেই শেষ নাঈম
সমালোচনার জবাব দেওয়ার সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলেন না মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তৃতীয় ওভারেই বাঁহাতি ওপেনার বিদায় নিলেন ৫ বলে ২ রান করে। নতুন বলে আবারও বাংলাদেশকে ধাক্কা দিলেন ফজলহক ফারুকি।
বাঁহাতি ফারুকির ফুল লেংথ ইনসুইঙ্গিং ডেলিভারি ঠিকমতো খেলতে ব্যর্থ হন নাঈম। বল লাগে তার পেছনের পায়ে। জোরাল আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে সফল হন আফগানরা। বল লাগত মিডল স্টাম্পে।
২.১ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ১০। নতুন ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস।
ওপেনিংয়ে নাঈম-মুনিম
বিপিএলে যিনি মিনিস্টার ঢাকার হয়ে ওপেন করার সুযোগ পেয়েছিলেন স্রেফ একটি ম্যাচে, নেই মোহাম্মদ নাঈম শেখ জাতীয় দলের হয়ে করছেন ওপেন। তার সঙ্গী অভিষিক্ত মুনিম শাহরিয়ার। লিটন দাসকে দেখা যাবে ব্যাটিং অর্ডারের অন্য কোথাও।
দুই অভিষিক্ত আফগানিস্তান দলেও
২২ বছর বয়সী আগ্রাসী ব্যাটসম্যান দারবিশ রাসুলি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার প্রতিনিধিত্ব করবেন আফগানিস্তানের। তার সঙ্গে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি খেলবেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। ২১ বছর বয়সী পেস বোলিং অলরাউন্ডার এর মধ্যেই খেলেছেন চারটি ওয়ানডে।
আফগানরা একাদশ সাজিয়েছে চার স্পিনার নিয়ে। রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি, মুজিব উর রহমানের সঙ্গে একাদশে আছেন কাইস আহমেদও। অলরাউন্ডার নবিকে বিবেচনায় নিলেও দলে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান মোটে ৫ জন।
আফগান একাদশ: হজরতউল্লাহ জাজাই, রহমানউল্লাহ গুরবাজ, দারবিশ রাসুলি, নাজিবউল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবি (অধিনায়ক),আজমতউল্লাহ ওমরজাই, করিম জানাত, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, কাইস আহমেদ, ফজলহক ফারুকি।
মুনিম-ইয়াসিরের অভিষেক
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও বিপিএলে ব্যাটিংয়ের ঝড় তুলে এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে
পা রাখলেন মুনিম শাহরিয়ার। ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান পেলেন টি-টোয়েন্টি ক্যাপ। টেস্ট ও ওয়ানডের পর এবার টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হলো ইয়াসির আলি চৌধুরির।
বাংলাদেশের ৭৪ ও ৭৫তম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার এই দুজন।
প্রবল সমালোচনা যার ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে, সেই মোহাম্মদ নাঈম শেখও আছেন একাদশে। পেসার দুজন, মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম।
গত ২২ নভেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ টি-টোয়েন্টির একাদশ থেকে এই ম্যাচের একাদশে পরিবর্তন ৬টি।
বাংলাদেশ একাদশ: মুনিম শাহরিয়ার, লিটন দাস, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, সাকিব আল হাসান, আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলি চৌধুরি, মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), শেখ মেহেদি হাসান, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
উইকেটে ঘাসের ছোঁয়া থাকলেও টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি বললেন, টস জিতলে ব্যাটিং করতেন তারাও।
মাহমুদউল্লাহ বললেন, উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো মনে হচ্ছে তার কাছে। আগে ব্যাট করে বড় স্কোর গড়তে চান তারা।
টসের সময় নবি বললেন, উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো মনে হচ্ছে তার কাছেও।
সবুজাভ উইকেট
ওয়ানডে সিরিজে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের উইকেটে তিন ম্যাচেই ছিল ঘাস। একই চেহারা মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটেরও। উইকেটে জীবন্ত ঘাসের ছোঁয়া আছে বেশ।
নেই মুশফিক
শততম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলার অপেক্ষায় থাকা মুশফিকুর রহিম নেই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের ঘণ্টা দুয়েক আগে বিনিবি জানায়, আঙুলের চোটে ছিটকে গেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। বুধবার অনুশীলনে বুড়ো আঙুলে চোট পান তিনি। সতর্কতা হিসেবে রাতেই দলে যোগ করা হয় কিপার-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানকে।
এক্স-রে করে অবশ্য চিড় ধরা পড়েনি মুশফিকের আঙুলে। তবে বিসিবির ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম জানান, জায়গাটা ফুলে আছে। দ্বিতীয় ম্যাচে তার খেলা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে শুক্রবার অনুশীলনের পর।
বিশ্বকাপের পথে
টি-টেয়োন্টি বিশ্বকাপের এখনও সাত মাসের বেশি বাকি আছে। তবে ম্যাচ খুব বেশি নেই বাংলাদেশের। আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচী অনুযায়ী এই সিরিজের পর ম্যাচ আছে আর স্রেফ ছয়টি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়েতে ৩টি করে। সঙ্গে যোগ হতে পারে এশিয়া কাপের কয়েকটি ম্যাচ, এই তো।
প্রতিটি ম্যাচই তাই গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হতে। এই সিরিজ থেকেই দৃষ্টি থাকবে বিশ্বকাপের সীমানায়।
ওয়ানডের আক্ষেপ নিয়ে টি-টোয়েন্টির চ্যালেঞ্জে
ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারলেও লক্ষ্য পুরোটা পূরণ হয়নি বাংলাদেশের। শেষ ম্যাচ হেরে হাতছাড়া হয়েছে মহামূল্য ১০ পয়েন্ট। এবার চ্যালেঞ্জটা আরও বড়। কুড়ি ওভার ক্রিকেটের লড়াই, যেখানে আফগানিস্তান পরিষ্কার এগিয়ে।
টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ওপরে আফগানিস্তান। মুখোমুখি ৬ লড়াইয়ে বাংলাদেশের জয় দুটি, আফগানিস্তানের চারটি।
স্রেফ র্যাঙ্কিং-পরিসংখ্যানেই নয়, শক্তি-সামর্থ্যেও এগিয়ে আফগানিস্তান। ব্যাটিং স্কিল ও পেশির জোর, বোলিং বৈচিত্র ও দক্ষতা, সবদিক মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে বিশেষ যে কোনো দলের জন্যই সমীহ জাগানিয়া শক্তি আফগানরা।