খুলনা: বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পালন করা হয় হালখাতা উৎসব। এ উৎসবকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন খুলনার ব্যবসায়ীরা।
পহেলা বৈশাখের সূচণালগ্ন থেকে যুগের পর যুগ আবহমান বাংলার ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে ক্রেতাদের সঙ্গে উৎসব আনন্দে সামিল হন। পহেলা বৈশাখের দুই সপ্তাহ আগে থেকে মূলত ব্যবসায়ীরা ‘হালখাতা’ উৎসবের প্রস্তুতি শুরু করেন।
প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ও অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের যুগেও হালখাতা চালু আছে খুলনার অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। এবার প্রায় ছোটবড় ছয় শতাধিক প্রতিষ্ঠানে হালখাতা উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বৈশাখের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন রঙের কাগজের তৈরি ঝালর, কুলা, ঢোল ইত্যাদি জিনিসপত্রে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। কেউ কেউ আগেভাগে থেকেই আলোকসজ্জা করেছেন।
খুলনা বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতারা জানান, বাংলাসনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব নিকাশ আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়াকে মূলত হালখাতা বলা হয়। ব্যাবসায়ীরা তাদের দেনা-পাওনার হিসাব সমন্বয় করে এদিন হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মুসলমান মালিকরা মিলাদ দিয়ে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মালিকরা পূজার মধ্য দিয়ে হালখাতার সূচনা করেন।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি হিসাবের খাতা তৈরির দোকানে ভীষণ ব্যস্ততা। জাবেদা, খতিয়ান, টালি খাতা, বন্ডবুকসহ নানা ধরনের খাতা তৈরি হচ্ছে।
বকেয়া আদায়ের জন্যই ব্যবসায়ীরা পাওনাদারের কাছে এরইমধ্যে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন। পাওনা আদায় শেষে সংশ্লিষ্টদের মিষ্টি মুখ করানো হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে হালখাতার জৌলুসে ভাটা পড়লেও খুলনার জুয়েলারি দোকানগুলোতে এর তেমন প্রভাব পড়েনি। এবারও জেলার প্রায় ৫ শতাধিক দোকানে হালখাতার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চাল, চিনি, তেল, ডাল, লবণ, কাপড়, কাঁসা পিতলের দোকান, হার্ডওয়ার, কসমেটিকসহ বিভিন্ন ধরনের শতাধিক ব্যবসায়ী অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও আয়োজন করছেন।
খুলনা ধান চাল বণিক সমিতির সভাপতি মনির আহমেদ বলেন, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় নতুন বাংলা বছরের হালখাতার জৌলুসে ভাটা পড়েছে। ব্যবসায়ীর সংখ্যাও কমেছে। তারপরও খুলনার ২৫-৩০ জন ধান চাল ব্যবসায়ী এবারও হালখাতার আয়োজন করেছেন।
মহানগরীর বড় বাজারের মেসার্স মুরাদ ট্রেডিংয়ের পাইকারি বিক্রেতা জিয়াউল হক মিলন বাংলানিউজকে বলেন, হালখাতার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দাওয়াত করা হয়েছে গ্রাহকদের।
খুলনা জেলা জুয়েলারি মালিক সমিতির সভাপতি নিতাই চন্দ্র ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, বড়বাজারসহ নগরীতে ১২০-১৩০টি ও জেলায় ৫ শতাধিক ছোট-বড় জুয়েলারি দোকান হালখাতা উৎসবের আয়োজন করে থাকে। যারা এবারও প্রস্তুতি নিয়েছে।
তিনি জানান, হালখাতা মূলত খুলনার বড় বাজার কেন্দ্রিক রয়েছে। এখনও এখানকার দোকানগুলো হালখাতা উৎসবের আয়োজন করে।
নগরীর কেডি ঘোষ রোডের নিউ ঐশী জুয়েলার্সের মালিক বাসুদেব বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ তিনদিন, কেউ দুই বা এক দিনব্যাপী হালখাতা করে থাকেন। হালখাতা উপলক্ষে জুয়েলারি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ আলোকসজ্জার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তিনি জানান, এরইমধ্যে হালখাতার দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে অতিথিদের।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বাঙালি সংস্কৃতির বহু অনুষঙ্গে পরিবর্তন এলেও সে হাওয়া খুব একটা টলাতে পারেনি খুলনার বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের। বরাবরের মতো এবছরও তারা বাংলা বর্ষবরণ ও হালখাতার উৎসবের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছেন।
বাংলাদেশসময়: ১০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১,
(banglanews24)