নিউজিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু বাংলাদেশের | Bangladesh got off to a good start by beating New Zealand
প্রথম দিনের শেষটা যেখানে করেছিল বাংলাদেশ, দ্বিতীয় দিনের শুরুটা করেছে ঠিক সেখান থেকেই। বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা ধরে রেখে খুব বেশি বড় হতে দেয়নি নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ। পরে ব্যাটিংয়েও বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটা হয়েছে আশা জাগানিয়া।
শনিবার ম্যাচের প্রথম দিনে ৮৭.৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫৮ রান করেছিল নিউজিল্যান্ড। আজ (রোববার) তাদের বাকি ৫ উইকেট তুলে নিতে বাংলাদেশের লেগেছে ২০.৪ ওভার। আগেরদিনের স্কোরের সঙ্গে আরও ৭০ রান যোগ করে ৩২৮ রানে অলআউট হয়েছে কিউইরা।
জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ ৩১ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৭০ রান। বাঁহাতি ওপেনার সাদমান ইসলাম আউট হয়েছেন ২২ রান করে। তরুণ ডানহাতি ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় খেলছেন ৩২ রান নিয়ে। তিন নম্বরে নেমে নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত ১২ রানে।
আজ দিনের প্রথম সাফল্য পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। দিনের পঞ্চম ওভারের শেষ বলে রাচিন রবীন্দ্রকে সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন শরিফুল ইসলাম। আউট হওয়ার আগে রাচিন করতে পেরেছেন কেবল ৪ রান।
সপ্তম উইকেটে মাঝারি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন হেনরি নিকলস ও কাইল জেমিসন। এবাদত হোসেনের করা ৯৮তম ওভারে পরপর তিন বাউন্ডারি হাঁকান নিকলস। যার প্রথমটিতে ব্যক্তিগত পঞ্চাশে পৌঁছে যান এ বাঁহাতি ব্যাটার।
তবে বিপদ বেশি বাড়তে দেননি বাংলাদেশের অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ইনিংসের ১০০তম ওভারে আক্রমণে এসে তৃতীয় বলেই সুযোগ তৈরি করেন তিনি। কিন্তু শর্ট লেগে দাঁড়ানো মাহমুদুল জয় সেটি হাতে রাখতে পারেননি, বেঁচে যান জেমিসন।
অবশ্য জীবন পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি জেমিসন। মিরাজের পরের ওভারেই লং অন বাউন্ডারিতে দাঁড়ানো সাদমানের হাতে ধরা পড়ে যান তিনি। তাসকিন আহমেদের করা পরের ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পাল্টা জবাব দেওয়ার আভাস দেন টিকে থাকা একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটার নিকলস।
একপ্রান্তে নিকলস টিকে থাকলেও অন্যপ্রান্তে টপাটপ আরও দুই ব্যাটারকে সাজঘরে পাঠান মিরাজ। ইনিংসের ১০৬তম ওভারের চতুর্থ বলে শর্ট মিডউইকেটে মুমিনুলের হাতে ধরা পড়েন টিম সাউদি, পরের বলে কট বিহাইন্ড হন নেইল ওয়াগনার। দারুণ রিভিউ নিয়ে ওয়াগনারের বিদায় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
উইকেটের কলামে মিরাজের নামের পাশে সংখ্যা আরও বাড়তে পারতো। কিন্তু এবার তার বলে লংঅন থেকে ছুটে যায় ক্যাচ, হয়ে যায় বাউন্ডারি, বেঁচে যান ট্রেন্ট বোল্ট। তবে পরের ওভারের প্রথম বলেই ৭৫ রান করা নিকলসকে সাজঘরে পাঠিয়ে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস গুটিয়ে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক।
বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নেন শরিফুল ও মিরাজ, মুমিনুলের শিকার দুই উইকেট। ফিল্ডিংয়ে সাদমান নেন ৪টি ক্যাচ। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ফিল্ডার হিসেবে টেস্টের এক ইনিংসে ৪ ক্যাচ নিলেন তিনি। এর আগে সৌম্য সরকার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৭ সালে নিয়েছিলেন ৪ ক্যাচ।
নিউজিল্যান্ডকে অলআউট করার পর প্রথম সেশনে তিন ওভার ব্যাট করে বিনা উইকেটে ৫ রান করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাদমান ও মাহমুদুল জয়। দ্বিতীয় সেশনেও দেখেশুনে খেলতে থাকেন তারা দুজন। বিশেষ করে টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের বিপক্ষে বেশ ভালো জবাব দিয়েছেন তারা।
গড়বড় হয়ে যায় বাঁহাতি নেইল ওয়াগনার আক্রমণে আসতেই। নিজের প্রথম ওভার মেইডেন করেন ওয়াগনার। পরে দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই সাদমানকে ফিরতি ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। অবশ্য আগেই ব্যাটের ফেস বন্ধ করে ফেলায় সামনের কানায় লাগার বড় দায় সাদমানের নিজেরই।
আউট হওয়ার আগে সাদমানের ব্যাট থেকে ৫৫ বলে ২২ রানের ইনিংস। তার বিদায়ে ৪৩ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। অন্যপ্রান্তে তরুণ মাহমুদুল জয় শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। যখনই রানের সুযোগ পেয়েছেন তা দুই হাতে লুফে নিয়েছেন।
তবে খানিক ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছেন মাহমুদুল জয়। ব্যক্তিগত ২০ ও দলীয় ৪৪ রানের মাথায় তার বিপক্ষে লেগ বিফোরের জোরালো আবেদন করেন ওয়াগনার। আম্পায়ার সাড়া দেননি। ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগেছে ভেবে নিউজিল্যান্ডও রিভিউ নেয়নি।
কিন্তু রিপ্লে'তে দেখা যায়, বল ব্যাটে লাগেনি এবং সেটি আঘাত হানতো মিডল-লেগ স্ট্যাম্পে। অর্থাৎ রিভিউ নিলে সাজঘরে ফিরতে হতো মাহমুদুল জয়কে। ভাগ্যের ছোঁয়ায় বেঁচে যাওয়ার পর আর ভুল করেননি তিনি। নাজমুল শান্তকে নিয়ে দেখেশুনে পার করে দেন দ্বিতীয় সেশনের বাকি সময়।
প্রথম সেশনে বিনা উইকেটে ৫ রান করা বাংলাদেশ দল দ্বিতীয় সেশনে ২৮ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে করেছে ৬৫ রান। নিউজিল্যান্ডের চেয়ে এখনও ২৫৮ রানে পিছিয়ে রয়েছে তারা।